Select Page

পালাবি কোথায়: এরা পালায় না, মুখোশের আড়ালে থাকে!

পালাবি কোথায়: এরা পালায় না, মুখোশের আড়ালে থাকে!

যার কথা না বললেই নয়; তিনি হুমায়ূন ফরীদি, দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন ‘পালাবি কোথায়’ ছবিতে

আমি নিজে একসময় গার্মেন্টস কর্মী ছিলাম। কৈশোরে বয়সে, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। আমি স্বচক্ষে দেখেছি গার্মেন্টসে কীভাবে আর কতভাবে নারী কর্মীরা যৌন হয়রানির শিকার হয়।

সিনে-ম্যাগাজিন পড়ে যখন জানতে পারলাম পরিচালক শহীদুল ইসলাম গার্মেন্টসের নারী কর্মীদের উপর যৌন হয়রানির ওপর ভিত্তি করে সিনেমা তৈরি করছে ‘পালাবি কোথায়’ নামে; আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি ছবিটি দেখার জন্য।

ছবিটি মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে দেখতে পারিনি। পরের সপ্তাহে চট্টগ্রাম টাইগারপাস নেভাল অডিটোরিয়ামের দেখি। নেভাল অডিটোরিয়ামে সবসময় নতুন ছবি দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে চালাতো। প্রথম সপ্তাহে বুকিং দিতো না।

হুমায়ূন ফরীদি একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ম্যানেজার। বিবাহিত। স্ত্রীর দৃষ্টিতে চরিত্রবান পুরুষ। কারণ ফরীদি স্ত্রীর সামনে নিজেকে চরিত্রবান ও বিশ্বস্ত স্বামী হিসাবে প্রমাণ করার জন্য সবসময় সতর্ক থাকে।

মূলত ফরিদী লম্পট-দুশ্চরিত্র স্বভাবের। গার্মেন্টেসে নারী শ্রমিকদের ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে যৌন হয়রানি করে থাকে।

যেমন; ঝাড়ুদারনি চাম্পা ফরীদির রুম যখন ঝাড়ু দিতে আসে। তখন সুযোগ বুঝে ফ্লোরে ঝাপটে ধরে। এমন সময় রুমে প্রবেশ করে ফরীদির স্ত্রী। স্ত্রীকে দেখে সে সাধু সেজে যায়। শোকেসের নিচে ময়লা কেন, তা নিয়ে চম্পাকে বকাঝকা করে।

সুবর্ণা অফিসের টাইপিস্ট ও ফরীদির প্রাইভেট সেক্রেটারি। ফরীদি ছলেবলে কৌশলে সুবর্ণাকে আয়ত্তে আনতে চায়। কিন্তু পারে না। তাই বিভিন্ন কৌশলে যন্ত্রণা দিয়ে থাকে। একদিন কাজের অজুহাতে সুবর্ণাকে রাত পর্যন্ত রাখে। সুযোগ পেয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা চালায়।

শাবানা ফ্যাক্টরীতে বিশেষ পদে আসে। থাকে মহিলা হোস্টেলে। দেশের বাড়ি চট্টগ্রামে। স্বামী-সন্তান চট্টগ্রামে থাকে। ফরিদী শাবানাকেও নানানভাবে বিরক্ত করে। তখন সুবর্ণা ও চম্পার সাথে মিলে ফরীদিকে উচিৎ শিক্ষা দিতে একতাবদ্ধ হয় শাবানা।

আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নারী শ্রমিকদের যেভাবে যৌন হয়রানি করতে দেখা গেছে, এটাই ঘটে। একজন নারী (ফ্যাক্টরির সুপারভাইজার) ফরীদির বশ্যতা স্বীকার করে। ফায়দা আদায় করে এবং অন্য নারীদের হয়রানি করতে সুযোগ করে দেয়।

এই সব জ্বলন্ত সূর্যের মত বাস্তব। কারণ আমি অনেক দেখেছি এইসব। নারী শ্রমিকরা যে শুধু ফ্যাক্টরির ক্ষমতাধর পুরুষ দ্বারা যৌন হয়রানি হতো তা না। এরা পথে-ঘাটেও বখাটেদের দ্বারা যৌন হয়রানি হতো।

ভদ্রসমাজের তথাকথিত অনেক ভদ্র নারী-পুরুষ তো মনে করে গার্মেন্টসে যেসব নারী কাজ করে তারা খারাপ।

আমার বয়স তখন বাইশ বছর। তখন আমি হার্ডওয়্যার টুলসের দোকানে চাকরি করি। আমার পরিচিত এক যুবক গার্মেন্টস শ্রমিক বিয়ে করে। শিক্ষিত পরিবারের শিক্ষিত (!) মধ্যবয়স্ক এক লোক আমার সামনে তিরস্কার করে বলেছিলো, ‘কিরে আক্কাস (ছদ্মনাম) তুমি না-কি গার্মেন্টসের মেয়ে বিয়ে করেছো! দেশে মেয়ের বুঝি অভাব! গার্মেন্টসের মেয়েরা কি ভালো হয়!’

এই গার্মেন্টস শ্রমিকরা দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। এদের প্রতি অবহেলিত মন্তব্য করার আগে আমাদের সাতবার ভাবা উচিত।

এইসব চরিত্র ছিল। এইসব চরিত্র আছে। এরা থাকবে। এরা পালায় না, মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে।

ছবিটি একটি প্রতিবাদ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে। লম্পট্যের বিরুদ্ধে। নারী শ্রমিকদের প্রতি অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে।

সত্যি শহীদুল ইসলাম খোকন মেধাবী পরিচালক। আর যার কথা না বললেই নয়; তিনি হুমায়ূন ফরীদি, দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন ‘পালাবি কোথায়’ ছবিতে।

২৯ মে ২০২০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আকবর খসরু

চলচ্চিত্রপ্রেমী ও লেখক

মন্তব্য করুন