Select Page

নিজ-অবয়ব, সংঘাত ও সংশ্লেষ: ডিপজল প্রপঞ্চ

নিজ-অবয়ব, সংঘাত ও সংশ্লেষ: ডিপজল প্রপঞ্চ

“গড়গড়ার মা লো, তোর গড়গড়াটা কই?
হালের গরু বাঘে খেয়েছে, পিঁপড়ে টানে মই।”

-প্রচলিত ছড়া

আমি ইদানীং হিরোশিমার উপকণ্ঠে থাকছি আর ডিপজল বহুদিন ঢাকার প্রান্ত গাবতলী ও ফুলতলীতে থাকছেন। তিনি আরও নানান জায়গায়, দেশে-বিদেশে, থেকে থাকতে পারেন, যেমনটা পারি আমিও, কিন্তু এগুলোই আমাদের স্বীয় স্বীয় মুখ্য নিবাসস্থল এই মুহূর্তে। আমাদের সাক্ষাৎ নাই। এমনকি আমি ঢাকায় গাবতলীতে বা ফুলতলীতে থাকলেও, সিনেমা হলের পর্দায় কিংবা দেয়ালের পোস্টারে তাঁকে দেখা ছাড়া, সেই সম্ভাবনা ছিল না। তথাপি একটি অভিন্ন জিজ্ঞাসার আমরা দুই বিষয়বস্তু।

আমাদের দুজনেরই নিজ নিজ অবয়ব হাজির করা নিয়ে সেই জিজ্ঞাসা-আত্মপ্রতিকৃতি পরিবেশন। দুজনেই আমরা সজাগভাবে নিজ-প্রতিকৃতি পরিবেশনের ফর্মুলা ঠিক করে থাকি। এই তথ্যটা এক্ষণে একটা হঠাৎ-আবিষ্কার নয়। কিন্তু বেশ কিছুকাল বাংলাভাষী চলচ্চিত্রে ও ঢাকার রাজনীতিতে ডিপজলের ক্রমাগত সাফল্যের (এবং আমি সমেত অনেকের ব্যর্থতার) পর, তাঁর সংসদ সদস্য হবার প্রচেষ্টার প্রাক্কালে তাঁর পরিবেশিত অবয়ব নিয়ে কিছু ভাবনাচিন্তা করার উদ্দেশ্যেই এই রচনা। আমার অবয়ব এখানে একটা উপলক্ষ হয়ে আসবে।

ডিপজলের ২০০৬ সালের সেই পোস্টার যোগাড় করা সম্ভব হয়নি। এই কোলাজে ব্যবহৃত ছবি অভিনেতার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ট্যাগ করেছেন এক ভক্ত। আর ছবিটি বছর দু-এক আগে এক রাজনৈতিক পোস্টারে ব্যবহৃত হয় –বিএমডিবি

ঢাকাই চলচ্চিত্র এবং ঢাকাই রাজনীতি উভয় নিয়েই বাংলাদেশি শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর, বিশেষত ঢাকাকেন্দ্রিক, বাহ্য নাক-সিঁটকানিটা এতদিনে উল্লেখকৃত প্রপঞ্চ। যেটা লক্ষ্য করবার তা হচ্ছে এই উভয় প্রকার তাচ্ছিল্যেরই গুণগত মিল আছে দারুণ। ঢাকাই রাজনীতি নিয়ে তাচ্ছিল্যকার মধ্যবিত্তের বড় অংশই, আপদকালে, প্রাণভরে শীর্ষস্থানীয় ক্ষমতাধর লোকদের খুঁজতে প্রাণপাত করেন। এই আপদকালের তালিকাটা সূক্ষ্ম বিধায় দীর্ঘ। হাউজলোনের গ্রাহক হওয়া থেকে শুরু করে টেলিফোনের লাইন না-কাটা; বিমানবন্দরে লম্বা লাইনে না-দাঁড়াতে চাওয়া থেকে শুরু করে সঙ্গে আনা সামগ্রীর ট্যাক্স-কাটানি-এগুলো হচ্ছে ক্ষমতাধরদের কাজে লাগানোর মামুলি খাত। তালিকাটা সম্ভাব্য পূর্ণ আকারে পেশ করা চিত্তাকর্ষক এক অনুশীলন হতে পারে। কিন্তু এখানে নয়। পক্ষান্তরে, ঢাকাই চলচ্চিত্র নিয়ে তাচ্ছিল্যের বাহ্যপ্রকাশ ও সে সংক্রান্ত ভণ্ডামি নিয়ে এতটা সহজে চিত্রহাজির সম্ভব নয়। এখানে মূল প্রক্রিয়াটা বড় পর্দা থেকে বিনোদন-আইকনগুলোকে ছোটপর্দায় টেনে আনার, এবং ছোটপর্দার নির্মাতাদের বড়পর্দার বড়মানুষ রূপে দেখতে চাইবার স্বপ্ন। কিন্তু দুটো ক্ষেত্রেই-চলচ্চিত্র কিংবা [জাতীয়] রাজনীতি-মধ্যবিত্ত গড়পরতা মনোভঙ্গির একটা সারাৎসার অবলীলায় চিহ্নিত করা সম্ভব। প্রাইভেট কনসাম্পশনের উপাদান হিসেবে এগুলো পেতে তাঁরা ব্যগ্র। অন্য ভাষায় বললে, নিজ অস্তিত্ব সমুন্নত রাখার তাগিদে এবং নিজ ভোগাকাঙ্ক্ষার অংশ হিসেবে এগুলো তাঁরা কনস্যুম করতে আকুল আছেন। একটা ব্যবস্থাতন্ত্র হিসেবে এটার প্রতি তাঁদের বাহ্য মনোভঙ্গি নেতিবাচক। কিন্তু সেটাকেও খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, এটা তাচ্ছিল্য না মোটেই, বরং একটা ব্যবস্থাতন্ত্র হিসেবে এই ক্ষেত্রগুলোতে তাঁরা ক্রিটিক্যালি/সপ্রশ্ন সংমিশ্রিত হতে নারাজ। এর আশু মানে দাঁড়ায়, এই ব্যবস্থাতন্ত্রগুলো নিয়ে তাঁদের মনোভঙ্গি বড়জোর এগুলোর অভ্যন্তরীণ জটিল এবং বহুমুখীন উহ্য উপাদানগুলোকে আড়াল করতে সহায়তা করে। তা সেটা তাঁরা ইচ্ছা করেই করুন আর নেহায়েৎ অনিচ্ছাতেই হয়ে থাকুক। শিক্ষিত-মধ্যবিত্ত নিজেদের ভোগপ্রক্রিয়াকে এত গুরুত্ব দেয় বলেই আরও জরুরি হয়ে ওঠে এই শ্রেণীর কঠোর সীমানার বাইরের মানুষজনের জন্য কনসাম্পশনপ্রণালীকে বুঝতে চেষ্টা করা। দৃশ্যগত সামগ্রীর ক্ষেত্রে ডিপজল এই পরিমণ্ডলে কেন্দ্রীয় একটা জায়গায় রয়েছেন।           

এবারে আমার অন্তর্বর্তীকালীন ঢাকা সফরের সময়টুকু বাংলাদেশের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোলের সময়। ফলে আগ্রহী এমপি পদপ্রার্থীদের এখন ময়দানে ও দল-অভ্যন্তরে নড়াচড়ার সময়। এর মধ্যে শেষোক্তটা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। বিশেষত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া খোদ নির্বাচনে জেতার কুস্তির থেকে একটুও কম ক্লান্তির নয়। ফলে, অনেকেই মনোনয়ন পাবার অনিশ্চয়তা ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ভোটারদেরকে বঞ্চিত রাখতে চান না। নিজেদের অবয়ব ও ব্যক্তিত্ব  থেকে যাতে ভোটাররা দূরত্ববোধ না করেন সেজন্য আগেভাগেই ময়দানে নেমে পড়েন, তা নির্বাচনে ভোটারদের আদৌ কোনো নির্ধারণী ক্ষমতা থাকুক আর নাই থাকুক। নৈর্বাচনী পদ্ধতিতে প্রতিকৃতি/ইমেজ এবং সেটার প্রতি নির্মিত আমজনতার ‘সমর্থনলাভ’-এর এই খেলাটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মিরপুর বা ঢাকা-১১ আসনে এবারে ক্ষমতাসীন বিএনপি’র অন্তত চারজন মনোনয়নপ্রার্থী আছেন। এঁদেরকে জানা যায় এই অঞ্চলের দেয়ালের দিকে মনোযোগী-চোখসমেত হাঁটাহাঁটি করলে। চারজন সম্ভাব্য বিএনপি প্রার্থী ইতোমধ্যেই দেয়ালে-পোস্টারে আবির্ভূত হবার ব্যবস্থা করেছেন। এঁদের একজন সাবেক সাংসদ ও ঢাকাই পাবলিক জবানে ব্যাপক আলোচিত প্রতিকৃতি এস এ খালেক। আরেকজন হলেন আহসানউল্লাহ হাসান যিনি, সম্ভবত, ইতোমধ্যেই কমিশনার হিসেবে ছিলেন আশপাশে। অন্যজন আরেক সাবেক সাংসদ হারুন মোল্লার পুত্র এখলাস মোল্লা। এবং সর্বশেষ জন, বর্তমান আলোচনার মধ্যমণি, মনোয়ার হোসেন দিপু ওরফে ডিপজল। এই লেখা প্রকাশিত হবার আগে এসব বিষয়ে ফয়সালা হয়ে গেলে কিংবা খোদ নির্বাচন হয়ে গেলেও প্রেক্ষাপট হিসেবে এই তথ্যগুলোর গুরুত্বহানি হবার কারণ নেই।

