Select Page

শাকিব খানের সেরা ১০

শাকিব খানের সেরা ১০

দীর্ঘ ১ যুগ ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে নবাবের মতো রাজ করে যাচ্ছেন ‘নাম্বার ওয়ান’-খ্যাত শাকিব খান। আজ তিনি ৪০ পেরিয়ে ৪১ এ পা দিলেন। চলচ্চিত্রে ২০ বছরের দীর্ঘ পথচলায় তিনি এখনো হয়তো কোনো কালজয়ী কিংবা মাস্টারপিস কোনো ছবি উপহার দিতে পারেননি, কিন্তু গণমানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হবে কিংবা সমাজের কালো থাবাকে তুলে ধরবে এমন অনেক মাঝারি মানের ছবি তিনি উপহার দিয়েছেন।

আজ সেরকম ১০ টি ভালোলাগার ছবি নিয়ে এক‌টি তালিকা প্রকাশ করলাম। তালিকাটি করতে গিয়ে ৪টি বিষয় আমলে নিয়েছি- ছবির গুণগত মান, শাকিব খানের পারফরমেন্স, ব্যক্তিগত পছন্দ ও জনপ্রিয়তা ও ব্যবসায়িক সফলতা। আশাকরি সবাই লেখাটি পুরোটা পড়বেন।

১০. আমার প্রাণের প্রিয়া (২০০৯)
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মুক্তি পায় জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত এবং হার্টবিট প্রডাকশন প্রযোজিত রোম্যান্টিক-কমেডি ছবি “আমার প্রাণের প্রিয়া”।

ছবির কাহিনী মূলত এক লাভগুরুকে নিয়ে, যে সবসময় মানুষের সাহায্য করে থাকেন, বিশেষ করে ভালবাসার ক্ষেত্রে। কিন্তু তিনি এখন অব্দি কোনো মেয়েকে ভালবাসেননি। হঠাৎ একদিন মিমের সাথে তার দেখা হয় এবং প্রেমে পড়ে যায়। প্রাথমিকভাবে মিম রাজী হননি। কারণ শাকিব ছিলেন বড় ব্যবসায়ীর একমাত্র পুত্র। যখন শাকিব তার ভালবাসার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ দেন, তখন মিম তাকে গ্রহণ করেন। যখন তাদের ভালবাসা এগিয়ে যাচ্ছিল তখন মিমের ভাই মিশা সওদাগর তাদের মধ্যে বাধা হয়ে দাড়ায়। এবং শুরু হয়ে যায় একের পর দ্বন্দ্ব।

টিপিক্যাল লাভ স্টোরির ছবি হলেও, ছ’খানা মনোমুগ্ধকর গানের জন্য এছবিটি আমার অন্তত পছন্দের। এর মধ্যে হৃদয় খানের গাওয়া “চাইনা মেয়ে তুমি” এবং মনির খান-কণক চাঁপার গাওয়া “কি জাদু করেছো বলনা” এখনো তুমুল জনপ্রিয়! গানের পাশাপাশি ছবিতে নৃত্যপরিচালনাও ছিল দৃষ্টিনন্দন। ছবিটি সেসময় ব্যবসায়িকভাবে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। ছবিটিতে শাকিব খানের সাথে প্রথমবারের মতো জুটিবদ্ধ হন বিদ্যা সিনহা মিম; এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে আছেন মিশা সওদাগর, কাবিলা, নাসরিন সহ আরও অনেকে।

৯. সুপার হিরো (২০১৮)
দেশের শত্রুরা যখন নিজ মাতৃভূমিকে ধ্বংস করার জন্য মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, যখন এদের মোকাবিলা কথা এক হিরোর পক্ষে সম্ভব হয় না, ঠিক তখনই দরকার একজন ‘সুপার হিরো’র। এরা কল্পনার কোনো সুপার হিরো নয়; এরা সত্যিকারের সুপার হিরো, যারা দেশকে বাঁচাতে প্রাণপণ লড়ে যায়। এমনই এক মূল ভাবনা নিয়ে পরিচালক আশিকুর রহমান তৈরী করেন অ্যাকশন থ্রিলার জনরার ছবি “সুপার হিরো”। পূর্বের মতো এছবিটিও প্রযোজনা করেছে হার্ট বিট প্রডাকশন।

ছবিতে শাকিব খানকে বাংলাদেশের একজন স্পেশাল ফোর্স কমান্ডারের মতো ব্যতিক্রমী এক চরিত্রে পাওয়া যায়। শাকিব খান ছাড়াও এ ছবিতে রয়েছে শবনম বুবলি, তারিক আনাম খান, মার্গারেট জি. রোলিং, টাইগার রবি, বড়দা মিঠু, সাদেক বাচ্চুসহ আরো অনেকে। ছবিটি পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে মুক্তি পায় এবং মোটামুটি ভালো ব্যবসা করে। ভালো ফাইট কোরিওগ্রাফি, উত্তেজনায় ঠাসা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং পরিশেষে ছবিটিতে দেশভক্তির আলাদা এক ফ্লেভার থাকায় এছবি আমার বেশ পছন্দের।

৮. প্রিয়া আমার প্রিয়া (২০০৮)
হৃদয় (শাকিব খান) একজন কলেজ ছাত্র। সে থানার হেড কনস্টেবলের (প্রবৗর মিত্র) ছেলে। ডানপিটে হৃদয় একদিন কিছু সন্ত্রাসীদের সাথে মারপিট করলে সন্ত্রাসীরা তাকে জখম করে পালিয়ে যায়। প্রিয়া (সাহারা) তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং রক্ত দেয়। পরবর্তীতে হৃদয় প্রিয়াকে না দেখেই শুধু বন্ধুদের কাছে তার প্রশংসা শুনে প্রেমে পড়ে যায়। প্রিয়া প্রথম দিকে হৃদয় কে দেখতে না পারলেও পরবর্তীতে সেও হৃদয়ের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে।

কিন্তু বাংলা ছবিতে কখনোই প্রেম বাধাবিপত্তি ছাড়া হয় না। চিরন্তন সত্য এই বাণী মেনেই হৃদয়-প্রিয়ার মধ্যে সম্পর্কের বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রিয়ার ভাই (মিশা সওদাগর), যিনি একজন পুলিশ অফিসার। শুরু হয়ে যায় ভালোবাসা নিয়ে তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব।

বরাবরের মতো এটিও গতানুগতিক প্রেমের ছবি। তবে এছবির বিশেষত্ব হলো শাকিব খানের ড্যাশিঙ রংবাজ টাইপ লুক। কাধ পর্যন্ত নামানো রং বেরঙের বাহারি চুল, ক্লিন সেভের সাথে কানের পাশ দিয়ে নামানো লম্বা চিপ, একপাশের আইব্রু ফূটো করে লাগানো ছোট্ট একটি রিং, ফুলহাতার বাহারি শার্ট এবং সাথে সাধারণ মানের জিন্স… সবমিলিয়ে হৃদয় চরিত্রটির জন্য শাকিব খানের এমন গেটআপ পছন্দ করেননি, এমন দর্শক খুব কমই পাওয়া যাবে। এছাড়াও গতিশীল স্ক্রিণপ্লের কারণে এছবি যথেষ্ট উপভোগ্য। যদিও পরবর্তীতে জানলাম, পরিচালক বদিউল আলম খোকন এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আশা প্রডাকশনস ছবিটি ভারতের কন্নড় ভাষার ছবি “আপ্পু” (২০০২) দেখে বানিয়েছেন। তখন একটু খারাপ লেগেছে।

শাকিব খানের সাথে এ ছবিটিতে অভিনয় করেছেন সাহারা, মিশা সওদাগর, প্রবীর মিত্র, ববি, ইলিয়াস কোবরা সহ আরো অনেকে। ছবিটি মুক্তির পর ব্লকবাস্টার ব্যবসা করে, শাকিব খানের ক্যারিয়ারের অন্যতম সর্বাধিক আয়ের ছবি এটি।

৭. সিটি টেরর (২০০৫)
এম. এ রহিম পরিচালিত এ ছবিতে শাকিব খান পার্শ্বচরিত্রে ছিলেন, মূল নায়ক ছিলেন সুপারস্টার মান্না। পার্শ্বচরিত্রে থাকলেও এছবিতে মান্নার সাথে পাল্লা দিয়ে শাকিব খান অভিনয়টা করে গেছেন, যে কারণে গ্যাংস্টার-অ্যাকশন-ড্রামা জনরার এছবিটি আমার অন্তত পছন্দের।

ছবিতে মান্না ও শাকিব দুজনই পেশাদার খুনী। মান্না উপরের লেভেলের সাথে অনেক আগে থেকেই জড়িত তাই শাকিব তাকে বড়ভাই মানেন। মান্নাও তাকে ছোটভাইয়ের মতোই দেখে। তারা একত্রে বিভিন্ন অভিযানে গিয়ে সফল হয়েছে এবং ধীরে ধীরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। ঘটনাচক্রে একটি হোটেলে শাকিবের সাথে ছবির নায়িকা বৈশাখীর দেখা হয়। শাকিব তাকে পছন্দ করা শুরু করলে মান্না তার সাথে সম্পর্ক করতে শাকিবকে সাহায্য করে। অন্যদিকে ছবির অন্য নায়িকা পপি একজন বার ড্যান্সার, কিন্তু সে স্বপ্ন দেখেন একদিন মান্নার জীবনসঙ্গিনী হবেন।

শাকিব যখন বৈশাখীকে বিয়ের কথা বলে এবং তার খুনী জীবনের গল্প শুনায়, তখন বৈশাখী ও তার মা দুলারী কেউই বিয়ের ব্যাপারে রাজি হয় না। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে পাঁচ কোটি টাকার একটি বিনিময় চুক্তি হয়। যদি শাকিব এটা বৈশাখীর পরিবারকে দিতে পারে এবং এই টেরর লাইফকে ছাড়তে পারে, তবেই শাকিব পাবে বৈশাখীকে। আর এই ৫ কোটি টাকা জোগাড় করতে গিয়ে শাকিব তার বিবেক হারিয়ে বসে, হারিয়ে বসে জীবনের সবথেকে আপন মানুষটিকে।

এ.এন ফিল্মস প্রযোজিত এছবির ক্লাইম্যাক্সে শাকিব খান যেই অভিনয়টা দেখান, সেটি আমার চোখে আজীবন লেগে থাকবে। ঐ সিচ্যুয়েশনে যেরকম এক্সপ্রেশন, অ্যাটিচিউট, এগ্রেশন থাকার দরকার ছিল, শাকিব তার পুরোটাই ঢেলে দিতে পেরেছেন। ছবিটি মুক্তির পর ভালো ব্যবসা করেছিল।

৬. ভালোবাসলেই ঘর বাধা যায় না (২০০৮)
খান পরিবারের ছেলে সূর্য খান (শাকিব) গরিবদের প্রতি খুবই দয়ালু। তাই এলাকার গরিব-দুঃখীদের বিপদে আপদে সবসময় পাশে দাঁড়ান। অজান্তা (রুমানা) সূর্যকে মনেপ্রাণে অনেক বেশি ভালোবাসে। তার পরিবার এবং সূর্যের পরিবার নিজেদের মধ্যে অজান্তা-সূর্যের বিয়ে নিয়ে বেশ আগে থেকে আলোচনা করছিলেন।

সবকিছু ঠিকঠাক চললেও গল্প অন্যদিকে মোড় নেয়, যখন সূর্য কোনো এক কারণে তার বাড়ির কাজের মেয়ে আলোকে (অপু) বিয়ে করে পালিয়ে যান। এতে অজান্তা এবং সূর্যের পরিবার ভীষণরকম ক্ষেপে যায়। তারা সূর্য-আলোকে খুজেঁ বের করায় চেষ্টায় থাকে, এর পাশাপাশি গল্পও নানারকম টুইস্টে পরিপূর্ণ হতে থাকে। এরকমই এক ত্রিভুজ প্রেমের গল্পে পরিচালক জাকির হোসেন রাজু নির্মাণ করেছেন রোম্যান্টিক-ফ্যামিলি-ড্রামা ছবি “ভালোবাসলেই ঘর বাধা যায় না”।

ম্যাসটেক্স প্রডাকশনের প্রযোজনায় এছবিটি মুক্তির পর যেমন ব্যবসায়িক সফলতা পায়, তেমনি দর্শকদের মুখেও প্রশংসার ফুলঝুরি বের হতে থাকে। ছবিটি মোট ৭ টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার পায়। শাকিব খান নিজেও প্রথমবারের মতো জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন এ ছবির মাধ্যমে।

৫. ডাক্তার বাড়ি (২০০৭)
গ্রামের একই পরিবারে রয়েছেন তিন ভাই, তিনজনই ডাক্তার! বড়ভাই (এ.টি.এম শামসুজ্জামান) অ্যালোপ্যাথির, মেঝোভাই (অমিত হাসান) হোমিওপ্যাথির এবং ছোটভাই (শাকিব খান) হলেন পশু বিশেষজ্ঞ। তারা তিনজনই পুরো গ্রামে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন।

তবে তিনজন ভিন্ন ঘরানার চিকিৎসক একই বাড়িতে থাকায় আদর সোহাগের পাশাপাশি তাদের মধ্যকার ঝামেলাও কম হয় না।  এভাবেই মজাদার সব খুনসুটি এবং পারিবারিক সেন্টিমেন্টকে পুঁজি করে পরিচালক আজিজুর রহমান নির্মাণ করেন ফ্যামিলি-কমেডি-ড্রামার ছবি “ডাক্তার বাড়ি”। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন এ.টি.এম শামসুজ্জামান, অমিত হাসান, শাকিব খান, সুচরিতা, জনা, শাবনাজ, খলিল, সালাউদ্দিন লাভলু, আফজাল শরীফ সহ আরো অনেকে।

ছবিটি প্রযোজনা করেছে ছায়াছন্দ ম্যাগাজিন লিমিটেড এবং এনটিভি প্রডাকশন হাউজ। ভিন্নরকমের কমেডি সিক্যুয়েন্সের জন্য এছবিটি আমার ভীষণ পছন্দের। এখনো এই ছবিটি ছোটপর্দায় দেখালে আমি সমান উপভোগ করি, যেমনটা প্রথম দেখায় করেছিলাম।

৪. নবাব (২০১৭)
বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল বেঞ্চে কাজ করা রাজিব চৌধুরীকে (শাকিব খান) কোনো এক বিশেষ কাজে কোলকাতা যেতে হয়। ঘটনাচক্রে তার সামনেই সেখানকার মূখ্যমন্ত্রৗকে সন্ত্রাসী দ্বারা আক্রমণ করা হলে তিনি মূখ্যমন্ত্রীকে সাহসীকতার সাথে বাঁচিয়ে নিয়ে আসেন।

পরবর্তীতে মূখ্যমন্ত্রী তার অকুতোভয় মনোভাবের প্রশংসা করে তাকে একটি বড় অপারেশনের জন্য অফার করেন, যেটি একমাত্র তার পক্ষেই দমন করা সম্ভব। না হলে ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে পুরো পশ্চিমবঙ্গ অভিভাবকহীন হয়ে যেতে পারে। রাজিব চৌধুরী কোলকাতা শহরটাকে হাতের তালুর মতন চিনেন, এখানেই তিনি ছোটকালে বেড়ে উঠেছিলেন। তাই মূখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব তিনি সাদরে গ্রহন করেন। উপ-মূখ্যমন্ত্রী (খরাজ মূখার্জী) এবং কোলকাতা পুলিশ কমিশনার (রজতাভ দত্ত) তাকে টিম লিডার করে কয়েকজন চৌকস পুলিশ অফিসারকে তার টিমে শামিল করান। এরপর রাজিব চৌধুরী এবং তার টিম জীবন বাজি রেখে নেমে পড়েন পর্দার আড়ালের মানুষকে খুজঁতে, যে পেছনে বসে মূখ্যমন্ত্রী কে মারার ষড়যন্ত্র করছে।

