![অনুদান পাওয়ার সাত বছর পর মুক্তি পাচ্ছে ‘আজব কারখানা’](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/06/ajob_karkhana1_bmdb_image.jpg?resize=150%2C150&ssl=1)
‘শুনতে কি পাও’ ও ‘রিজওয়ান’
দৃশ্যেরা আমাদের আটকায়ে রাখে কিংবা আমরা দৃশ্যের মধ্যে আটকায়ে থাকি। এই যেমন আমরা দেখি সুতারখালি গ্রামের রাখী, নরম শাড়ি আর তীক্ষ্ণ কোমর, সে যেমন বৃষ্টিতে ভিজতেসে। সৌমেন কে ডাকতেসে ঘর থেকে বাইরাও, ভিজবা আসো। কী আশ্চর্য! ঘূর্ণিঝড় আইলায় সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেসে কিছুদিন আগে এই অবস্থায় রাখীরে আমাদের লাগে – যারে বলে – প্রলয়ংকরী সুন্দর।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2024/05/sunte_ki_pao_bmdb_image.png?resize=1024%2C488&ssl=1)
‘শুনতে কি পাও’ চলচ্চিত্রের দৃশ্য
‘শুনতে কি পাও!‘ দেখতে দেখতে আমরা নিজেদের আরো আবিষ্কার করি চায়ের দোকানে যেখানে আমরা দেখি সৌমেনরা ফুঁসে উঠে, রাষ্ট্রযন্ত্রের ইনজাস্টিস নিয়ে। সেই গল্পে চিৎকার চেঁচামেচিতে আমরাও থাকি। ‘হতদরিদ্র কাকে বলে? আইলা আমাদের সবাইরে সমান করে দিসে।’
রিজাইলিয়েন্স শব্দটারে ট্রান্সলেটেড ইনটু সিনেমা বললে যা হয় তার নাম ‘শুনতে কি পাও?’ এইখানে ডকুমেন্টেশন আর ফিকশন মাখামাখি হয়ে গেসে সৌমেন রাখি আর তাদের স্বপ্নময় সন্তানের গল্পে। আমরা দেখি কীভাবে গ্রামবাসী একত্র হয়ে বাঁধ বানায় – প্রকৃতিকে পোষ মানানোর আদিম প্রচেষ্টা আমাদের চোখের সামনে জ্বলজ্বল করতে থাকে। এই সে মানুষ – কী তীব্র তার জীবন, কী অফুরান তার শক্তি । আমরা রাখীকে মুগ্ধ হয়ে দেখি যখন সে নতুন মোবাইল কিনতে যায়। ২০৫০ টাকা দামের সিম্ফোনি মোবাইল। সন্তানের জন্য নিয়ে আসে আপেল আর কমলা। দেশ ধারণা আমাদের নতুন করে ভাবায় যখন রাখি ইন্ডিয়া চলে যেতে চায় আর সৌমেন বলে এখানে তাও কিছু করে খাইতেসি ওখানে গিয়ে কী করব। এই দুর্যোগ আর তাতে দারিদ্রক্লিষ্ট মানুষের জীবন দেখাতে চান নাই কামার আহমেদ সাইমন আর সারা আফরীন, বলতে চেয়েছেন অন্য একটা গল্প। এ যেন ভিজুয়াল এথনোগ্রাফ।
আমরা পেতে থাকি সুন্দরবনের গভীরে লুকানো এক বেঁচে থাকার ঘ্রাণ আর মধু দিয়ে ভাত। আর এত কিছুর মধ্যে সেই অঞ্চলের বাচ্চারা স্কুলে গিয়ে পড়ে রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের অনেক কর্তব্য রয়েছে। গায় দেশের গান। মনে হয় এরচেয়ে করুণ সার্কাজম আগে কেউ কখনো করে নাই। আর যখন রেডিওতে বাজতে থাকে ক্লাইমেট কনফারেন্স এর খবর তখন মনে হয় দূর বহুদূরে বিউগল বাজে। প্যারিসের গ্রাঁ পি, মুম্বাইয়ের স্বর্ণসংখ জিতে নেওয়া এই ছবি এই এতদিনে দেখলাম কালকে শিল্পকলা একাডেমিতে।
![](https://i0.wp.com/bmdb.co/wp-content/uploads/2017/09/rizwan.jpg?resize=720%2C404&ssl=1)
মঞ্চনাটক ‘রিজওয়ান’
পাশেই এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বৃহস্পতিবার দেখে গেলাম আরেক ম্যাজিক রিয়ালিটি – ‘রিজওয়ান’। এইটা একটা ত্রিমাত্রিক নাটক। হলের প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় নাটক – আমরা যারা দর্শক হিসেবে বসে ছিলাম আমরাও ব্যবহৃত হয়েছি এই নাটকের অংশ হিসেবে। এটা ভাষায় বর্ণনার মত না। কী আলো, কী আওয়াজ, কী গান আশ্চর্যের মতন লাগে। আর অভিনেতারা ফ্রেমের মধ্যে ঝুলে ঝুলে অভিনয় করতে থাকে – এই আবার লাফিয়ে পড়ে যাচ্ছে নিচে – মনে হয় তারা কোন অবিশ্বাস্য ক্ষমতার অধিকারী। আর গল্পটা – এটা কেবল ফাতিমা আর রিজওয়ানের গল্প নয়, এটা কেবল কাশ্মীরের গোলাপ বাগানের গল্প নয় এইটা পৃথিবীর সকল নির্যাতিত মানুষের গল্প। এইটা জীবন আর মৃত্যুর মাখামাখির গল্প। বোন ফাতিমা আর ভাই রিজওয়ান যখন তাদের নিজেদের কীভাবে মেরে ফেলা হয়েছে সেই গল্প বলতে থাকে আমরা ভাবি এভাবেও গল্প বলা যায়? এটা অবিশ্বাস্য। বর্ণনার অতীত।
আমরা দেখি মানুষের তৈরি করা প্রতিষ্ঠান এই রাষ্ট্র কীভাবে মানুষকেই দুর্বল বানিয়ে রাখে তার প্রতিভাষ্য এ নাটক। তাইত চাকমা ভাষায় আমরা শুনতে পাই- এ পৃথ্বিমীত যদি হোনো ছগগ থে থাই, ছালে ছে ছগগ এ মাদিত, এ মাদিত, এ মাদিত। কিন্তু কেবল চাকমা বা কাশ্মিরীদের নয়, মাটিকে স্বর্গ মনে করে নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে পৃথিবীর যেসকল মানুষ, এই নাটক তাদের সকলের। মাঝিকে দিয়ে মