Select Page

মুক্তিযুদ্ধের ফর্মুলা ছবি ‘রক্তাক্ত বাংলা’

মুক্তিযুদ্ধের ফর্মুলা ছবি ‘রক্তাক্ত বাংলা’

স্বাধীনতার ঠিক এক বছর পরে মুক্তি পাওয়া ‘রক্তাক্ত বাংলা’ ছবির কথা মনে আছে অনেকের। পঞ্চাশতম বছরে বিজয়ের সব আয়োজনের মাঝেও রক্তাক্ত বাংলার সেই রক্তক্ষরণের স্নাণশব্দ যেন আজও ভেসে আসে।

১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল মমতাজ আলী পরিচালিত ‘রক্তাক্ত বাংলা’। দেশ বিদেশে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করা তথ্যচিত্রের ব্যবহার, ট্যাংক, কামান আর যুদ্ধ বিমানের দৃশ্য আর বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা এবং গায়কদের গানে সমৃদ্ধ রক্তাক্ত বাংলা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী এক ছবি হয়েই টিকে আছে।

রক্তাক্ত বাংলা ‘ফর্মুলা ছবির’ ছক অনুসারেই নির্মিত। ছবির শুরুটা শাহেদ ও হাসি এই দুই ভাই বোনের সুখের সংসারকে ঘিরে। শাহেদ একজন ভাস্কর। বাসার একটি রুমে তার স্টুডিও যেখানে তার বানানো বহু ভাস্কর্য সাজানো থাকে। একদিন হাসির পরিচিত সন্ধ্যা নামের এক তরুণী হাসিদের বাসায় এসে শাহেদের স্টুডিওতে ঢোকে এবং অসাবধানতায় একটা ছোট্ট ভাস্কর্য ভেঙে যায়। শাহেদ সন্ধ্যাকে বেশ বকে দেয়। এরপর আসে সেই ভয়াল ২৫ মার্চ। পাকিস্তানি হায়েনারা হামলে পড়ে,হাসিকে মেরে ফেলে,তছনছ করে শাহেদের স্টুডিও। শাহেদ ফিরে এসে সব দেখে নিজের জেদটা সাহসে রূপান্তর করে চলে যায় মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তার সাথে দেখা হয় মেজর মাসুদের, জানতে পারে তার বোনের নাম সন্ধ্যা। সন্ধ্যাকে পাকিস্তানি সেনারা ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করার কারণে সে মানসিকভাবে ভেঙে পরেছিল। শাহেদ তার সামনে ভাস্কর্য বানায় যেটা দেখে সন্ধ্যা ভাবে এই মেয়ের সাথে হয়তো শাহেদের সম্পর্ক ছিল। পরে শাহেদ জানায় তার বোন হাসির মুখের আদলে বানানো এই ভাস্কর্য। নিজেকে অপবিত্র ভেবে আত্মহত্যা করতে যায় সন্ধ্যা। মাসুদ ও শাহেদ তাকে বাঁচায়।

ফর্মূলা ফিল্মের সব ছক মেনে করা এই ছবিতে পাকিস্তানি সেনাদের মনোরঞ্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া নারীর নাচ ও গান আছে।তাদের নাচ ও গানের এই দুর্বলতার মাঝেই আক্রমণ চালায় শাহেদ ও মুক্তিযোদ্ধা জয়নালের দল এবং পরাজিত করে খান সেনাদের। তাদের আত্মসমর্পনের দৃশ্য, যুদ্ধ বিমানের এবং কিছু পাকিস্তানি সেনাকে বহন করা ট্রেন ধ্বংস করার দৃশ্য যেমন আছে তেমনি এই ছবিতে আছে ধর্ষণের দৃশ্য।

দাদাভাই মূর্তি বানাও গানে বিশ্বজিৎ ও সুলতানা

এই ছবিতে শাহেদের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেতা বিশ্বজিৎ এবং নির্যাতিত নারী সন্ধ্যার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন কবরী। শাহেদের বোন হাসির চরিত্রে অভিনয করেছিলেন সুলতানা এবং মেজর মাসুদের চরিত্রে গোলাম মোস্তাফা। বিটিভির খবর পাঠক সরকার কবিরউদ্দীন, খলিল এবং মঞ্জু দত্তও এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ছবির পরিচালক ছিলেন মমতাজ আলী এবং সংগীত পরিচালক ছিলেন সলিল চৌধুরী। সলিল চৌধুরীর সাথে সহযোগিতায় ছিলেন আলাউদ্দীন আলী ও তার অর্কেস্ট দল। প্লেব্যাক সিঙ্গার ছিলেন লতা মুঙ্গেশকর, মান্না দে এবং সবিতা চৌধুরী। এই তিনজন হাতেগোনা কয়েকটি বাংলাদেশি ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন মাত্র। ছবির কাহিনী লিখেছিলেন রত্না চ্যাটার্জি এবং চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছিলেন শান্তি চ্যাটার্জি।

দিন যায় ছবি থাকে। সম্ভবত তারচেয়ে বেশি থাকে বাংলা ছবির গান। এই ছবির ‘দাদাভাই মূর্তি বানাও..মন বানাতে পারো কী’ গানটা আজও সমান জনপ্রিয়। স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বছরে উনপঞ্চাশ বছর আগে মুক্তি পাওয়া ‘রক্তাক্ত বাংলা’র কথা লিখলাম। পঞ্চাশতম বছরে বিজয়ের সব আয়োজনের মাঝেও রক্তাক্ত বাংলার সেই রক্তক্ষরণের স্নাণশব্দ যেন আজও ভেসে আসে।

লোডিং জোন ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ, পান্থপথ


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আহসান কবির

অভিনেতা ও লেখক

মন্তব্য করুন