![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
রিভিউ/ ‘নয়নমনি’ যখন রঙ্গীন
[স্বাধীন বাংলাদেশে আমজাদ হোসেনের প্রথম চলচ্চিত্র ‘নয়নমনি’। ববিতা, ফারুক, রওশন জামিল অভিনীত তুমুল জনপ্রিয় সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৭৬ সালে। এর দুই দশক পর মতিন রহমানের পরিচালনায় রিমেক ‘রঙ্গীন নয়নমনি’তে অভিনয় করেন শাবনূর, ওমর সানী, রাজীব, রওশন জামিল, ডলি জহুর প্রমুখ। সেই ছবির রিভিউ করেছিলেন তখনকার জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা অরণ্য আনোয়ার। বিএমডিবির পাঠকদের সামনে রিভিউটি তুলে ধরা হলো।]
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/07/shabnur_omar_sani_rongin_noyonmoni_bmdb_image.jpg?resize=857%2C558&ssl=1)
বিশাল মেদ-ভাণ্ডার তার। তিনি ওমর সানী। ‘রঙ্গীন নয়নমনি’র রঙ্গীন নায়ক। তা দেখে কে বলবে, পথে পথে হেঁটে -গান গাওয়া এক বাউল তিনি? পরিচালক কোন গুণে মুগ্ধ হয়ে এই নায়কটিকে নয়ন চরিত্রে কাস্ট করেছেন তা আল্লাহ মালুম…। তার ওপর তাকে প্রায় পুরো ছবিতে অভিনয় করতে হয়েছে খালি গায়ে। মেদ-ভুঁড়িসর্বস্ব এ নায়ককে নয়ন চরিত্রে পরিচালক কিভাবে দর্শক গ্রহণযোগ্য করে তোলার সাহস করেছেন তার জবাব জানার জন্য মতিন রহমানের শরণাপন্ন হওয়া যায়নি বলে এ প্রসঙ্গে আর না বলাই শ্রেয়।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/07/razib_rongin_noyonmoni_bmdb_image.jpg?resize=866%2C550&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/07/dildar_rongin_noyonmoni_bmdb_image.jpg?resize=853%2C585&ssl=1)
‘রঙ্গীন নয়নমনি’র দোর্দণ্ড প্রতাপশালী গ্রাম্য মোড়ল চরিত্রে আর এক মিসকাস্টিং রাজীব। শহুরে ছবির ভিলেন চরিত্রের আনপ্যারালাল এই অভিনেতা গ্রাম্য মোড়লের চরিত্র করতে এসে কী ভীষণভাবে যে ব্যর্থ হয়েছেন তা সচেতন দর্শকমাত্রই স্বীকার করবেন। পানের পিক ফেলা এবং লুঙ্গি উঁচিয়ে হাঁটতে গিয়ে মেলো ড্রমার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। যা চরিত্রকে একেবারেই আহত করেছে। মনে হয় ও জীবনে রাজীব বেচারি কোনো গ্রাম্য মোড়লের দর্শন। পাননি। আহা বেচারি।…
ষাট এবং সত্তর দশকের মোহময়ী নায়িকা কবরী ‘নয়নমনি’তে অভিনয় করলেন নয়নের মা চরিত্রে। কেন কবরী এ কাজটি করতে গেলেন। তার কি আর অভিনয় না করলেই নয়। দর্শক হৃদয়ে যে অপরিসীম ভালোবাসা নিয়ে তিনি টিকে আছেন এসব চরিত্রে দুর্বল- অভিনয় করে সে ভালোবাসা নষ্ট করা মোটেই উচিত নয় কবরীর। প্লিজ যদি কখনো সময় পান আপনার ষাট দশকের শেষের এবং সত্তর দশকের ছবিগুলো দেখবেন। আপনার নিজেরই আর এ ধরনের অভিনয়ে আসতে ইচ্ছে করবে না।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/07/shabnur_rowshan_jamil_rongin_noyonmoni_bmdb_image.jpg?resize=856%2C526&ssl=1)
আমজাদ হোসেন তার ‘নিরক্ষর স্বর্গ’ উপন্যাস থেকে সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ করেছিলেন ‘নয়নমনি’ ছবিটি। ফারুক-ববিতাকে নিয়ে তৈরি করা দারুণ সফল এ ছবিটি নব্বই দশকের শেষে এসে নির্মাণ করলেন মতিন রহমান। এবারে নয়ন-ওমর সানী, মনি-শাবনূর। শৈশবেই এদের প্রেমের সূত্রপাত। বেশ কিছুদিন শৈশবকালীন প্রেম পর্ব চলার পর নয়ন গ্রাম্য মোড়লের রোষানলে পতিত হয়। তাকে গাছে বেঁধে ৫০ ঘা জুতা মারার নির্দেশ দেওয়া হয় তার বাবাকে। গ্রামের সবার সামনে এই শাস্তি পাওয়ার পর তার বাউল নানা তাকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে দূরে চলে যায়। হয়ে ওঠে জাত বাউল।
এরপর মা এবং শৈশব প্রেমিকা মনির প্রেমে উন্মাতাল হয়ে ফিরে আসে নিজ গ্রামে। ততোদিনে মনি বদ্ধপাগল। বটগাছে থাকে এবং নয়ন এর পরিবর্তে ভালোবাসে বটগাছের জিনকে। জিন- পরী বিশ্বাস করে না নয়ন তাই বটগাছ কাটতে আরম্ভ করে গ্রামের যুবকদের নিয়ে। গ্রাম্য মোড়ল বটগাছ কাটায় বাধা নিতে আসলে তাকে একচোট ধমক খাইয়ে বিদায় করে দেওয়া হয়।
নয়নের গণমুখী কর্মকাণ্ড মোড়লকে রাগান্বিত করে তোলে। এদিকে মোড়ল মনিকে তার চতুর্থ স্ত্রী করার জন্য এতোদিন নেশামিশ্রিত পান খাইয়ে পাগল বানিয়ে রেখেছিল এ কথা জানার পর নয়ন মোড়লকে শেষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু তার আগে মোড়ল নয়নকে হত্যা করার জন্য রামদা দিয়ে ভাড়াটে খুনিকে পাঠায়। খুনি হাসু নায়ককে মারতে এসে রামদার কোপে নয়নের মায়ের শিরশ্ছেদ করে। নয়ন এবার তার দলবল নিয়ে মোড়লকে শেষ করতে রওয়ানা হয়। মোড়ল ইতিমধ্যে মনিকে ধরে নিয়ে নৌকায় গিয়ে ওঠে। নয়নের দল সেদিকেই ধাবিত হয় এবং মোড়লের পতন হয়।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2023/07/shabnur_omar_sani1_rongin_noyonmoni_bmdb_image.jpg?resize=857%2C535&ssl=1)
সত্তর দশকে আমজাদ হোসেন যে ‘নয়নমনি’ নির্মাণ করেছিলেন নব্বই দশকে সেই ‘নয়নমনি’ আরো অনেক উন্নত এবং সুন্দর হতে পারতো। তা মোটেই হয়নি। ফারুকের জায়গায় ওমর সানী হয়েছে ভীষণভাবে বেমানান, রাজীব গ্রাম্য মোড়লের অভিনয় করতে গিয়ে পুরোদস্তুর ব্যর্থ হয়েছেন। নয়নের মা চরিত্রে কবরী একদম মিসকাস্টিং, অন্যরা মানানসই। শাবনূর এবং ডলি জহুর ও আসাদের অভিনয় চমৎকার।
১৬ রিলের এ ছবিটির চিত্রগ্রহণ হতে পারতো আরো অনেক ন্যাচারাল। সাহার সঙ্গীত মোটামুটি। গানগুলো চমৎকার। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ছবির গানগুলো যে জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকেছিল এ সময়ে সে জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পাবে। এ কে এম জাহাঙ্গীর খান প্রযোজিত ‘রঙ্গীন নয়নমনি’ দর্শক ভালোভাবেই লুফে নিয়েছে। সিনেমা হলে মুহুর্মুহু করতালি দেখে বোঝা গেলো।