রাজনৈতিক জনসভায় ডিপজল। সূত্র: অভিনেতার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ

নির্বাচনের পোস্টারে কিংবা সাধারণভাবে রাজনৈতিক প্রচারণার যেকোনো পোস্টারে পুরুষের ব্যক্তি-অবয়ব প্রকাশরীতিতে গত কয়েক বছরের বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ রদবদল হয়েছে। আপাত সাধারণ এই পর্যবেক্ষণটিকে মনোযোগ দিয়ে পাঠ করা যায়। এক তো হলো খুব কারিগরিভাবে দেখলে সাদাকালো ছবি প্রায় উঠেই গেছে। কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরিবেশিত ইমেজের পোশাক-বাছাই। কলেজ নির্বাচন থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবয়বের অবধারিত অংশ হয়ে পড়েছে পাশ্চাত্যীয় আনুষ্ঠানিক পোশাক-হালকা রঙের জামার উপর ঘন রঙের কোট, মিলিয়ে একটা টাই। আবক্ষ বিধায় নিম্নাঙ্গে কে কী পরছিলেন, ছবি তুলবার কালে, তা জানা যায় না। এই পোশাকের সঙ্গে মুখাভিব্যক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে সম্পর্কিত। ধানমণ্ডি-মোহাম্মদপুর আসনের ইদানীংকার নিয়মিত প্রার্থী খন্দকার মাহবুবউদ্দিনের মতো সজাগ-অভিজাত প্রতিকৃতি বাদ দিলে, এমন পোশাক পরে স্টুডিওতে বসে ছবি তোলার কালে কারও মুখে বিশেষ হাসি থাকবার কথা নয়। অধিকন্তু, এই বিশেষ পরিবেশনে সেটা বিশেষ রীতিনিষ্ঠও নয়। ফলে হাসি থাকে না। মানে সাধারণভাবে পাসপোর্ট ছবি বলতে যেসব আচরণবিধির ধারণা সুগঠিত আছে, এসব পোস্টারে টাই-বাঁধা এই মুখগুলো সেসবের কঠিন শাসনবিধিতে পর্যূদস্ত অবস্থাতেই ছবিকৃত হন। রাজনীতি অঙ্গণের পুরুষ-প্রতিকৃতি নিয়ে বলবার সময়ে স্মরণ রাখা জরুরি যে আওয়ামী পক্ষের প্রতিকৃতি-পরিবেশন-রীতি মাঝেমধ্যেই এর প্রবাদ-আইকন শেখ মুজিবের পোশাকের স্মারক বা রেফরেন্ট হবার চাপে কিংবা দায়িত্বে থাকে। তুলনায়, বিএনপি-পক্ষীয়রা শেষ সত্তরে নির্মিত সচেতন মিডিয়ানিষ্ঠ আইকন জিয়ার [১]  সাফারি ও রোদচশমা (রে-ব্যান না হলেও, যেকোনো একটা অন্ততঃ) বয়ে বেড়ানোর চাপ সম্প্রতি আর বহন করেন না। তারেক জিয়াও, সাফারি ও চশমার সম্ভাব্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরসূরী হতে পারতেন যিনি, এর ভার একনাগাড় ছবিতে বহন করেন না। [২] এর একটা কারণ হতে পারে, পোশাকটিকে প্রায় হুবহু লে. জে. এরশাদ ত্যক্ততার সীমা পর্যন্ত ব্যবহার করেছিলেন। ফলে পাশ্চাত্যীয় পোশাকে, আনুষ্ঠানিক শক্ত মুখাবয়বে, এই পরিবেশনরীতি যে কেবল বিএনপি পক্ষকে এরশাদ-ক্লিষ্ট পরিবেশনরীতি থেকে বিকল্প সরবরাহ করেছে তাই নয়, বরং, নানান পক্ষের জন্য একটা আধুনিকতাকামী তোরজোর ইউনিফর্মিটি প্রদান করেছে। অধিকন্তু, মুখাবয়ব অধিকতর নৈর্ব্যক্তিক-দাপ্তরিক হবার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থেকেছে, শেখ মুজিব হতে সৃষ্ট জনবাদী একটা পাটাতনে যেটা আদৌ একইরকম ছিল না।

এরকম প্রেক্ষাপটে, মনোনয়নের আগেই ডিপজল যে ছবিখানি দিয়ে তাঁর প্রতিকৃতি প্রোথিত করছেন, তাঁর প্রজাদের অভিজ্ঞানে, সেটা চমকপ্রদ। ডিপজল টাই পরেননি, জামাই পরেছেন একখানা কেবল। হতে পারে ইদানীং তিনি বাড়তি চুল পরেন মাথায়। সেটাতে পরিপাটি সিঁথি। দু’ ধরনের পোস্টারে দু’দিকে সিঁথি, অন্যথায় একই প্রতিকৃতি -অনুমান করা যায় নেগেটিভ উল্টে ছাপানো। কিন্তু যেটা এই আলোচনার মুখ্য মনোযোগের জায়গা তা হলো অবয়বটিতে ডিপজলের প্রণোদিত হাসি। এটা এমন একটা হাসি, যেটার পরিবেশন রীতি ঠাহর করতে আমাদের ঢাকাই চলচ্চিত্রের দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে দৃকপাত করতে হবে। [৩] পোস্টারে ডিপজলের হাসিখানা নির্বাচনী/রাজনীতিক প্রচারণায় কিছুকাল আগ পর্যন্ত অল্প হলেও নজরে-পড়া অন্যান্যদের রীতিমাফিক হাসির সঙ্গে কিছুমাত্র মেলে না। ডিপজলের এই হাসিতে মুখের পেশীর অধিকন্তু চোখ এবং নাক বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহৃত। এমনিতে, তাঁর চোখের আকৃতি গড়পরতা মানুষজনের থেকে বেশ বড়, অক্ষিগোলকের সাদা অংশ তুলনায় বেশি এবং সেটি বেশ বাইরের দিকে ভাসা ভাসা। ডিপজলের চোখ সুস্পষ্ট। অনুমান হয়, চলচ্চিত্রে তাঁর কাজ দেখলে, তাঁর চোখের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে তিনি বিশেষ সজাগ। এই পোস্টারটিতে চোখজোড়া গভীর নিবদ্ধ, ক্যামেরায় নয়, বাইরে কোনো লক্ষ্যবস্তুর দিকে। নিবদ্ধ বললেও চোখজোড়ার ভূমিকা পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয় না, বরং বলা উচিত বিদ্ধকারী, পিনেট্রেটিভ। নাকের পাদদেশের দু’পাশ থেকে কুঞ্চিত। সজাগ এই কুঞ্চনের ফলে ঠোঁট এবং ঠোঁটের উপর মোঁচ নাকের দু’পাশ বরাবর দুইটা বাঁক নিয়েছে। মোঁচটা তাঁর নিজেরই, বাড়তি কিছু লাগাননি বলেই মনে হয়। মোঁচের দু’ধারের প্রান্তসীমা ঠোঁটের প্রান্তসীমা ডিঙ্গিয়ে এসে থেমেছে। তাঁরা সাদা দাঁতগুলো এরই মধ্যে ঝকঝকিয়ে উপস্থিত।

ডিপজলের এই হাসিমাখা ছবিখানা আত্মপ্রতিকৃতির পাবলিকীকরণের যাবতীয় পুরাতন কায়দাকানুনকে একদম সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। পাবলিকীকরণের প্রতিকৃতিতে-রাজনীতিক ময়দানের কথাই হচ্ছে-কিছু অনুভূতিকে ইশারা করবার স্পষ্ট চর্চা চিহ্নিত করা সম্ভব। টাই-বাঁধা নৈর্ব্যক্তিকতার বাইরে যেসব পরিবেশন লক্ষ্য করা যায় সেখানে কতগুলো মৌলিক অনুভূতি শনাক্তযোগ্য-লাস্য, প্রসন্নতা, [প্রজা]-বাৎসল্য, দৃঢ়তা/ঋজুতা ওরফে চলতি ভাষায় যাকে ব্যক্তিত্ব বলে [৪] ইত্যাদি। আমি বলতে চাইছি, সচেতন কিংবা অচেতন, প্রতিকৃতি-রচনার মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে যেন ছবির ভোক্তাকুলে প্রতিকৃতির মালিক সম্বন্ধে এসব অনুভূতি সৃজিত হয়। এসব অনুভূতি কেন নিরন্তর ইতিবাচক পরিক্ষেত্র ইঙ্গিত করে সেটা একদম স্বতন্ত্র জিজ্ঞাসা, এবং এক্ষণে আলোচ্য নয়। কিন্তু আলোচ্য ডিপজলের এই ছবিখানা এসকল অনুভূতি সৃজনে/সঞ্চালনে কিছুমাত্র বিচলিত ছিল না; বরং তিনি নির্দেশ/রেফার করতে চেয়েছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু।