অ্যাকশন-ড্রামা জনরার এছবিটি সবথেকে বেশি আলোচিত শাকিব খানের ‘রাফ এন্ড টাফ’ লুকের কারণে। ফিট বডি, মুখে চাপ দাড়ি, ঠোটের ওপর রাজকীয় গোঁফ, সেইসাথে হাতা গুটিয়ে শার্ট পড়া। এরআগে কোনো ছবিতে তাকে এতোটা স্মার্ট, হ্যান্ডসাম, ড্যাশিং, স্টাইলিশ লাগেনি যতটা “নবাব” এ লেগেছে।

এর পাশাপাশি মেকিং এর দিক থেকেও ছবিটি বেশ উন্নত ছিল। তবে সমালোচিত হয়েছে দায়সারা চিত্রনাট্যের কারণে, একাধিক হিন্দি ছবি থেকে গল্পটি অনুপ্রাণিত। ভারতের জয়দীপ মূখার্জী পরিচালিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ছবিটি। জাজ মাল্টিমিডিয়া এবং এসকে মুভিজ প্রযোজিত এছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, শুভশ্রী গাঙ্গুলী, খরাজ মূখার্জী, রজতাভ দত্ত, অমিত হাসান, অপরাজিতা আঢ্য, মেঘলা সহ আরো অনেকে। ছবিটি বাংলাদেশে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরে মুক্তি পায় এবং ব্লকবাস্টার হয়।

৩. সুভা (২০০৫)
সুভাসিনীকে (পূর্ণিমা) গ্রামে সবাই ‘সুভা’ বলেই ডাকে। তার বড় দুই বোন সুহাসিনী ও সুকেশিনীর নামের সাথে মিলিয়ে তার নাম রাখা হয়। যে মিষ্টি স্বরে কথা তাকে সুভাসিনী বলা হয়, কিন্তু সুভা জন্ম থেকেই বধির। তাই সমবয়সীদের সাথে সে খেলতে পারতো না, তারা সুভাকে খেপিয়ে তুলতো।

একা একা চলতে থাকা সুভার সখ্যতা গড়ে ওঠে গ্রামের এক যুবক প্রতাপের (শাকিব খান) সাথে। প্রতাপ ও সুভা একে অপরকে বুঝে এবং ভালবাসতে শুরু করে। পরবর্তীতে প্রতাপ সুভার বাবাকে তাদের বিয়ের কথা বললে সুভার বাবা বাণীকণ্ঠ (সালেহ আহমেদ) প্রতাপের বাবা গোবিন্দের (তুষার খান) কাছে তাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। কিন্তু বিধি বাম! গোবিন্দ তা ফিরিয়ে দেয় এবং বাণীকন্ঠকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

অপমানিত হয়ে বাড়ি ফিরে বাণীকণ্ঠ তার স্ত্রী (সুজাতা) ও মেয়েকে নিয়ে কোলকাতায় তার বড় মেয়ের বাড়ি চলে যায়। সেখানে তারা সুভার বিয়ের জন্য পাত্র দেখে। পাত্র নিবারণ (সাজন) তার বন্ধুকে নিয়ে সুভাকে দেখতে আসে এবং তাদের মেয়ে পছন্দ হয়। ফলে শীঘ্রই নিবারণ সুভাকে বিয়ে করে। কিন্তু বিয়ের পরদিন সে জানতে পারে সুভা কথা বলতে পারে না, যা সুভার জন্য পরবর্তীতে দুঃখ বয়ে নিয়ে আসে।

চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত এছবিতে অভিনয় করেছেন পূর্ণিমা, শাকিব খান, তুষার খান, সালেহ আহমেদ, সুজাতা, সাজন, সবিতা ব্যাণার্জী, চাষী নজরুল ইসলাম সহ আরো অনেকে।

ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের একই নামের বিখ্যাত ছোটগল্প অবলম্বনে। মূল চরিত্রে পূর্ণিমা থাকলেও শাকিব খানও এছবিতে তার যোগ্যতার সাক্ষর রেখেছেন। এছবিটি তার ক্যারিয়ারে একটা ভিন্নতা সৃষ্টি করেছে। তিনি দেখিয়েছেন, শুধু বাণিজ্যিক ছবি নয়, তাকে নিয়ে সাহিত্যিক ছবিও সম্ভব! ভালো গল্প, ভালো অভিনয় এবং ভালো মিউজিকের জন্য এছবিটি আমার পছন্দের।

২. শিকারি (২০১৬)
কলকাতার একটি স্থানে হঠাৎ করে কিছু নিখোঁজ বাচ্চার লাশের কংকাল, হাড়গোড় খুঁজে পাওয়া গেল। এরপর সেই কেসের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলো জজ রুদ্র চৌধুরীর (সব্যসাচী চক্রবর্তী) উপর। রুদ্র চৌধুরী একজন সৎ মানুষ ও আইনের প্রতি আস্থাশীল; ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সব কিছু করতে পারেন। তাই হত্যাকান্ডের মূল হোতা ভয় পেয়ে গেল যে তার গোমর ফাঁস হয়ে যেতে পারে! তাই নিজের মিশন ঠিক ঠাক রাখতে সে জজকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলো।

কিন্তু সমস্যা হলো, ভারতের কোনো কন্টাক্ট কিলারকে কাজটা দিলে ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটা ফাঁস হয়ে যেতে পারে। তাই সেই চিন্তায় জজকে মারা দায়িত্ব দেওয়া হলো বাংলাদেশের কন্ট্রাক্ট কিলার সুলতানকে (শাকিব খান)। এই সুলতানের আসল নাম হচ্ছে রাঘব। ছোটবেলা থেকেই জজ বাবার অবাধ্য ছেলে রঘু ওরফে রাঘব। ঘটনাচক্রে একদিন বাবার হাতেই গুলি করে পালিয়ে যায় বাড়ি থেকে। এবার বন্ধুর মাকে খুন করে শুরু হয় তার কিলিং মিশন! সেখান থেকে পালিয়ে এসে পরে বাংলাদেশে। হয়ে ওঠে সুলতান। নিজেকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে সুলতান। টার্গেট কিলিংয়ে যার তুল্য আর কেউ নেই। কিন্তু জজকে শ্যূট করতে গিয়ে সে আবিস্কার করে ভিন্নকিছু। যা তিনি কখনো কল্পনাও করেননি।

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার এছবিটি পরিচালনা করেছেন ভারতের জয়দীপ মূখ্যার্জী। জাজ মাল্টিমিডিয়া এবং এসকে মুভিজের প্রযোজনায় ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, শ্রাবন্তী চ্যাটার্জী, সব্যসাচী চক্রবর্তী, রাহুল দেব, খরাজ মুখার্জী, অমিত হাসান, শিবা সানু, সুপ্রিয় দত্ত সহ আরো অনেকে।

এ ছবিটি ছিল শাকিব খানের ডিজিটাল যুগের টার্নিং পয়েন্ট। প্রায় ১৫ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন শুধুমাত্র এছবির জন্য; পাশাপাশি লুকেও ভিন্নতা এনেছেন। ছবিটি তামিল “আধাভান” (২০০৯) এর অফিসিয়াল রিমেক। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এ মুক্তি পাওয়া ছবিটি ব্লকবাস্টার ব্যবসা করে। অ্যাকশন-ড্রামা জনরার এছবিটি পুরোপুরি মাস এন্টারটেইনার প্যাকেজ, তাই এ ছবি আমার নিকট অত্যন্ত উপভোগ্য।

উক্ত লিস্টের বাইরেও আরো অনেক ভালো ভালো ছবি রয়েছে, যেগুলো কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে এই লিস্টে জায়গা পায়নি। একে একে নামগুলি নিচ্ছি: “নাচনেওয়ালী” (২০০২), “ফুল নেবো না অশ্রু নেবো” (২০০২), “সাহসী মানুষ চাই” (২০০৩), “ওরা দালাল” (২০০৪), “খুনি শিকদার” (২০০৪), “নগ্ন হামলা” (২০০৫), “বাধা” (২০০৫), “চাচ্চু” (২০০৬), “টিপ টিপ বৃষ্টি” (২০০৮), “সমাধি” (২০০৮), “নিঃশ্বাস আমার তুমি” (২০১০), “মাটির ঠিকানা” (২০১১) “খোদার পড়ে মা” (২০১২), “ভালোবাসা আজকাল” (২০১৩), “ফুল এন্ড ফাইনাল” (২০১৩), “পূর্ণ্যদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী” (২০১৩), “রাজত্ব” (২০১৪), ফাঁদ (২০১৪), “এইতো প্রেম” (২০১৫), “আরো ভালোবাসবো তোমায়” (২০১৫), “সত্তা” (২০১৭), “রাজনীতি” (২০১৭)

১. আমার স্বপ্ন তুমি (২০০৫)
সুমন (শাকিব) একজন শিক্ষিত বেকার যিনি বি.এ শেষ করার পর অনন্তপুর গ্রামে থাকেন। খুশি (শাবনুর) হলো সুমনের খুব কাছের একজন বন্ধু। দীর্ঘসময় তারা একে অপরের নিকট ঘনিষ্ঠ থাকায় সুমন একসময় খুশির প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু খুশির একটি বদঅভ্যাস ছিল, সেটি হলো ইচ্ছায়/অনিচ্ছায় মিথ্যে বলা। এই মিথ্যে বলার অভ্যেসটাই একসময় খুশি-সুমনের ভালোবাসার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। যার জন্য উভয়কেই চরম মূল্য দিতে হয়।

হাসিবুল ইসলাম মিজান পরিচালিত এছবিতে শাকিব খান ছিলেন অনেকটাই এন্টি-হিরোর চরিত্রে। আর এই চরিত্র দিয়েই সব শ্রেণির দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। শেষ ক্লাইম্যাক্সে যখন শাবনূর বলে, “সুমন, তুই আমার স্বামীকে মারিস না, আমি বিধবা হয়ে যাবো রে! আমি ওকে ছেড়ে তোর সাথে সংসার করবো।” সেইসময়টায় শাকিব খান যে অভিনয়টা দেখিয়েছেন, অনেকদিন সে অভিনয় দু’চোখে লেগে থাকবে। বলা বাহুল্য, এছবি সুপারহিট হওয়ার পর থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে শাকিব খানের ডিমান্ড বাড়তে থাকে। বড় বড় প্রযোজকেরা তাকে মূল নায়ক কিংবা যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের জন্য কাজ করার আগ্রহ দেখায়।

এন.এন. পিকচার্স প্রযোজিত রোম্যান্টিক-ড্রামা ঘরানার এছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, শাবনূর, ফেরদৌস, আবুল হায়াত, শর্মিলী আহমেদ, আফজাল শরীফ, ডন, রেহানা জলি, এ.টি.এম শামসুজ্জামান, নাসির খান সহ আরো অনেকে।

শাকিব খান আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে কি কি দিয়েছেন, সেটা যদি জানতে হয় তবে অবশ্যই লিস্টের ১০ টি এবং লিস্টের বাইরে মেনশন করা ২২টি ছবি আপনাকে দেখতে হবে। শাকিব খান ক্যারিয়ারে দুইটি জিনিস বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, ১। জুটি প্রথা। ২। ছবির সংখ্যা। যার দরুণ তার ক্যারিয়ারে মানহীন ছবির সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু মান্না মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে তিনি সেভাবে নিজ কাঁধে ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে যদি আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়ায় তবে তিনি সবার নিকট চিরস্মরণৗয় হয়ে থাকবেন।


মন্তব্য করুন