Select Page

মুক্তির কথা

মুক্তির কথা

‘তুমি আমার চাঁদ আমি চাঁদেরই আলো
যুগে যুগে আমি তোমায় বাসব ভালো’…♥♪

নব্বই দশকে বড় হওয়া প্রজন্ম এ গান শোনেনি এমনটা হতেই পারে না। ‘চাঁদের আলো’ ছবির জনপ্রিয় এ গানের নায়িকা ছিল মুক্তি

মুক্তি কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা-র মেয়ে। মূলনাম রুমানা ইসলাম মুক্তি। ভালো অভিনেত্রী। মায়ের লুকের কিছুটা সে পেয়েছে। শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেছে একসময়। টিভি বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েও কাজ করেছে এবং নাটকেও অভিনয় করেছে।

১৯৯২ সালে নায়িকা হিসেবে তার প্রথম সুপারহিট ছবি ‘চাঁদের আলো’ মুক্তি পায়। নায়ক ছিল ওমর সানী। মুক্তির লুক তখন নায়িকাদের মতোই ছিল। অভিনয়ে একটা বাচ্চা বাচ্চা ব্যাপার থাকলেও দেখতে খারাপ লাগত না। ছবিতে ‘তুমি আমার চাঁদ’ গানটির আগে ওমর সানীকে পেটায় মুক্তি তখন সে জানত না তার ছোটবেলার বন্ধু চাঁদ সে-ই। কথোপকথনের মাধ্যমে সানীর পরিচয় বের হয় তখন মুক্তিও সানীকে বলে তাকে আঘাত করার জন্য। গানটা শুরু হবার আগে মুক্তির গালে চুমু দেয় সানী। শুটিং-এ এই চুমু দেয়া নিয়ে কান্না শুরু করে মুক্তি। বলতে থাকে পরিচালককে কেন তাকে চুমু দিল তখন পরিচালক বলে ছবিতে এমন হয় তারপর সে শান্ত হয়। এর পরের বছর ১৯৯৩ সালে গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মানদীর মাঝি’-তে সুযোগ পায় মুক্তি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত এ উপন্যাসের ‘গোপী’ চরিত্রে কুবের-মালা বা আসাদ-চম্পার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করে মুক্তি। সরিষার তেল গায়ে মেখে রোদে বসিয়ে রাখা হত তাকে গায়ের রং যাতে কালো হয়। রং পরিবর্তন হলে তারপর ক্যামেরার সামনে নেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। এই ডেডিকেশনের কারণেই তার অভিনয়ও ভালো ছিল ছবিটিতে।

মুক্তির প্রথম ছবি ‘চাঁদের আলো’। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবি : লড়াই, আমার ভালোবাসা, শ্রাবণ মেঘের দিন, হাসন রাজা, জগত সংসার, পিতামাতার আমানত, তুমি আমার স্বামী, দারোয়ানের ছেলে, বড়লোকের মেয়ে গরিবের ছেলে, রিকশাওয়ালার ছেলে। মুক্তি পায়নি – এদেশ তোমার আমার, লীলা মন্থন।

প্রথম ছবির পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম মুক্তির বাবার কাছে মুক্তিকে চেয়ে নেয়। মা আনোয়ারা পরামর্শ দিতেন কিভাবে চলতে হবে, বড়দের সম্মান করা, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ানো, কম কথা বলা, সময়মতো শুটিং-এ যাওয়া এসব শেখাতেন এবং মুক্তিও সেগুলো শুনত।

‘চাঁদের আলো’ ছবিতে ‘তুমি আমার চাঁদ’ গানটি হ্যাভোক পপুলারিটি পেয়েছিল। এর পাশাপাশি ঐ ছবির ‘প্রেমের নামে মিথ্যে বোলো না’ গানটিও জনপ্রিয় ছিল। এ গানটি রেডিওতে ‘অনুরোধের আসর গানের ডালি’ অনুষ্ঠানে অনেক বাজানো হত। প্রথমদিকের একটি ছবি ছিল ‘আমার ভালোবাসা।’ সুদর্শন নায়ক সোহেল চৌধুরীর বিপরীতে ছিল। ছবিটি বেশ রোমান্টিক ছিল। মুক্তি তখন দেখতে খুবই কিউট ছিল। এ ছবির ‘আমি তুমি ছাড়া কখনো ভাবতে পারি না’ গানটিও জনপ্রিয় ছিল। নাঈমের বিপরীতে ছিল ‘লড়াই’ ছবিতে।

মুক্তির ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ দেখেনি এমন দর্শক কমই পাওয়া যাবে। অসাধারণ অভিনয় করেছে এ ছবিতে। হুমায়ূন আহমেদের মতো অসাধারণ নির্মাতার ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা মুক্তির ক্যারিয়ারে আছে। দাদু গোলাম মোস্তফার কাছে ঘুরতে আসা মুক্তি গাঁয়ে এসে গায়েন জাহিদ হাসানের খোঁজ পায় যে তাকে গান শোনাত।’ ওলো ভাবিজান নাও বাওয়া মরদো লোকের কাম’ এরকম মনকাড়া ফোক গানগুলো শুনে সে মুগ্ধ হয়েছিল। মনে মনে ভালোবেসেছিল জাহিদকে কিন্তু জমিদার দাদুর বাধা এসেছিল। মুক্তি জমিদারি পছন্দ করত না। সে গ্রামে বের হলে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করত। রাস্তায় কাজ করা মানুষকেও বলত ‘ভালো আছেন?’ গ্রামের প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হয়ে নিজের পছন্দের ইংরেজি গান গাইত। দাদু গোলাম মোস্তফার সাথে তার মতাদর্শের দ্বন্দ্ব দেখা যেত। ছবির শেষে দাদুও পরিবর্তন হয়ে যায় মুক্তির প্রভাবে। জমিদারপ্রথার বিপরীতে জমিদার পরিবারের একজন হয়েই প্রজাবান্ধব একটি চরিত্র ছিল মুক্তির এ ছবিতে। চরিত্রটি অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল এবং তার অভিনয়ও ছিল পরিমিত। বলা যায় জাতীয় পুরস্কারের দাবিদার ছিল।

‘হাসন রাজা’ তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছবি। হাসন রাজা বা হেলাল খানের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিল। স্বামীর খেয়ালি মনোভাব এবং রাত করে বাড়ি ফেরার কারণে সে অধিকার নিয়ে বলে-‘এই মানুষটার উপর শুধু আমার অধিকার আছে।’ তখন হাসন রাজা বলে-‘জমিদার স্বামীকে প্রশ্ন করতে হয় না।’ মুক্তির চরিত্রটি এ ছবিতে এমন ছিল যেখানে জমিদারের স্ত্রী হয়েও সে বঞ্চনার শিকার। তার অন্যান্য ছবির মধ্যে ‘জগত সংসার, পিতা মাতার আমানত, তুমি আমার স্বামী’ উল্লেখযোগ্য। এসব ছবিতে একাধিক বিগ স্টার যেমন মান্না, শাবনূরের মধ্যেও নিজের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিল মুক্তি।

আনোয়ারার মেয়ে বলে শুধু নয় নিজ যোগ্যতায় ও প্রতিভায় মুক্তি উজ্জ্বল ছিল নিজের ক্যারিয়ারে। যতটুকু কাজই করুক ভালোভাবে করেছে। কম কাজ করেও দর্শকমনে স্থান করা যায় মুক্তি তার বড় উদাহরণ।


মন্তব্য করুন