Select Page

‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ : ব্যবসাসফল ও পুরস্কৃত সিনেমা

‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ : ব্যবসাসফল ও পুরস্কৃত সিনেমা

ধনাঢ্য পরিবারের ছোট সন্তান সূর্য ছোটবেলা থেকেই বেশ দয়ালু। তাদেরই বাড়িতে আশ্রিতা আলো, যার মা তাদের পরিবারে পরিচারিকা হয়ে কাজ করার সময় মেঝ সন্তান তূর্যের হাতে খুন হন। সেই থেকে আলোকে আলাদা দৃষ্টিতে দেখেন সূর্য। তবে সূর্য ভালোবাসেন অজান্তাকে।

আলোকে আলাদা দৃষ্টিতে দেখাটা স্বাভাবিকভাবে দেখে না সূর্যের পরিবার, অপমানিত হয় সূর্য ও আলো। দায়িত্ব গ্রহণ করতে গিয়ে আলোকে বিয়ে করে ফেলেন সূর্য। দুইজনেই আলাদা সংসার পাতেন, হঠাৎ তুর্য এসে আলোকে মেরে রক্তাক্ত করে ফেলে যান, বদলে যায় সূর্য। একে একে প্রতিশোধ নিতে থাকেন, সব ভুলে অজান্তাও তাকে সাপোর্ট দেন এই ব্যাপারে। অজান্তারও আলোর প্রতি ঘৃণা নেই, তাদের দুইজনকে মিল করিয়ে দেয়াটায় যেন তার লক্ষ্য, কিন্তু কেন!

এই গল্প জাকির হোসেন রাজুর ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’র। ছবিটি ছিল বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা, পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৭টি জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে। এটি শাকিব-অপু জুটির অন্যতম সেরা সিনেমা বিবেচিত।

সূর্য চরিত্রে অভিনয় করেন শাকিব খান। তিনি এই ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে প্রথমবারের মত জাতীয় পুরস্কার থেকে প্রায় উল্লেখযোগ্য সব পুরস্কারই পান,অভিনয় তিনি ভালোই করেছেন,তবে সমস্যা হলো তার পোশাক- সাজসজ্জা নিয়ে, চরিত্রানুযায়ী মানানসই ছিল না। অবশ্য তখন প্রায় সব ছবিতেই তার এই সমস্যা প্রকট ছিল, অঙ্গভঙ্গিতেও সমস্যা তো আছেই।

অপু বিশ্বাস ও অন্যান্য ছবি থেকে ভালো করার চেষ্টা করেছেন। তবে তার সবচেয়ে দূর্বলতা হচ্ছে নিজে ডাবিং না করা, যার কারণে ম্লান থেকে যান। এই ছবির বড় সারপ্রাইজ হচ্ছেন রোমানা, বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে রোমানাকে ব্যক্তিগতভাবে ভালো না লাগকেও এই ছবিতে ভালো করেছেন,সুযোগ পেয়েছিলেন নিজেকে প্রমাণ করার। সেটাতে সফল বলা যায়, সহ-অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন।

কাজী হায়াৎ বরাবরই উচ্চ অভিনয়, খালেদা আক্তার কল্পনা ও আনজুমান্দ আর বকুল চলনসই।

সংলাপ ঠিকঠাক, রাজুর এই বিভাগে পুরস্কার প্রাপ্তি উপযুক্ত।বাণিজ্যিক ছবি হিসেবে কাহিনী মন্দ না ভালোই, যদিও আরো কিছুটা মনোযোগ দেয়া যেত, তবে সেরা কাহিনীকারের পুরস্কারটা না দিলেও পারতো জুরি বোর্ড।

গানগুলো শ্রুতিমধুর, অনেক আগে রেডিওতে প্রচার হওয়া শাম্মী আখতারের কন্ঠে ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ গানটি এই ছবিতে ব্যবহৃত হয়। শাম্মী আখতারের একমাত্র জাতীয় পুরস্কার এই ছবি দিয়েই,এছাড়া এস আই টুটুল, শেখ সাদী খানও পুরস্কার পেয়েছিলেন। নির্মাতা রাজু সাহেব সম্ভবত নিজেও ভাবেননি এতগুলো জাতীয় পুরস্কার পেয়ে যাবে ছবিটি।

এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শাকিব বেশি পারিশ্রমিক হাঁকিয়েছেন, অপু বিশ্বাসও তখন বেশ পারিশ্রমিক নিতেন, গানের শুটিং থাইল্যান্ডে করা হয়েছিল। অথচ পুরো ছবিতে বাজেট সমস্যা প্রবল, নির্মাণের দিক দিয়ে রাজু সাহেব পিছিয়ে গেছেন। এই ছবির অন্যতম অসঙ্গতি হচ্ছেন মিশা সওদাগর। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও, অথচ তার কোনো পরিবর্তন নেই, বড় ছেলেরও সাজসজ্জা দেখে বুঝার উপায় নেই সে এই পরিবারের ছেলে। নায়িকা অপুকে যদি নির্মাতার বাঁচানোরই উদ্দেশ্য থাকতো, তাহলে মিশা সওদাগরের হাতে অত রক্তাক্ত না করলেও পারতেন। চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা এইগুলো আলাদা মাত্রা আনেনি, তবে ছবিটা ঝুলে যায় নি, সম্পাদক তৌহিদ চৌধুরী ভালো না করলেও চেষ্টা করেছেন।

২০১০ সালের ১৪ মে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি সোমবার ৮ বছর পূর্ণ করেছে।


মন্তব্য করুন