Select Page

মিলুর গানগুলো

মিলুর গানগুলো

জীবনের যত আনন্দময় দিন, রেখে যেতে চাই আগামীদের জন্য…

২০০৪ সাল, এপ্রিল মাসের ‘ইত্যাদি’তে একেবারে শেষে হানিফ সংকেত জানালেন মন খারাপ করা খবর। দেশের অন্যতম শীর্ষ গায়ক মারণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত, দেখানো হয়েছিল উনার দুরবস্থা। আগের সেই তেজোদীপ্ত ভাব তো নেই, একেবারেই শুকিয়ে গেছেন। আর্থিক অসুবিধার জন্য সুচিকিৎসা পাননি, সেই বছরেই নভেম্বরে ঈদের ‘ইত্যাদি’তে বড় ছেলেকে নিয়ে গান করেছিলেন। এটাই ছিল উনার সর্বশেষ গান। তার মাত্র কয়েক মাস পরেই তিনি পৃথিবীকে বিদায় জানালেন। গানের জগত হারালো এক নক্ষত্রকে আর শ্রোতারা হারালেন তার প্রিয় গায়ককে, রেখে গেছেন মুগ্ধ করা সব গান। তিনি অকাল প্রয়াত খালিদ হাসান মিলু

সজনী,আমি তো তোমায় ভুলিনি…

আশির দশকে খালিদ হাসান মিলুর উত্থান, নব্বইতে এসে হয়ে উঠেন শীর্ষদের একজন। সিনেমার গানে তিনি হয়ে উঠেন অতুলনীয়। ‘দিল’ সিনেমার ‘আমি পাগল প্রেম পাগল’ থেকে ‘মৌসুমী’র সেই চিরকালের আধুনিক গান ‘সেই মেয়েটি আমাকে ভালোবাসে কিনা’। বাড়তে থাকে প্লেব্যাকের ব্যস্ততা, মাত্র কয়েক বছরেই তিনি গেয়েছেন অজস্র গান, যার অনেকগুলোই পেয়েছে জনপ্রিয়তা। শুধু প্লেব্যাকে নয়, অ্যালব্যামেও ছিল উনার শ্রোতাপ্রিয়তা।  ‘সজনী’ গানটাও তেমনি, তালিকায় আছে আরও অনেক গান। পল্লীগীতি গেয়েছেন, ‘ইত্যাদি’তে দুই সহকর্মী এন্ড্রু কিশোর ও কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে গেয়েছিলেন দেশাত্মবোধক গান ‘মাঠের সবুজ থেকে সূর্যের লাল, বাংলাদেশের বুক এতই বিশাল’।

যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে জীবনে অমর হয়ে রয়….

খালিদ হাসান মিলুর অন্যতম আলোচিত গান এটি, পরে উনার বড় ছেলে প্রতীক হাসান নিজেও অনেকবার গেয়েছেন। কনকচাঁপার সঙ্গে উনার গড়ে উঠেছিল বিশেষ জুটি। কখনো ‘সাথী তুমি আমার জীবনে’ কখনো ‘অনেক সাধনার পরে পেলাম তোমার জীবন’। আর নির্মল প্রেমের গান ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’ গানটি তো রইলো। আবার ‘আচ্ছালামু আলাইকুম বেয়াইন সাব’-এর মতো চটুল গান করতেও দ্বিধা করেননি। বলা ভালো এটিও সুপারহিট গান। খুব সম্ভবত ‘কোন কাননের ফুল গো তুমি’ প্লেব্যাকে সর্বশেষ গান, সহশিল্পী কনকচাঁপা।

প্রেম কখনো মধুর, কখনো সে বেদনা বিধুর…

প্রতিদ্বন্দ্বী গায়ক এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে দ্বৈতভাবে গেয়েছিলেন গানটা। এন্ড্রু কিশোর আজ পৃথিবীতে নেই, চলে গেছেন এর গীতিকার ও সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। যার সঙ্গে মিলুর ছিল দারুণ রসায়ন। আলাউদ্দিন আলীর সুরেও অনেক জনপ্রিয় গান আছে। শুরুর দিকে চিত্রনায়ক নাঈমের গানে বেশি দেখা গেলেও পরবর্তীতে সালমান শাহ ও রিয়াজ দুইজনের গলাতেই দারুণভাবে মানিয়ে যেতেন।

আমার মত এত সুখী, নয়তো কারো জীবন…

মোহাম্মদ রফিকুজ্জানের কথায় এই গান শুনে কেউ অশ্রুসজল হয়নি, বোধহয় পাওয়া যাবে না। সিনেমার গল্পের সঙ্গে এই গানে মিলুর দরদী কণ্ঠ সবার হৃদয় ছুঁয়েগিয়েছিল। অথচ এই গানে উনাকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়নি, এর আগেও বঞ্চিত হয়েছিলেন বেশ কিছু ভালো ভালো গানের জন্য। যদিও ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ সিনেমার গানের জন্য ১৯৯৪ সালে সেরা গায়কের জাতীয় স্বীকৃতি পান। পুরস্কার বলতে এইটাই, মৃত্যুর এতকাল পেরিয়ে গেলেও আজো পাননি একুশে পদক।

জীবনে বসন্ত এসেছে, ফুলে ফুলে ভরে গেছে মন…

গানের মতো উনার জীবনে আর বসন্ত আসেনি, এইরকম বসন্তেই তিনি জীবনকে চিরবিদায় জানান। তবে গানের কন্ঠে তিনি সব সময় শ্রোতাদের প্রিয় হয়ে থাকবেন। উনার দুই পুত্র প্রতীক হাসান ও প্রীতম হাসান এখন সংগীত জগতে প্রতিষ্ঠিত। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন