Select Page

রিভিউ: রেডরাম

রিভিউ: রেডরাম

‘অনেক সময় মনে হয় যারা মরে যায় তারাই বেঁচে যায়, মুক্ত হয়ে যায়। সময়ের গন্ডিতে তাদের আটকা থাকতে হয় না।’ স্বামী মারা যাবার পর স্বামীর বন্ধু যখন মেয়েটির সামনে বসা তখন সে এমন একটি কথা বলছে। কথা, এক্সপ্রেশন কিংবা প্লট নিয়ে এই যে রিসার্চ সেটা বর্তমান সময়ে ভিকি জাহেদের মতো কেউ করে কী না আমার জানা নেই।

ভিকি জাহেদের ওয়েবফিল্ম ‘রেডরাম’ বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চরকিতে এসেছে। ট্রেইলার দেখে মনে হয়েছিল আবার সেই নিশোর ভয়েস ওভার, আবার আরেকটা ‘পুনর্জন্ম টাইপ কিছু দেখবো হয়তো। হ্যাঁ, জনরা হিসাবে এটিও মার্ডার মিস্ট্রি আর ভিকি জাহেদের সচরাচর ব্যবহৃত টুলসগুলোও এখানে আছে। তবে টুইস্ট আর পারফরমেন্স এবার অনেকটাই ভিন্ন।

গল্পটা বলা হয়েছে প্যারালাল ফরম্যাটে যেখানে আপনি একদিকে বর্তমান সময় আর অতীতের সময়কে নির্দিষ্ট টাইম ল্যাপসে পাশাপাশি দেখতে পারবেন। সিআইডির নামকরা অফিসার যাকে সবাই ‘হিউম্যান লাই ডিটেক্টর’ বলছে সেই রাশেদকে দেখা যাচ্ছে তার কেস ও আত্মহত্যায় মারা যাওয়া কাছের মানুষ লুবনাকে নিয়ে একটা অবসেশনে থাকতে, প্রফেশনাল সফলতার পরেও একটা বেদনা বয়ে নিয়ে বেড়াতে। আর অন্যদিকে সুখী দম্পতি সোহেল আর নীলা তাদের প্রথম সন্তানের অপেক্ষায় আছে। নীলার বাবা সোহেলকে পছন্দ করে না। আর বাসায় সোহেলের ভাই সেক্সুয়ালি সাইকোটিক বা নীলার প্রতি বিকৃত যৌনাবেদন পোষণ করে। এর মাঝে একদিন সকালে প্রতিষ্ঠিত এই সেলিব্রেটি সংগীত শিল্পী সোহেলের জবাই করা লাশ পাওয়া যায় নিজের ঘরে। কে তার হত্যাকারী এটির তদন্তই বাকি ঘটনায় দেখানো হয়েছে।

মার্ডার মিস্ট্রির ক্ষেত্রে ‘হু ডান ইট’ মানে কে মেরেছে এই মিডিয়ামে অনেক নির্মাতা এগোতে পছন্দ করেন। কলকাতার সৃজিত মুখার্জীকেও দেখবেন ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ সিনেমায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড কে ঘটাচ্ছে সেটা বের করে আনা নিয়েই টুইস্ট রেখে সিনেমার গল্প বলেছেন। ভিকি জাহেদ ঠিক সে পথে না হাঁটলেও নির্মাণে যথেষ্ট মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন, নিজের একটা সিগনেচার রাখার চেষ্টা করেছেন।

পারফরমেন্স বিবেচনায় আলোচনায় সবাই নিশো, মনোজ, নাদিয়া বা মেহজাবিনকে রাখলেও আমার অন্যরকম আগ্রহ ছিল অভিজ্ঞ অভিনেতা আজিজুল হাকিম আর এ সময়ের রাহুলের দিকে। ভিকি জাহেদ তার প্লটে সায়েন্স, সাইকোলজি আর থ্রিলার ট্রিটমেন্ট নিয়ে একটা মিশেল আনতে চেষ্টা করেন। তবে সবসময় সেটি মসলা আর নুনে পরিমিত স্বাদ দিতে পারে না। ‘রেডরাম’-এ সেই দিকটা টিভির কাজগুলো থেকে যথেষ্ট পরিণত মনে হয়েছে। নিশোর ছাত্রাবস্থা ও সিআইডির ইম্প্রেশন আলাদা করা গেছে যেটা মনোজ বা নাদিয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা যায়নি। মেহজাবীন ভালো অভিনয় করতে ক্লান্ত হন না, এটা তার প্রমাণ।

নেগেটিভ দিক বলতে আমার সিনেমার লেন্থ নিয়ে আপত্তি আছে। নির্মাতাকে বোর হতে না দিলেও হাফ টাইমের আগে খুব টানটান রাখতেও পারেননি। কিছু স্মৃতিচারণ একজন অন ডিউটি অফিসারের কথায় বেমানান লেগেছে, মেহজাবীন কিছু স্পেসিফিক অ্যাক্টিং গেশ্চার এখানেও রিপিট করেছেন বারবার‍। সম্পাদনায় যে চোখে পড়ার মতো কিছু ভুল দেখেছি পারলে নির্মাতা এটি বাদ দিয়ে আবার রিভাইসড ভার্সন দিলে ভালো হয়। নিশোর অফিসার হিসাবে সেই ‘পুনর্জন্ম’-এর শেফের মতো ফিলোসফি কপচানো আশা করি এখানেই শেষ করবেন ভিকি।

এটুকু কথা দিতে পারি ওয়েবফিল্মটা ভালো লাগবে সেটা নির্মাণে হোক, পারফরমেন্স এ হোক কিংবা শেষ টুইস্টে।

রেটিং: ৭/১০


About The Author

Graduated from Mawlana Bhashani Science & Technology University. Film maker and writer.

Leave a reply