Select Page

বলিউডে ‘জনি মেরা নাম’, ঢালিউডে ‘জনি’

বলিউডে ‘জনি মেরা নাম’, ঢালিউডে ‘জনি’

সেই শৈশবে পরিবারের সাথে সিলেটের লালকুঠি সিনেমা হলে দেখা আমার প্রিয় ছবিগুলোর একটি হলো ‘জনি’। বাংলা চলচ্চিত্রের ‘ডায়নামিক ডিরেক্টর’ হিসেবে খ্যাত দেওয়ান নজরুলের একটি বিনোদনধর্মী সুপারহিট চলচ্চিত্রের নাম ‘জনি’ । দেওয়ান নজরুল বলিউডের ‘জনি মেরা নাম’ চলচ্চিত্র থেকে অনুপ্রানিত হয়ে বাংলায় জনি চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করলেও বলিউডের সাথে কোন মিল ছিলো না।

দেওয়ান নজরুল তাঁর নিজের মতো করে গল্পটি উপস্থাপন করেছিলেন । দেব আনন্দ ও হেমা মালিনীর ‘জনি মেরা নাম’ আর বাংলাদেশের সোহেল রানা ও সুচরিতা অভিনীত ‘জনি’ সম্পুর্ন পৃথক দুটি গল্প। হিন্দি ‘জনি মেরা নাম’ সিনেমায় মোহন ও সুহান নামের দুই ভাই যাদের বাবা একজন পুলিশ অফিসার। একদিন অপরাধচক্রের প্রধান রঞ্জিতের (প্রেমনাথ) এর হুকুমে পুলিশ অফিসারকে খুনা করা হয় দুইভাই মোহন ও সোহানের চোখের সামনেই।

মোহন (প্রান) বাবার খুনিকে তাড়া করে খুন করে এবং রঞ্জিতের গ্রুপের সাথে মিশে যায়। সোহান (দেবআনন্দ) মায়ের কাছেই বড় হয়। সোহান সিআইডি অফিসার হিসেবে একটি মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে ছদ্মবেশে জনি নামে পরিচিত হয়।…এভাবেই জনি মেরা নাম কাহিনীর গল্পটি এগিয়ে যায়।

‘জনি’ সিনেমার গল্পটি ছিলো…… পুলিশ অফিসার আজিম ও আনোয়ারার একমাত্র কিশোর ছেলে জনি [ সোহেল রানা ] যে একটু বখাটে ছিল । জনি তাঁর বাবা আজিমকে খুব ভয় পেতো। একদিন মাহবুব খান ও জসিমের বউ আজিমের কাছে এসে জসিমকে ছাড়ানোর জন্য সুপারিশ করে কিন্তু আজিম আইনের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল তাই তাদের সুপারিশ গ্রহন করেননি বরং বলেছিলেন ‘’ অপরাধী সে যেই হোক তাকে শাস্তি পেতে হবে, সে যদি আমার সন্তানও হয় তাকেও ছাড় দিবো না ।‘’ এই কথাটা কিশোর জনির মনে খুব দাগ কাটে।

একদিন জনি স্কুল ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে তাস খেলছিল তখন আরেক বখাটে ছেলের গ্রুপের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হলে জনি একটি পাথর ছুড়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় আর সাথের অন্যরা খুন খুন বলে চিৎকার করে । জনি ধরে নেয় সে খুন করেছে তাই তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে , সে বাবা আজিমের ভয়ে পালিয়ে যায়। ঢাকা শহরে এসে জনি পঙ্গু এক অপরাধী আহমেদ শরিফের হাতে পড়ে।আহমেদ শরিফ জনিকে আশ্রয় দেয় এবং পকেট মার, ছিনতাই সহ নানা অপরাধে লিপ্ত হয়ে জনি একসময় হয়ে উঠে এক সন্ত্রাসী। এদিকে জসিমের অবর্তমানে মাহবুব খান অপরাধ জগতের গডফাদার হয়ে উঠে এবং সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রনে নেয়। জসিমের একমাত্র মেয়েকে বাইজী পাড়ায় বাইজী করে টাকা আয় করে মাহবুব খান।

সোহেল রানার সাথে মাহবুব খানের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত চরমে উঠে। আহমেদ শরিফ হাত মেলায় মাহবুব খানের সাথে । অন্যদিকে সোহেল রানার বাবা আজিম পুলিশ সুপার হয়ে ঢাকায় আসে , একদিন পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে আজিমের ঘরে আশ্রয় নিয়ে মা আনোয়ারাকে দেখে সোহেল রানা চিনে ফেলে কিন্তু নিজের পরিচয় দেয় না বাবা আজিমের ভয়ে। ২০ বছর পর বৃদ্ধ জসিম জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মাহবুব খানের মুখোমুখি হয় সব হিসেব বুঝে নিতে, মাহবুব খান দলবল সহ জসিমকে দেখে পালিয়ে যায়। জসিম মাহবুব খানের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

..এভাবে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে অবশেষে হারিয়ে যাওয়া জনি মা বাবার বুকে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে ছবিটির সমাপ্তি হয়।

এই ছবিতে সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল দর্শকরা ধরেই নিয়েছিল খলনায়ক জসিম শুরুতেই শেষ, প্রধান খলনায়ক মাহবুব খান। কিন্তু ছবির শেষ দিকে যখন জসিম ফিরে আসে তখন হলভর্তি দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালির শব্দে কানের পর্দা ফেটে যাচ্ছিল। পরিচালক দেওয়ান নজরুল দারুন দক্ষতার সাথে জসিমকে দীর্ঘ সময় পর্দার বাহিরে রেখে আবার পর্দায় ফিরিয়ে এনেছিলেন।

পুরো ছবিটা ক্লাইমেক্স ও ফিকশনে ভরপুর উত্তেজনায় ঠাসা একটি গল্প ছিল। দেশসেরা চিত্রগ্রাহক অরুন রায়ের চিত্রগ্রহনে ছবিটি হয়ে উঠেছিল আরও প্রানবন্ত। দেওয়ান নজরুলের লিখা ও আলম খানের সুর করা ছবির তিনটি গান – চোর আমি ডাকু আমি বলনারে, দুনিয়াটা মস্ত বড়/ খাও দাও ফুর্তি করো ও জনি আমার নাম গানগুলো তখন দারুন জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘জনি’ ছবির জন্য ১৯৮৩ সালে চিত্রগ্রাহক অরুন রায় সেরা চিত্রগ্রাহক (রঙ্গিন) শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।

উল্লেখ্য যে ১৯৯৪ সালে প্রযোজক পরিচালক মোতালেব হোসেন ‘জনি’ ছবিটার গল্পটিকে অনুসরণ করে ‘শাসন’ নামের আরেকটি ছবি নির্মাণ করেছিলেন যা জনি ছবির গল্পের প্লট থেকে নেয়া হলেও ছবিটি ছিল ব্যতিক্রম অর্থাৎ মোতালেব হোসেন একই রকমের একটি গল্পকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছিলেন ।


মন্তব্য করুন