Select Page

বাংলা চলচ্চিত্রে পরিবর্তন আসবে- রিকিয়া মাসুদো

বাংলা চলচ্চিত্রে পরিবর্তন আসবে- রিকিয়া মাসুদো

Rikiya Masudoরিকিয়া মাসুদো বাংলাদেশের বংশোদ্ভুত জাপান প্রবাসী পরিচালক। সেদেশে ছবি বানিয়ে বেশ নাম কামিয়েছেন। বাংলাদেশে বানাচ্ছেন ‘দ্যা স্টোরি অব সামারা’। ইতোমধ্যে এটি দর্শকের আগ্রহের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। ছবির শুটিংও শেষ পর্যায়ের। এই ছবি ও অন্যান্য বিষয়ে জানতে বিএমডিবি-র পক্ষ থেকে তার মুখোমুখি হয়েছিল নাজমুল হাসান দারাশিকো ও ওয়াহিদ সুজন। কথপোকথনের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে দেয়া হলো-

আপনার শুরুটা বলেন?
আমার কম বয়সটা কাটে মিউজিক-মডেলিং নিয়ে। পল্লব নোবেল আমার ব্যাচমেট ছিলো। ব্যান্ড করতাম। অডিও আর্টের আজম বাবুকে মামা বলতাম। বাচ্চু, জেমস ভাইয়ের সাথে পরিচয় ছিলো। এক সাথে আাড্ডা দিতাম। টুকটাক মডেলিং আর নাটিকা করতাম। এভাবে এই জগতের সাথে পরিচয়। একবার তো নাটকে চান্স পাওয়ার জন্য নূর ভাইয়ের (আসাদুজ্জামান নূর) এশিয়াটিকে তিন ঘণ্টা বসেছিলাম। এরপর এক মিনিট কথা বলার সময় পেয়েছিলাম। কিন্তু নাটকে সুযোগ মেলে নি। এই তো কয়েকদিন আগে দেশ টিভিতে দেখা হলে বললাম সে কথা।

জাপানে কিভাবে গেলেন?
জাপানে যায় নব্বই দশকের শুরুতে। এর আগে যাওয়া আসা ছিলো ছোট বেলা থেকে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করি। নিশান কারে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতাম। এই সুবাদে দশ-বারোটা দেশে ঘুরি। নানান সংস্কৃতি দেখি। এক সময় নিজেই ব্যবসা শুরু করি।

চলচ্চিত্রের সাথে কিভাবে জড়িত হলেন?
ঐ যে বলে না রক্তের মধ্যে শিল্প থাকে। ঐ রকম। জাপানে আমার এক বন্ধুর মামার শুটিং দেখতে যাই। সেখানে মজার কাণ্ড ঘটে। একটা শট দেখে আমার লজিক্যাল মনে হয়নি। নিজের অজান্তে মুখ থেকে ‘কাট’ শব্দটি বের হয়ে যায়। সাথে সাথে শুটিং থেমে যায়। আমি তো ভয়ে অস্থির। একে তো বিদেশি, অনেকে তাদের পছন্দ করে না। পরিচালক এসে বলে কেন কাট বললাম। বললাম, শুটিং তো ভালো হচ্ছিল। আমাদের দেশে কাট অর্থ ভালো। পরিচালক আমার কাঁধে হাত দিয়ে একপাশে এনে বলল, সমস্যা কিছু আছে। ভয় নাই, বলে ফেলো। পরে বললাম, কিছু একটা সমস্যা আছে। ম্যাচ করছিল না। সাথে সাথে তিনি চিফ এডিকে দিলেন থাপ্পড়। আবার রিশুটিং করলেন দৃশ্যটা। আসার সময় আমাকে কার্ড দিয়ে বললেন তার অফিসে দেখা করার জন্য।

তার সাথে দেখা করলাম। কাজ করার অফার দিলো। প্রথমে বললাম, সম্ভব না। আমি এখনো ছাত্র। তিনি বললেন, শুধু বন্ধের দিনগুলোতে আয়। এভাবে শুরু। অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো। একে তো ফরেনার, এর পরের কাজ করছি সিনিয়রদের সাথে। ক্যামেরাম্যান অনেক ভালো হল। কিন্তু ডিরেকশন যদি পছন্দ না হয়, সে মোড়ামুড়ি করবে। আমি নিজেও ডিওপি। একবার কাজ পছন্দ না হওয়ায় এক ডিওপিকে দৌড়ানো শুরু করলে সাগরে ঝাপ দিয়ে বেঁচেছিল। পরে কাজ দেখে মাথা নত করে ফিরেছে। আমি মনে করি যখন বুঝতে পারে আসলে কেউ কাজ জানে, তখন এমনিতেই মেনে নিবে। আমি তো ষষ্ঠ এডি হিসেবে কাজ শুরু করি। মেকাপ থেকে ক্যামেরার কাজ সব শিখতে হয়েছে।

আমাদের এখনকার ক্রু ও আটিস্টদের নিয়ে বলেন?
আমি সাধারণত টেবিল ওয়ার্কে কাজ করি। শট ডিভিশন, স্টোরিবোর্ড তৈরিসহ ধাপে ধাপে কাজ কির। মূলত: এখানেই আশি ভাগ কাজ শেষ হয়ে যায়। যা যা চাই তা রেডি করা মূল কাজ। এরপর ফ্রেমগুলো করি। বাংলাদেশে সব কাজ একাই করতে হয় ডিরেকটরকে। নায়িকা কোন ড্রেসের সাথে কোন নেইল পলিশ লাগাতে হবে তাও পরিচালককে বলে দিতে হয়। এটা দুঃখজনক। প্রথমে তো আমাদের একাডেমি দরকার। সেখানে থেকে আর্টিস্টরা বেরুবে। তারপর আমরা তাদের থেকে চুজ করে নেবো। এটাই তো হওয়া দরকার। আমাদের অল সেক্টরে এডুকেটেড লোক দরকার। তাহলে কোন সমস্যা থাকবে না। এতে সিস্টেমটা পাল্টাবে। আমার ক্ষেত্রে বলব মুখে বড় বড় কথা বলে লাভ নেই। আগে আমার কাজটা মানুষ দেখুক। অবস্থা পরিবর্তন হতে কমপক্ষে দশ বছর লাগবে।

বাংলাদেশে কাজ করতে আসার পেছনে কারণ কি?
আপনারা ভালগারিজমের যুগ পার হয়ে আসছেন। তাই হয়তো বিষয়টা পুরোপুর জানেন না। সে সময় আমরা কয়েকজন টোকিও ইউনিভার্সিটিতে ইউটিউবে বিভিন্ন দেশের মুভি দেখে আলোচনা করছিলাম। হুট করে দেখলাম এক জায়গায় লেখা বাংলাদেশের মুভি সং। এক বন্ধু বলল, তোর দেশের মুভি। দেখি কি আছ। দেখলাম সাগরের থেকে উঠে আসছে একটা মেয়ে। পরনে পাতলা শাড়ি। এর নিচে কিছু নাই। ইউ কান্ট বিলিভ ইট! আমার ইজ্জত আর নাই। বন্ধু বলল, থ্রি এক্স নাকি। আমি বললাম, না না বাংলাদেশের মুভি না। পরে রাতে কথা বলতে বলতে আমার বন্ধু বলল তোকে তো হাল ধরতে হবে বাঙালি হিসেবে। ওকে থ্যাংকস দেয়া উচিত। ও বলল, এভাবে হাজারো ছেলে মেয়ে হাল ধরবে। আমি এই ক্ষেত্রে হয়ত ছোট একটা কাজ করছি। আরো অনেককে এগিয়ে আসবে। তখনই বাংলা চলচ্চিত্রে পরিবর্তনটা আসবে।