আবক্ষ ছবির সীমাবদ্ধতা এখানে আসলেই গুরুতর। সেটা যে কেবল নিম্নাঙ্গের পোশাক সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে না তাই নয়, পরন্তু শরীরভঙ্গির সম্ভাবনাগুলো হয় আড়াল করে নয়তো, ছবিকৃত হবার কালেই, পরিসীমিত করে। খুঁটিয়ে দেখলে, তারপরও, বোঝা সম্ভব যে তাঁর পৃষ্ঠদেশ খাড়া উল্লম্ব নয়। অধিকাংশ আলোকচিত্রীই এই ধরনের ছবি তুলবার সময়ে বিষয়বস্তু-মানুষটাকে একদম পিঠ-সোজা করে বসতে বলেন। ডিপজল, হয়তো নিজে থেকেই, দশ ডিগ্রি মতো সমুখে, এবং ত্যারছাভাবে, ঝুঁকে আছেন বলে মনে হয়। সেটা তিনি পিঠ থেকে করেছেন নাকি ঘাড় থেকে তা বোঝা যায় না। তাঁর এই ছবিখানা ঠিক আবক্ষও নয়, বরং আগর্দান। তিনি কী অনুভূতি দর্শককুলে সঞ্চার করতে চেয়েছেন সেটা নিশ্চয়ই সহজ জিজ্ঞাসা নয়। কিন্তু প্রচলিত পরিবেশনরীতির মধ্যকার ইতিবাচক কোনো পরিকাঠামোতে তিনি থাকতে চাননি। অনুবর্তীতে, তাঁর অবয়ব যে অনুভূতি তৈরি করতে পারে তাকে বিশেষ একটা নামে বন্দি না-করে বরং আমি ঢাকাই চলচ্চিত্রের পাঠকত্বে ‘ভিলেন’ ধারণার আওতায় আগে রাখতে চাইছি। এসূত্রে প্রস্তাব করছি, প্রাক-মনোনয়ন নির্বাচনী প্রচারণায় এখন পর্যন্ত ডিপজলের একমাত্র ছবিখানা নির্দেশ/রেফার করতে চাইছে নিষ্ঠুরতা, জিঘাংসা, প্রতিশোধপরায়ণতা ইত্যাকার ফিল্মি অনুভূতিকে। এখানে স্পষ্ট করবার প্রয়োজন আছে, আমার তরফে ‘ফিল্মি’ বিশেষণটা ব্যবহারের কারণ কী। ভেঙে বললে, আমার বক্তব্য এই নয় যে ডিপজলের ছবিখানা নিষ্ঠুরতা ও ইত্যাকার অনুভূতি সৃজনে-নির্দেশে প্রচেষ্ট, বরং ঢাকার চলচ্চিত্রে খলচরিত্রগুলোর যে স্থায়ী ও অনড়প্রায় প্রতিকৃতি সেখানে এই অনুভূতিগুলোর ব্যাঞ্জনাকে নির্দেশ করতে সচেষ্ট। ফলতঃ, ছবিখানা আদতেই ইমেজ-নির্মাণ প্রচেষ্টা নয়, বরং বিশেষ পরিসরে (চলচ্চিত্র) নির্মিত ইমেজকে নির্দেশ করতে সচেতন প্রয়াস। এ পর্যন্ত ভাবতে পারলে আর সন্দেহ থাকে না যে ঢাকাই চলচ্চিত্রে ডিপজলের বিশাল ও এখন পর্যন্ত (একাডেমিক) ব্যাখ্যাতীত সাফল্যের সঙ্গে এই অবয়ব-প্রস্তাব সম্পর্কিত। ডিপজল ভিলেন চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে অত্যন্ত নিশ্চিত তাঁর চলচ্চিত্র-জনপ্রিয়তার বিষয়ে এবং নিজ-অবয়ব হাজির করবার বেলায় কথিত ইতিবাচক অনুভূতিগুলোকে নির্দেশ করতে কিছুমাত্র চাপ বোধ তিনি করেননি। আত্মপ্রতিকৃতি আমকরণের আধুনিক প্রক্রিয়ায় এটা একটা চিত্তাকর্ষক ঘটনা।

