Select Page

এই পাঁচটি সিনেমা মাকে নিয়ে

এই পাঁচটি সিনেমা মাকে নিয়ে

‘মা’ পৃথিবীর মধুরতম এক শব্দ। মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে রচিত হয়েছে কবিতা গল্প, উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্রও।

মা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো বেশ সাড়াও ফেলেছে নানান সময়ে। বাঙালী মনে মাকে রাখা হয় শীর্ষস্থানে, তাই বাংলা চলচ্চিত্রেও মাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রচুর চলচ্চিত্র,যদিও বাণিজ্যিক ধারার বেশিরভাগ ছবিতেই মা চরিত্রকে কিছুটা গড়পড়তাভাবে উপস্থাপন করা হত। এর মাঝেও কিছু ‘মা’ কেন্দ্রিক সিনেমা দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে,তেমনি আজ ‘মা’ দিবসে অন্যতম সেরা পাঁচটি সিনেমা নিয়ে এই আয়োজন:

শুভদা (১৯৮৬): মদ্যপ হারানের বউ শুভদা, সংসারে রয়েছে দুটি মেয়ে আর অসুস্থ পুত্র সন্তান, এর মাঝে বড় মেয়ে ললনা বিধবা।সংসারের দিকে সেভাবে খেয়াল রাখে না হারান, সব দু:খ কষ্ট ভুলে দায়িত্ব পালন করতে হয় শুভদাকেই। স্নেহময়ী বলেই পাশের বাড়ির সদানন্দ মাতৃরুপে দেখেন।একদিন বড় মেয়ে হারিয়ে যায়, পুত্র মাধব মারা যায়। শুভদা কি এত শোক সইতে পারবে? অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘শুভদা’। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন আনোয়ারা, এছাড়া ছিলেন রাজ্জাক, গোলাম মুস্তফা, জিনাতসহ অনেকে।ছবিটি রেকর্ডসংখ্যক ১৩টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে।

মরণের পরে (১৯৯০): সাগর ও সাথী ভালোবেসে বিয়ে করেন, সঙ্গে রয়েছে ৬ টি সন্তান।মধ্যবিত্তের সংসারে বেশ ভালোই কাটছিল তাদের।হঠাৎ ই আসে দুর্যোগ, এক দুর্ঘটনায় হাত হারান সাগর, অন্যদিকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন সাথী।দুজনেই সিদ্ধান্ত নেন সন্তানদের দত্তক দেবার, একে একে সব সন্তানরা তাদের নতুন বাবা-মায়ের কাছে চলে যায়। সন্তানদের সাথে বিচ্ছেদের কষ্টে মাতৃমন সাথী মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকে, স্বপ্নে দেখে সন্তানেরা আবার তার কাছে ফিরে এসেছে। এমনই হৃদয়গ্রাহী গল্প নিয়ে আজহারুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘মরণের পরে’। মূল ভূমিকায় শাবানার অভিনয় দর্শকদের আজো চোখে জল আনে, যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন আলমগীর। দুজনেই অনবদ্য অভিনয়ে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন।

হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৭): কিশোরী বয়সেই কিছুটা বয়স্ক স্বামীর সঙ্গে বিয়ে হয় বুড়ীর, স্বামীর আগের সংসারে রয়েছে দুটি সন্তান, নিজের গর্ভেও আসে সন্তান, তবে সে বাক প্রতিবন্ধী। স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর দুঃখ ভুলে সব সন্তানকেই তিনি মাতৃস্নেহে বড় করেন। একদিন শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, বড় ছেলে যুদ্ধে যায়, আরেক সন্তানকে চোখের সামনে পাকিস্তানিরা মেরে ফেলে। একদিন দুই মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচানোর জন্য নিজের প্রতিবন্ধী সন্তানকে তুলে দেন মিলিটারিদের হাতে। এই যেন এক মায়ের বীরত্ব গাঁথা। সেলিনা হোসেনের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে চাষী নজরুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’। প্রধান ভূমিকায় সুচরিতার অভিনয় ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অভিনয়, অর্জন করেন নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

আম্মাজান (১৯৯৯): ‘মা’ কেন্দ্রিক সিনেমাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র কাজী হায়াতের ছবি ‘আম্মাজান’। নিজের সম্রমহানির পর মা হতবিহবল হয়ে যান, ছেলে বাদশা এই কষ্ট সইতে পারেন না। মাকে সে নানা উপায়ে সুখী করতে চায়, একদিন মায়ের আবদারে বিয়ে করতে চায়, তারপর ঘটতে থাকে নানা ঘটনা, জড়িয়ে পড়েন বিবাদে। এই ছবিতে একজন মাতৃপাগল সন্তানের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। নাম ভূমিকায় ছিলেন শবনম, আর সন্তান চরিত্রে প্রয়াত নায়ক মান্নার অভিনয় ছিল তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সম্পদ। দর্শকদের কাছে তিনি অন্তত এই ছবির জন্য অমর হয়ে থাকবেন। আইয়ুব বাচ্চুর কন্ঠে ‘আম্মাজান’ গানটি এখনো বেশ জনপ্রিয়, জাতীয় পুরস্কারও পায় ছবিটি।

মাতৃত্ব (২০০৪): স্বামী চোর, সংসারে সে উদাসীন। স্ত্রী সখিনা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। স্বামীর অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে সন্তানসম্ভবা হয়। সে স্বপ্ন দেখতে থাকে, পরম স্নেহে সন্তান পালনের। ভবিষ্যতের চিন্তায় সে অর্থ জমাতে থাকে, সেই অর্থে চোখ পড়ে স্বামীর। একদিন সেই টাকা জোর নিয়ে যায় চোর স্বামী, সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পেটে লাথি পাড়ে, তারপর! এই কাহিনী নিয়েই ২০০৪ সালে জাহিদ হোসেন নির্মাণ করেন ‘মাতৃত্ব’। মৌসুমীর ক্যারিয়ারে এটি অন্যতম সেরা ছবি, পাশাপাশি স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন হুমায়ূন ফরিদী।


মন্তব্য করুন