Select Page

যে কারণে মাসুদ রানা হলেন এবিএম সুমন

যে কারণে মাসুদ রানা হলেন এবিএম সুমন

আগামী ২৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশী স্পাই চরিত্র মাসুদ রানার অভিষেক হচ্ছে। আর এই চরিত্রে আছেন এবিএম সুমন। এ নায়ককে নির্বাচন নিয়ে অনেকের মাঝে সংশয়। পাশাপাশি রয়েছে আরো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন। তেমন কিছু ‘কনফিউশন’ নিয়ে সম্প্রতি লিখেছেন ‘এমআর নাইন: ডু অর ডাই’ সিনেমার চিত্রনাট্যকার নাজিম-উদ-দৌলা। পড়ুন তবে—

‘কিছু কনফিউশন দূর করার জন্য এই পোস্ট। MR9 সিনেমার বিভিন্ন প্রমোশনাল পোস্টের কমেন্ট বক্সে, সিনেমার ফেসবুক গ্রুপগুলোতে এবং আমার ইনবক্সে অনেকেই কিছু কমন প্রশ্ন করছেন। যেমন:

১. মাসুদ রানা সিনেমাতে “কে হতে চায় মাসুদ রানা” প্রোগ্রামের বিজয়ী রাসের রানার নায়ক হওয়ার কথা ছিলো, এবিএম সুমন কীভাবে এলো?

২. মাসুদ রানা ডিরেক্টর আসলে কে? সৈকত নাসির নাকি আসিফ আকবর? 

৩. মাসুদ রানাতে নাকি পূজা চেরি সোহানা চরিত্রে অভিনয় করেছে? ভারতের সাক্ষী প্রধান তাহলে কোন চরিত্রে অভিনয় করছে?

৪. এবিএম সুমন যদি সিনেমায় “মাসুদ রানা” হয় তাহলে “কে হতে চায় মাসুদ রানা” প্রোগ্রামটা কেন করা হয়েছিল?

এই পোস্টে আপনাদের এমন প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছি।

২০১৭ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়া সেবা প্রকাশনীর কাছ থেকে মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম ৩টি বইয়ের রাইটস কিনেছিল সিনেমা নির্মাণের উদ্দেশ্যে। এরপর ২০১৮ সালে শুরু হয় “কে হতে চায় মাসুদ রানা” প্রোগ্রাম, তখন জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ইউনিলিভার বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি হয় যে এই প্রোগ্রামের বিজয়ী ব্যক্তি “মাসুদ রানা” চরিত্রে অভিনয় করবেন।

পরবর্তীতে জাজ মাল্টিমিডিয়ার সাথে হলিউডের কয়েকটি প্রডাকশন হাউজের চুক্তি হয় এবং দুই দেশের জয়েন্ট ভেঞ্চারে একটা বিগ বাজেটের সিনেমা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলিউডের ডিরেক্টর আসিফ আকবর এখানে একটা বড় ভূমিকা রাখেন। সে সময় আমি সিনেমার সাথে যুক্ত হই এবং স্ক্রিপ্টের প্রথম ড্রাফটটি লিখে ফেলি। এরপর একটা সমস্যা দাঁড়ায়- হলিউডের প্রডাকশন হাউজ নিজেরা অডিশন নিয়ে “মাসুদ রানা” সিলেক্ট করার শর্ত জুড়ে দেয়। কারণ তারা চাইছিলেন পরীক্ষিত কাউকে বেছে নিতে যে ফ্লুয়েন্টলি ইংলিশে কথা বলতে পারবে, হলিউডের সিনেমার ওজনটা নিতে পারবে এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ একজন স্পাইকে ধারণ করতে পারবে।

ফলে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে জাজ মাল্টিমিডিয়ার পক্ষ থেকে আলাদা করে অডিশনের ব্যবস্থা করা হয়। ডিরেক্টর, প্রডিউসার, ফাইট ডিরেকটর-সহ হলিউডের টিম বাংলাদেশে আসে অডিশন নেওয়ার জন্য। সাথে রাইটার হিসেবে আমি এবং এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার মিঠু খানও ছিলেন। এই অডিশনে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন অভিনেতা ও মডেল অংশ নেয়। সেই সাথে “কে হতে চায় মাসুদ রানা” প্রোগ্রামের টপ কয়েকজনও অডিশন দিয়ে যায়। অডিশনে অনেকেই ভালো পারফর্ম করলেও, হলিউডের টিম অনেক যাচাই বাছাই ও আলোচনার পর মাসুদ রানা হিসেবে এবিএম সুমনকেই বেছে নেয়। তার বাচনভঙ্গী, ফিজিক্যাল অ্যাপিয়ারেন্স, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ- সব কিছুই হলিউডের টিমের বেশ পছন্দ হয়।