মাহিয়া মাহির সঙ্গে ‘অনেক দামে কেনা’ ছবিতে ডিপজল

এখানে দুটো বিষয় উল্লেখের দাবিদার। জটিলভাবে যদিও, সেগুলো সম্পর্কিত। প্রথমটা হলো: যদি ইতিবাচক অনুভূতিগুলোর বিপরীতেই কিছু ডিপজল রেফার/নির্দেশ করতে চান, যদি ইতোমধ্যেই চলচ্চিত্রে খল হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তার উপর দাঁড়াতে চান তাহলে সঙ্গত ছিল ছায়াছবিরই কোনো স্থিরচিত্র হাজির করা যেখানে তিনি নিষ্ঠুর খল হিসেবে উপস্থিত। একথা এখন চলচ্চিত্র-দর্শক মহলের পাবলিক জবানে সাধারণভাবে স্বীকৃত যে ডিপজল-রূপায়িত নিষ্ঠুরতা পূর্ববর্তী সকল খল-ইমেজ থেকে ছাপিয়ে গেছে। ডিপজলের পক্ষে একছবির পোস্টার কিংবা কোলাজ-ছবির পোস্টার করে তাঁর চলচ্চিত্র-প্রতিকৃতির পুনরুৎপাদন সম্ভব ছিল অনেক সহজে। কিন্তু তিনি একটা আনকোড়া ছবিই পোস্টারের জন্য তুলতে চেয়েছেন। দ্বিতীয় বিষয়টা হলো: এই পোস্টার যখন প্রকাশিত হয়, তার বেশ আগে কিছুকাল ধরে ডিপজল চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নিজেকে খলচরিত্রের কাঠামো থেকে বের করে এনে কাজ করছেন। এটা বিশেষ জরুরি তথ্য। সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্তগুলোর মধ্যে চাচ্চু, পিতার আসন [৫] ইত্যাদি রয়েছে। এসব ছবির পোস্টারে ডিপজলের অবয়ব দেখে বোঝা যায় চরিত্রাভিনেতা বলতে যা বোঝানো হয়ে থাকে ডিপজল এখন সেখানে স্বাক্ষর রাখতে চাইছেন। এখানেও একটা চমকপ্রদ বিষয় আছে। ডিপজল খলনায়ক হিসেবে কাজ করেছেন এমন বহু চলচ্চিত্রের পোস্টার বা বিজ্ঞাপনী কার্যক্রমে তিনি নায়ককেও ছায়ার তলে নিয়ে ফেলেছিলেন। অন্য কিছু বাদ দিলেও, পোস্টারে তাঁর মুখটাই বড় করে ছাপা হবার একাধিক নজির অতীতে ছিল। কিন্তু তিনি নিজে লগ্নিকার হয়ে চরিত্রাভিনেতা হবার প্রাক্কালে পোস্টারের জায়গা শরীকীভাবে নিচ্ছেন-রাজ্জাকের সঙ্গে কিংবা অন্য ছবিতে একজন বাচ্চার সঙ্গে। এরকম। যাহোক, পর্দায় ডিপজলের এই ‘ভালমানুষ’ হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা তাঁর দর্শকদের অনেকের কাছেই ওমরাহ্ করে আসার সঙ্গে সম্পর্কিত। সেটা খুব জটিল জিজ্ঞাসা এবং বর্তমান আলোচনায় খুব প্রয়োজনীয় নয়। বিশেষতঃ তাঁর সম্ভাব্য গ্রেফতার ও ওমরাহ্ সম্পর্কিত সামান্য তথ্যাদি যা জানা যায় তার আলোকে। কিন্তু ছায়াছবিতে খলনায়ক থেকে সরে-আসা এবং নির্বাচনী পোস্টারে সেই বিশেষ দর্শকত্বের সঙ্গেই যোগাযোগ করবার সচেতন প্রয়াস যুগপৎ এককালে ঘটায় ডিপজলের আলোচ্য অবয়বটি আরও বিশেষ গুরুত্ববহ মনে হয়েছে আমার।

