Select Page

শাকিব খান বনাম পরিচালকগণ

শাকিব খান বনাম পরিচালকগণ

কেরালাতে একবার একটি চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বাহুবলি’ খ্যাত নির্মাতা এস এস রাজামৌলিকে সামনা সামনি দেখার সুযোগ হয়েছিল। পড়নে খুব সাধারণ সাদা একটা শার্ট আর ধবধবে সাদা লুঙ্গি। বাহুবলি তখনও রিলিজ করে নাই। যদিও ‘মাগাধিরার’ মত মুভির কারনে উনার নাম আমার মুখস্ত ছিল। আমার হঠাৎ ইচ্ছা হল তার সাথে কথা বলি ছবি তুলি। আমি পাশে থাকা কেরালার কিছু শর্টফিল্ম নির্মাতাকে জানালাম আমরা কেন যাচ্ছিনা। জবাবে তারা জিভ কেটে জানালো তারা এখনও ভাল কোন ছবি বানায়নি তাই তাদের উচিত হবে না রাজামৌলীর সামনে যাওয়া। উনি অনেক সিনিয়র। এবার আমার অবাক হওয়ার পালা! কেরালা বা সাউথ আয়তনে খুব বড় না। টাকা পয়সার দিক দিয়ে তারা বলিউডের অনেক পিছনে। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির প্রতি সম্মান আর সিনেমার প্রতি ভালবাসায় তারা আমার চোখে সবার চেয়ে এগিয়ে। আজ তারা বাহুবলির মত নিজের ভাষার ছবি পুরো বিশ্বকে খাওয়াচ্ছে। এটাই তাদের ক্রেডিট।

এবার চলমান বাংলাদেশের বিতর্ক নিয়ে কথা বলি। আমাদের বাঙ্গালিদের একটা কমন সমস্যা হচ্ছে আমরা সব সময় অন্যদের শ্রেষ্ঠ মনে করি আর নিজেদের সমালোচনা করি। আপনি যদি বলিউডে যান দেখবেন তারা সবসময় চাইবে কাজটা সে না পেলেও তার ভাই যেন পায়। হয়তো ছবি সম্পাদনা করতে গিয়েছেন। তারা আপনাকে অন্য সেবা সম্পর্কেও আগ্রহী করে তুলবে এবং কাজগুলো নিজের ইন্ডাস্ট্রির লোকজনকেই দিবে। আমার নিজের চোখে দেখা তারা মুম্বাইয়ের বাইরে শ্যুট করতে গিয়ে একটা আলপিনও সে অন্য কারও কাছে থেকে কিনবে না। হয়তো স্থানীয় প্রোডাকশন থেকে নিলে কম টাকায় পেতো কিন্তু সেটা তারা করবে না। এতোটাই ভরসা করে তারা নিজেদের মানুষদের উপর। একটা ফিল্ম দিনের শেষে একটা বড় ইন্ডাস্ট্রি। এখান থেকে অনেক মানুষের দিনগুজরান হয়। একটা ইউনিট থেকে অনেকগুলো পরিবারের পেট চলে। তাই এটাকে মামুলি নেয়ার কোন সুযোগ নাই।

এখন প্রথম কথা শাকিব খান যদি পরিচালকদের নিয়ে আপত্তিকর কথা মিডিয়ায় বলে থাকেন তার সেটা অবশ্যই উচিত হয়নি। একজন পরিচালক ছাড়া আপনি কখনই একটা ভাল ছবি বানাতে পারবেননা। দিনশেষে এটাই পরীক্ষিত সত্য। বাংলাদেশে সামাজিক প্রেক্ষাপটে ফিল্মমেকারদের এবং মিডিয়ার মানুষদের জাহান্নামী বলা হয়, লুচ্চা বলা হয় এবং দিনশেষে সবাই টিভি খুলে সিনেমা দেখে বিনোদিত হয়। তাই এই আপত্তিকর কথাটা যদি সাধারণ কোন পাবলিক বলতো আমি মেনে নিতাম। যদি টিভি ইন্ডাস্ট্রির কেউ বলতো মেনে নিতাম। কিন্তু এই কথাটি শাকিব খানের মুখে একদমই মানায় না। উনি যে উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন সেই উচ্চতা থেকে এটা মানায় না। তাই যেহেতু ব্যাপারটা উনি শুরু করেছেন সেহেতু উনার উচিত হবে ব্যপারটা মীমাংসা করতে এগিয়ে আসা।

এবার পরিচালকদের বিষয়ে একটা কথা বলি। একজন অভিনয় শিল্পী চাইলে একসাথে দিনে ২ শিফটে দুইটা ছবির কাজ করতে পারেন। কিন্ত কখনও শুনেছেন যে পরিচালক ২ শিফটে দুইটা ছবির কাজ করেছেন। কারন এটা সম্ভব না। একটা সিনেমা পর্দায় দেখতে আপনাদের ২ ঘন্টা ব্যয় হয়। পুরো টিম হয়তো ৩ মাস শুটিং করে। কিন্ত খাতা কলমে একজন লেখক-পরিচালক দীর্ঘদিন সেই ছবিটা নিয়ে কাজ করেন। তাকে দীর্ঘদিন মাস বছর ধরে প্রি-প্রোডাকশন করতে হয়। দেখে হয়তো মনে হয় উনি বেকার। সারাদিন ঘরে বসে থাকেন, আদতে ঘরে বসে বসে স্ক্রিপ্ট কাটাছেড়া করা খুব কঠিন কাজ। কিন্তু তাদের ওই কাটাছেড়া একজন সাধারণ মাসুদ রানাকে শাকিব খান বানিয়ে দেয়। তাই একটা রেস্পেক্ট তাদের প্রাপ্য। স্টাররা যদি রেসপেক্ট না দেয় তাতেও তাদের কোন যায় আসবে না। তারপরেও ইন্ডাস্টির স্বার্থে তারা একটা রেসপেক্ট ডিজারভ করে। তাই আজকে পুরো বিষয়টা ব্যান পর্যন্ত না গড়ালেই বোধহয় ভাল হতো। এতে বেঁচে যেত একটা ইন্ডাস্ট্রি। শাকিবখানের ফ্যান ফোলোয়ার আছে কিন্ত সেটা ব্যবহার হোক চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে। নিজের ইন্ডাস্টির মানুষকে ছোট করতে নয়। আমাদের চলচ্চিত্রকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এইসব ভিতরের পলিটিক্স চিরতরে বন্ধ হোক। এতে নায়ক এবং পরিচালক দুইজনকেই দরকার। বাংলা ছবির একজন ভক্ত হিসেবে আমি এটাই কামনা করি। দূর হোক সব সমস্যা। এগিয়ে যাক আমাদের চলচ্চিত্র।

বিঃদ্রঃ লিখাটি পূর্বে বাংলা চলচ্চিত্র গ্রুপে প্রকাশিত। যে সমস্যার প্রেক্ষিতে লিখেছিলাম সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। আশাকরি এভাবেই সবার সাহায্য সহযোগিতায় আবার দাপিয়ে বেড়াবে আমাদের চলচ্চিত্র।

লেখকঃ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা।
ইমেইলঃ [email protected]


মন্তব্য করুন