Select Page

মিজু আহমেদ বৃত্তান্ত

মিজু আহমেদ বৃত্তান্ত

অভিনেতা মিজু আহমেদ বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে অন্যতম প্রধান নাম। বাণিজ্যিক ছবিতে দীর্ঘ সময়ের ক্যারিয়ারে স্মরণীয় হয়েছেন।

জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৭ নভেম্বর, কুষ্টিয়ার কোটপাড়ায়। ৫ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। কুষ্টিয়ায় মঞ্চনাটক করতেন। কুষ্টিয়ার কলেজেই স্নাতক শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোলে ভর্তি হন স্নাতকোত্তরে। পরীক্ষা দেয়ার আগেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন প্রথমবার ১৯৭৮ সালে।

মিজু আহমেদের মূলনাম মিজানুর আহমেদ। কুষ্টিয়ার নাট্যদলে যোগ দেবার পর সেখানে সবার পরামর্শে নাম ছোট করে ‘মিজু আহমেদ’ করা হয়।

প্রথম ছবি নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘তৃষ্ণা’ ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায়। এ ছবিতে সহকারী খলনায়ক ছিলেন। কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দাঙ্গা’ ছবিকেই তিনি তাঁর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ভাবেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে চরিত্রের চিত্রণে তিনি সবচেয়ে তৃপ্তি পেয়েছিলেন কাজী হায়াতেরই ‘চাঁদাবাজ’ ছবিতে।

প্রযোজক ছিলেন ‘ফ্রেন্ডস মুভিজ’-এর ব্যানারে। অভিনেতা রাজিবের সাথে মিলে প্রযোজনা করেছিলেন এবং রাজিবের মৃত্যুর পরে আর প্রযোজনা করেননি। তাঁর প্রযোজিত ছবি – মহৎ, চালবাজ, আসামী গ্রেফতার, অন্ধ ভালোবাসা, নাটের গুরু, জ্বলন্ত বিস্ফোরণ।

সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন মান্না-র ছবিতে। মান্নার সাথে রাজনৈতিক ছবিগুলোতে তাঁর রসায়ন ভালো জমত।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ২ বার :
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা – ত্রাস (১৯৯২)
শ্রেষ্ঠ খলনায়ক – ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না (২০১০)

উল্লেখযোগ্য ছবি : তৃষ্ণা, নদের চাঁদ, মাসুম, নাগিন, বোনের মতো বোন, ঈদ মোবারক, সত্য-মিথ্যা, ত্রাস, দাঙ্গা, চাঁদাবাজ, চালবাজ, হাঙর নদী গ্রেনেড, ঘায়েল, স্ত্রীর পাওনা, চাকর, পিতা মাতা সন্তান, ত্যাগ, খলনায়ক, বশিরা, আজকের সন্ত্রাসী, ভয়ঙ্কর সাতদিন, ধাওয়া, কুলি, যোদ্ধা, বিদ্রোহী সন্তান, বিদ্রোহ চারিদিকে, লাঠি, লাল বাদশা, গুণ্ডা নাম্বর ওয়ান, সাবধান, ভাইয়া, আরমান, কষ্ট, বাবার জন্য যুদ্ধ, ঠাণ্ডা মাথার খুনি, লাল দরিয়া, আজকের সমাজ, কারাগার, ইতিহাস, ওরা আমাকে ভালো হতে দিলো না, কে আপন কে পর, নাটের গুরু, ভালোবাসার রং।
শেষ ছবি – পাষাণ।

খল অভিনেতা হয়ে নাম করেছেন নিজস্বতা রেখে। তাঁর অভিনয়ের নিজস্ব স্টাইল ছিল। চোখ বড় করে ভয়ঙ্কর পরিবেশ তৈরি করতে পারতেন। চরিত্র ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে নাম করেছেন সরকারি মন্ত্রী বা আমলার ভূমিকায়। যেমন – দাঙ্গা, ত্রাস, ধাওয়া ইত্যাদি। নায়ক-খলনায়ক ইমেজ বা রসায়নে যে বিষয়টি প্রায়ই আলোচিত হয় এর বিপরীতে খলনায়ক-খলনায়ক রসায়নও তৈরি হয়েছিল। মিজু আহমেদ-ডিপজল জুটি এ ধরনের রসায়ন তৈরি করেছিল। ডিপজল অপকর্ম করত আর নেতা মিজু আহমেদ তাকে শেল্টার দিত। মিজু আহমেদের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংলাপ ছিল ‘শালীর ছাওয়াল’ এবং ‘সব ল্যাটাপ্যাটা হয়া গেল।’ এছাড়া ‘ওয়াং চিং পং’ ও আছে। যদিও শুনতে ভালো লাগে না তারপরেও একটা সময় মানুষের মুখে মুখে ছিল জনপ্রিয় এ সংলাপগুলো। অশ্লীল ছবিতে অভিনয়ের জন্যও তিনি সমালোচিত।

মিজু আহমেদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অনবদ্য অভিনয়ের একটি ছবি হচ্ছে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘হাঙর নদী গ্রেনেড।’ এ ছবিতে পাকিস্তানি হানাদারের চরিত্রে তিনি ভয়ঙ্কর ছিলেন। ছবিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জিপে করে পাক হানাদার বাহিনীর দল নিয়ে হলদি গ্রামে ঢুকতে দেখা যায় তাঁকে। মুক্তিযোদ্ধা সলিম, কলিমকে খুঁজতে তাদের বাড়িতে যায়। তাঁর মুখে উর্দু ভাষাও ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। এ চরিত্রটি উল্লেখযোগ্য ছিল।

কয়েকটি ছবিতে পজেটিভ রোলেও ছিলেন। যেমন – বিদ্রোহী সন্তান, ঠাণ্ডা মাথার খুনি, দুশমন দরদী।

২০১৭ সালের ২৭ মার্চ তিনি ‘মানুষ কেন অমানুষ’ ছবির স্যুটিং-এ ট্রেনে করে দিনাজপুরে যাবার সময় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।

মিজু আহমেদ নামটি নিজস্বতা রেখেই আলোচিত হবে দেশীয় চলচ্চিত্রে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।


মন্তব্য করুন