যে জিজ্ঞাসাটা নিয়ে, মনে মনে, আমি শুরু করেছিলাম সেটা হচ্ছে ডিপজলের নিজ-অবয়ব (নির্বাচনী পোস্টারে) হাজির করবার এই প্রচেষ্টা যদি জ্ঞানতঃ লঙ্ঘন হয় তাহলে একে নৈরাজ্যবাদী প্রদর্শন বা এনার্কিস্ট মেনিফেস্টো হিসেবে দেখা যায় কিনা। তাঁর এই প্রচেষ্টা পাবলিকের কাছে তাঁর পর্দা-জনপ্রিয়তাকে নির্দেশ করেই ক্ষান্ত হয় না কেবল, বরং প্রতিপক্ষকে নির্দেশ করে তাঁর লঙ্ঘন করবার সামর্থ্য। তিনি সেটা ভেবেচিন্তে করুন বা নাই করুন, আর সম্ভাব্য লঙ্ঘনের মাত্রা সম্বন্ধে তাঁর প্রতিপক্ষ (বিএনপি-আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বে ভাবতে পারলেই ভালো, বরং অঞ্চলগত ক্ষমতাবলয় হিসেবে দেখলে বুঝতে সুবিধা হয়) সজাগ থাকুন বা নাই থাকুন, লঙ্ঘনের এই ঘোষণা একটিমাত্র ছবিতেই সুস্পষ্ট। কোনো সন্দেহ নেই একটা নির্দিষ্ট পরিসরে তাঁর এই ভূমিকা এনার্কিজমের সীমানাকে পরখ করে। ফলতঃ পরিবেশনের রাজনীতি নিয়ে আতঙ্কে হিম না হবার উপায় নেই যেহেতু কথা হচ্ছে ঢাকাই রাজনীতি ও ডিপজলকে নিয়ে।

লাইফস্টাইল নৈরাজ্যবাদ [৬] নিয়ে ভাবনা আমাকে খোদ নিজেকে নিয়ে অস্বস্তিতে ফেলেছে বেশ কিছুকাল। সেটা প্রথম বিশ্বের একটা চরম-নিয়ন্ত্রিত আবার অসীম ভোগবাদী সমাজে বছর দুয়েক থাকার প্রেক্ষিতে আরও প্রকট হয়েছে। সাধারণভাবে আমার অবয়ব গত অনেক বছর ধরে স্বশ্রেণী, স্বকর্মজগত ইত্যাদিতে একটা স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়ে আসছে। আমার অনভিজাত মুখাবয়ব এতে বাড়তি সাহায্য দিলেও আমার প্রচেষ্টার গুরুত্ব একটুও কম নয়। পোশাক নির্বাচন থেকে শুরু করে চুলদাড়ির ছাঁট (বা আছাঁট ক্ষেত্রবিশেষে), অলঙ্কার ব্যবহার ইত্যাদি একটা গাঢ় প্রকটভাব চতুষ্পার্শ্বে ফুটিয়ে রাখে। আমার অস্বস্তির সূচনাও এখান থেকে হয়েছিল। ইদানীং প্রায়শঃ এই প্রকটভাব নগর-অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষজনকেও অস্বস্তিতে রাখে। সেটা নিয়ে আমি ভাবছিলাম। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, প্রথম বিশ্বে থাকার প্রেক্ষিতে, ‘ট্র্যাডিশনালিজম’ ও ‘গ্লোব্যালাইজেশন’ ধারণাযুগলের প্রত্যয়গত গতায়াত। এই যুগলের মধ্যে নিপতিত হবার আশঙ্কা নিয়ে আমার এই অবয়ব সমুন্নত রাখতে হয়েছে। বিশেষতঃ ৭০ দশকের হিপ্পি ধারার একটা আর্কাইভ্যাল রূপ বিশেষ বিশেষ দোকানে জাপানে বিরাজমান [৭] বিধায় পরিস্থিতিটা অনেক চাপের। সারাংশে, পাশ্চাত্যের গর্ভে থেকে পাশ্চাত্যীয়দের পক্ষে লাইফস্টাইল-নৈরাজ্য জারি রাখা যে নেহায়েৎ লিবেরেলবাদের সীমানাকে আত্মপরীক্ষার সুযোগ দেয় মাত্র এই আপ্তজ্ঞান নিয়ে খানিক ভোগান্তি শুরু হয়েছিল। বলাই বাহুল্য, এটা একটা মানসিক অশান্তি মাত্র-সামাজিক নৈরাজ্যবাদের সূচনা ঘটাতে পারার ব্যর্থতাবোধ থেকে যার সূত্রপাত। চলছিল এভাবেই। এবং প্রতিটা দপ্তরে আমার প্রদেয় পাসপোর্ট ছবি সচেতন অবয়ব বানাবার প্রচেষ্টাতে নিমগ্ন থেকে এসেছে। ডিপজল সেখানে একটা চপেটাঘাতের মতো কাজ করলেন, পোস্টারে বসেই।

বর্তমান বাংলাদেশে ইমেজ নির্মাণের ক্ষমতার একচেটিয়া ব্যবস্থার মধ্যে ডিপজলের এই সাবভার্টিভ বা পল্টানধর্মী অবয়ব খোদ ক্ষমতাব্যবস্থার শক্তিমত্তাকে আর একবার চিনিয়ে দেয়। ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো যখন সাবভার্সনের প্রক্রিয়ায় খেলাচ্ছলে হাজির হয় তখন আসলে এর প্রজাদের সতর্ক হয়ে ওঠার সময়।

নিজ-পরিচিতি: আমি, মানস চৌধুরী, মাস্টারি করে খাই এবং খেয়ে লিখি; এই মুহূর্তে ডিগ্রি অর্জনের বাসনায় জাপান সরকারের খোরপোশে জাপানে অবস্থিত আছি।   

[১] এ ব্যাপারে নগণ্য একটা রচনায় আমি জিয়ার আইকন সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় পরিকল্পিত প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছিলাম। দেখা যেতে পারে, মানস চৌধুরী, “মহানায়কের মুখচ্ছবি: সাম্রাজ্যবাদী গণতন্ত্রী ও জাতীয়তাবাদী স্বৈরাচারী”, সমাজ নিরীক্ষণ, সংখ্যা ৯৬, সমাজ নিরীক্ষণ কেন্দ্র, ঢাকা, ২০০৬। এ বিষয়ে নিশ্চয় আরও কাজ হয়েছে। আমার অজ্ঞতার কারণে মার্জনা চাই।

[২] তারেক জিয়ার প্রতিকৃতি বা ইমেজের স্থপতিরা কী ভাবছেন জানার উপায় নেই। কিন্তু জেনারেল জিয়ার অবিকল পুনরাকৃতি সেখানে নেই। এটা একেবারে আমার অনুমান যে, তারেক জিয়াকে আরও তরুণনিষ্ঠ ও ‘সিভিল’ ধরনের দেখাবার পরামর্শ রয়েছে। এবারের নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে, এটাও প্রমাণবিহীন এক অনুমান যে, তারেক জিয়ার আরও ‘দেশজ’ প্রতিকৃতি বানাবার উদ্যোগও থাকবে।        

[৩] এখানে একটা ক্ষমা চাইবার আছে। লেখাটি আমি যোগাযোগ-এর সম্পাদককে এমন সময়ে দিই যখন ডিপজলের আলোচ্য একটা ছবি গছিয়ে দেয়া তাঁকে শাস্তি দেয়ার শামিল। এখানে সমস্যা আরও আছে। আমার সঙ্গে কোনো ক্যামেরা নেই। থাকলেও ঢাকার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে, দেয়ালে-সাঁটা এরকম কোনো ব্যক্তিত্বের ছবি তুলতে চেষ্টা করছি, তায় আমার কোনো সাংবাদিক-পরিচয়পত্র নেই-এতে করে জানমালের বিশেষ অসুবিধা হতে পারে। যে-কোনো একজন সাংবাদিক মাত্র হলেও যে অবস্থা বিশেষ কিছু ভিন্ন হতো ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেয় না। পাঠকদের এই অসুবিধার জন্য আমি দুঃখিত।

[৪] এই ভাবনাটাও আমার না বলে স্বস্তি পাচ্ছি না যে, টাই-বাঁধা পরিবেশনরীতিতে সম্ভবতঃ ‘ব্যক্তিত্ব’-এর দ্যোতনা-ঘটানো বা সিগনিফাই করার প্রচেষ্টা থাকে।

[৫] এই ছবিগুলো আমার দেখে নিতে পারা উচিত ছিল। কিন্তু টানটান সফরের নানারকম কর্তব্যে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এসব ছবির দর্শককুলের সঙ্গে আলাপ করবার সময় আমি বের করেছিলাম। বলাই বাহুল্য, আমার গবেষণার পরিসর তৈরি হয়েছে সেভাবেই।

[৬] লাইফস্টাইল নৈরাজ্যবাদের অন্তঃসারশূন্যতা ও সামাজিক নৈরাজ্যবাদের রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা দেখা যেতে পারে-

Bookchin, M., Social Anarchism or Lifestyle Anarchism: An Unbridgeable Chasm, AK Press, San Francisco and Edinburgh.

কিংবা http://www.spunk.org/library/writers/bookchin/sp001512/

[৭] এটার নানান কারণই থাকতে পারে। এসব আর্কাইভ্যাল জীবনধারা রকমারি (প্লুর্যাল) কালচারাল অপশন সরবরাহ করে। অধিকন্তু বীটল্স খ্যাত জন লেনন সংসার পেতেছিলেন এক জাপানী নারীর সঙ্গে-এটার কোনো সঞ্জননী ভূমিকা থাকতে পারে।

প্রথম প্রকাশ: যোগাযোগ, সংখ্যা ৮ (২০০৬)


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

মানস চৌধুরী

লেখক, শিক্ষক ও নৃবিজ্ঞানী

মন্তব্য করুন