কিন্তু এখানেই আমাদের সিলেকশন চুড়ান্ত হয়নি। MR9 সিনেমার স্ক্রিপ্ট মোটামুটি কমপ্লিট হওয়ার পর আমি নিজে গিয়েছিলাম কাজী আনোয়ার হোসেন স্যারের সাথে দেখা করতে। তাঁকে আমি সম্পূর্ণ স্ক্রিপ্ট পড়ে শুনিয়েছি এবং ল্যাপটপে নিয়ে যাওয়া এবিএম সুমন ও অন্যান্য কিছু পারফর্মারের বেশ কিছু ছবি-ভিডিও তাঁকে দেখিয়েছি। তিনি অভিনেতা এবিএম সুমনকে মাসুদ রানা হিসেবে খুবই পছন্দ করেছেন। (এই প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত জানাবো পরবর্তী পোস্টে)।

এভাবেই MR9 সিনেমার জন্য “মাসুদ রানা” চরিত্রে সিলেক্টেড হয়ে গেলেন এবিএম সুমন। কিন্তু এদিকে ইউনিভারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী “কে হতে চায় মাসুদ রানা” প্রোগ্রামের বিজয়ীকে মাসুদ রানা করে একটি সিনেমা নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে আছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। তাই তারা দুটি সিনেমা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। একটি সিনেমার নাম MR9: Do or Die, অপরটির নাম “মাসুদ রানা”। দুটি সম্পূর্ণ আলাদা সিনেমা, আলাদা ইউনিভার্স, দুটির মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই।

MR9: Do or Die সিনেমাটি হলিউড ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হচ্ছে। ডিরেকশন দিচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলিউডের ডিরেক্টর আসিফ আকবর। বিশ্বব্যাপী দুটি ভাষায় সিনেমাটি রিলিজ হবে। সিনেমার ইংরেজি ভার্সনের চিত্রনাট্য লিখেছি আমি ও ডিরেক্টর আসিফ আকবর মিলে। সিনেমার বাংলা ডাবড ভার্সনের সংলাপ লিখেছেন আবদুল আজিজ ভাই। দেশের বাইরে এবং দেশের সিনেপ্লেক্সগুলোতে ইংরেজি ভার্সনটি দেখা যাবে। আর দেশের সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোতে দেখা যাবে বাংলা ডাবড ভার্সনটি। মূলত ধ্বংস পাহাড় উপন্যাসের মূল থিমের উপর ভিত্তি করেই এই সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। মাসুদ রানার ভূমিকায় আছেন এবিএম সুমন, সুলতা দেবির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভারতের অভিনেত্রী সাক্ষী প্রধান, প্রধান অ্যান্টাগনিস্টের ভূমিকায় আছেন হলিউডের অভিনেতা ফ্র্যাংক গ্রিলো, বিসিআই টেক এক্সপার্টের ক্যারেক্টার করেছেন অমি বৈদ্য, রাহাত খানের চরিত্রে আছেন শহিদুল আলম সাচ্চু। এছাড়াও, হলিউড, বলিউড ও বাংলাদেশের অনেক তারকা শিল্পী এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সিনেমাটি আগামী ২৫ আগস্ট মুক্তি পেতে চলেছে।

অপরদিকে “মাসুদ রানা” সিনেমাটি তৈরি হচ্ছে ইউনিলিভার ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার অর্থায়নে এবং সম্পূর্ণ দেশীয় প্রডাকশনে। এই সিনেমাটি সম্পর্কে আমি বিস্তারিত কিছু জানি না। শুধু জানি সিনেমাটির ডিরেকশন দিয়েছেন সৈকত নাসির ভাই এবং অভিনয় করেছেন রাসেল রানা ও পূজা চেরি।

যাই হোক, আশা করি আপনার কনফিউশন দূর হয়েছে। পরবর্তী পোস্টে আমি নিভৃতে থাকা ডিরেক্টর আসিফ আকবর সম্পর্কে লিখবো এবং তিনি কীভাবে MR9: Do or Die সিনেমার সাথে যুক্ত হলেন- জানাবো সেই গল্প। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সবাই।‘


Leave a reply