এখনকার লোকেরা কেমন সাহায্য করছে?
এখানে অনেকে তো পারে এখনিই বিদায় করে দেয়। তবে অনেকেই যথেষ্ট হেল্প করছে। যেমন শহীদুল ইসলাম খোকন, গুলজার ভাই। তারা অনেক অ্যাপ্রিসিয়েট করছে। দে আর এডুকেডেট পিপল। প্রব্লেম হলো টেকনোলজি মুভ করাতে পারছি না।

দ্য স্টোরি অব সামারা কোন জেনরের মুভি?
দেবাশিষ বিশ্বাসও আমাকে এই প্রশ্ন করছে। আমি বললাম, আপনি কোন টাইপটা চান সেই টাইপ এখানে আছে। বাংলাদেশের মানুষ যা চাই তাই পাবে। স্টোরি অনুযায়ী আমি হরর, সায়েন্স ফিকশন, রোমান্টিক, কমেডি ও একশান দিয়েছি। এমন না যে জোর করে কিছু ঢুকিয়েছি। স্টোরি যতটা ডিমান্ড করছে ততটা দিয়েছি।

এই মুভি কি মানুষ নেবে?
জোর করে তো কিছু করছি না। তাদের ভালো লাগলে নেবে। এটা পৃথিবীর আটটা দেশে মুক্তি পাবে। সাবটাইটেল না, ডাবিং করা হবে ইংরেজিতে। আর চলচ্চিত্রের অনেকে হয়তো কাজটাকে এপ্রিসিয়েট করবে না। কিন্তু এটা নিয়ে ভাবি না। এখানে অনেক মানুষই আছে ভালো।

আপনার কোয়ালিটি এখানে সাপোর্ট করবে?
আমি বানাচ্ছি ফোর কে’র জন্য যা সাধারণত বিশাল হলে চলে। এখানে টু কে’র উপরে নাই। সমস্যা নাই। তারা ক্লিন জিনিসটা তো পাবে। ভালো সাউন্ডটা তো পাবে। তার চেয়ে বড় কথা বাংলাদেশের মানুষ হলিউডের মুভি দেখে কেন আনন্দ পায়? ঐ যে থিম, গল্প, মেকিং। এগুলো তো সে পাবে।

নতুনদের নিয়ে মূল্যায়ন কি?
বাংলাদেশের নতুনরাই চমৎকার সব ছবি তৈরি করবে। এই এফডিসি থেকেই তৈরি হবে। আমরা প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে আছি। প্রযুক্তির দিকে হাত বাড়াবে, অন্য দেশের মেকিং দেখলে তাদের মধ্যে অনেক চেঞ্জ হবে। এটা আস্তে আস্তে হয়ে যাবে।

সামারা মানে কি?
সামারা জাপানের একটা প্রিন্সেস। তার মা পরকীয়া করত। সামারা দেখে ফেলায় তাকে কুপের মধ্যে ফেলে মা মেরে ফেলে। পরে সে মা ও তার প্রেমিককে খুন করে প্রতিশোধ নেয়। এছাড়া সামারা শব্দটি সামার থেকে আসে, সামুরাই থেকেই আসে। আমার এখানে বেসিক্যালি সামারা একটা প্লানেট। এটা অন্য একটা গ্রহের গল্প আমার মেয়ের নামও সামারা। তার বয়স সাত। এ ছবিতে ও অভিনয় করছে। যার জন্য নামটা চেঞ্জ করে দিয়েছি প্রিন্সেস মাশিয়া।

জাপানে নির্মিত আপনার মুভিতে বাংলাদেশ কিভাবে আসে?
আমার প্রত্যেক কাজে কোন না কোনভাবে বাঙালিয়ানা নিয়ে এসেছি। আমার একটা ছবি আছে সেখানে নায়িকাকে শাড়ি পড়িয়েছে। কিছু না কিছু দিয়ে গেছি আরকি। বাঙালি হলে যা হয় ….

অনেক অনেক চমৎকার বিষয় জানলাম। ধন্যবাদ।
আপনাদেরও অনেক ধন্যবাদ।


মন্তব্য করুন