![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
ভরাট কণ্ঠের গায়ক সৈয়দ আব্দুল হাদী
সৈয়দ আব্দুল হাদী তখন ঢাকা ইডনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের ছাত্র, সেটা ১৯৬০ সালের কথা। ভার্সিটির একটি ফাংশনে তিনি গাইছিলেন কলকাতার বিখ্যাত গায়ক শ্যামল মিত্রের জনপ্রিয় গান ‘ভ্রমরা ফুলের বনে মধু নিতে’, চমৎকার ভরাট সেই কণ্ঠ শুনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুরকার করিম শাহাবুদ্দীন তখনই তাকে চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার প্রস্তাব দেন। সেটি ছিল একটি উর্দু ছবির গান।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/07/syed_abdul_hadi_bmdb_image-3.jpg?resize=851%2C567&ssl=1)
প্রস্তাব মতো সে বছরই হাদী সাহেবকে দিয়ে একটি একক গান রেকর্ড করান করিম শাহাবুদ্দীন, যা পরবর্তীতে ব্যবহৃত এসএম শফি পরিচালিত উর্দু ছবি ‘ইয়ে ভি এক কাহানি’তে। গান ১৯৬০ সালে রেকর্ড হলেও ছবি মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে।
প্রথম প্লেব্যাকের দুই বছর পর হাদী সাহেব ১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ ছবিতে ‘পয়সা ছাড়া দুনিয়ার মজা কিছুই মেলে না’ গানে কণ্ঠ দেন, তবে সেটা ছিল একটি কোরাস গান। অর্থাৎ, গানটিতে হাদী সাহেব ছাড়াও কয়েকজন সমবেত কণ্ঠ দেন। ১৯৬৫ সালে ‘একালের রূপকথা’ ছবিতে ‘এত যে কাছে পেয়েছি তোমায়’ শিরোনামের গানে দ্বৈতকণ্ঠ দেন ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে। পরের বছর পান চলচ্চিত্রের গানে সফলতার দেখা। ডা. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের কথা ও আলী হোসেনের সুরে ‘ডাকবাবু’ ছবির ‘চাতুরি জানে না মোর বধুয়া’ শিরোনামের চমৎকার গানটির মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। একই ছবিতে ‘ওগো তুমি দুরে থেকে’ শিরোনামে বিখ্যাত গায়িকা ফেরদৌসী রহমানের সঙ্গে ডুয়েট করেন।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/07/syed_abdul_hadi_bmdb_image-5.jpg?resize=1024%2C431&ssl=1)
উল্লেখ্য, ফেরদৌসী রহমানের সঙ্গে চলচ্চিত্রে এটিই তার একমাত্র ডুয়েট গান। মূলত ‘চাতুরি জানে না’ গানটির তূমুল জনপ্রিয়তার পর হাদী সাহেবকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরবর্তীতে শুধুই উত্তরণের গল্প, তবে এর মাঝেই বেতারেও কণ্ঠ দেওয়া হয়ে গেছে তার।
বেতারে প্রথম গানটি ছিল ১৯৬৪ সালে আবদুল আহাদের সুরে চমৎকার রোমান্টিক কথার ‘কিছু বলো, এই নির্জন প্রহরের কণাগুলো হৃদয়মাধুরী দিয়ে ভরে তোলো’।
সৈয়দ আব্দুল হাদীর জন্ম ১৯৪০ সালের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার শাহপুর গ্রামে। বাবা সৈয়দ আব্দুল হাইয়ের সরকারি চাকরির সুবাদে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আগরতলা, সিলেট ও কলকাতা-সহ আরও কিছু জায়গায়। তবে তার কলেজ জীবন কাটে রংপুর ও ঢাকাতে, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং বাংলায় স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর বেশ কিছুদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। এ ছাড়া লন্ডনে ওয়েলস ইউনিভার্সিটিতে প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান হিসেবেও কাজ করেছেন।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/07/syed_abdul_hadi_bmdb_image-1.jpg?resize=857%2C490&ssl=1)
হাদীর সংগীতের প্রতি আগ্রহ জন্মায় কৈশোরে বাবা আব্দুল হাইয়ের গ্রামোফোনে গান শুনে শুনে। বাবা ছিলেন সংস্কৃতিমনা, নিজে প্রচুর গান শুনতেন ও গান গাইতেন। বাবার গান ও গ্রামোফোন শুনে শুনেই হাদী গানের প্রতি অনুরাগী হয়ে উঠেন। এক সময় গুনগুন করে গানও তোলেন কণ্ঠে, ভরাট গলায় সে সব গানের আবেদন তখনই মুগ্ধতা ছড়ায়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে সুবল দাস, আবদুল আহাদ, আবদুল লতিফ, পিসি কারদারের মতো সংগীতজ্ঞরা তাকে গান শেখার ক্ষেত্রে সহায়তা ও উৎসাহ জোগান। মূলত এভাবেই চলছিল হাদীর সঙ্গীতের চর্চা। এক সময় সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা ও অক্লান্ত পরিশ্রম তাকে বাংলা গানে খ্যাতির শীর্ষে পৌছে দিয়েছিল।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/07/syed_abdul_hadi_bmdb_image-2.jpg?resize=857%2C490&ssl=1)
চলচ্চিত্র ও বেতারে গান করার পাশাপাশি সৈয়দ আব্দুল হাদী একটি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক ও গীতিকার হিসেবে কাজও করেছিলেন, যা অনেকেরই কাছে অজানা। গুণী সুরকার সুবল দাসের অনুপ্রেরণায় ‘ফেরারী’ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেন, ‘তানসেন’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্রে গানও লিখেছিলেন তিনি।
চলচ্চিত্রের গানে অসামান্য অবদান স্বরূপ সৈয়দ আব্দুল হাদী একবার হ্যাটট্রিকসহ মোট পাঁচবার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন— গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), সুন্দরী (১৯৭৯), কসাই (১৯৮০), গরীবের বউ (১৯৯০) ও ক্ষমা (১৯৯২)। এ ছাড়া বাচসাসসহ অনেক পুরস্কারে সন্মানিত হন। ২০০০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন এ জীবন্ত কিংবদন্তি।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2021/07/syed_abdul_hadi_bmdb_image-4.jpg?resize=855%2C518&ssl=1)
আব্দুল হাদী ভরাট দরাজ কণ্ঠে অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে মূগ্ধতা ছড়িয়েছেন, রাঙিয়েছেন কোটি শ্রোতার মন। উল্লেখযোগ্য কিছু গান— একবার যদি কেউ ভালোবাসতো, চোখ্যের নজর এমনি কইরা, জন্ম থেকে জ্বলছি, একবার যদি কেউ ভালোবাসতো, যেও না সাথী চলেছো একেলা কোথায়, চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে, আছেন আমার মোক্তার, তুমি ছাড়া আমি একা, কী করে বলিব আমি, এমনও তো প্রেম হয়, সতী মায়ের সতী কন্যা, চোখ বুঝিলে দুনিয়া আন্ধার, রাতের কোলে মাথা রাইখ্যা, ভালোবাসা চাই আমার কাছে তাই, এই পৃথিবীর পান্থশালায়, যে দিকেই তুমি দেখবে দুচোখে, কত কাঁদলাম কতগো সাধলাম, ভালোবাসা ছিল ভালোবাসা আছে, ভালোবাসা যুগে যুগে, চিনেছি তোমারে আকারে প্রকারে, সুন্দর সন্ধ্যায় এ গান দিলাম উপহার, গাছের একটা পাতা ঝরলে, হাঁটু জলে নেমে কন্যা, কথা বলবো না বলেছি, সুখে দুঃখে জনম জনম, তুমি আছো বলে আমি, তুমি আমাকে ভালোবাসো, তুমি ছাড়া আমি একা, তুমি যদি সুখী হও, তোমরা কাউকে বলো না, আমি তোমারই প্রেম ভিখারি, সালাম সালাম সালাম সাথী, কে জানে কত দূরে সুখের ঠিকানা, তোমাদের সুখের নীড়ে, আমি কারে দিবো শাড়ি, তেল গেলে ফুরাইয়া, ভালোবাসি বলিব না আর এবং মনে প্রেমের বাত্তি জ্বলে।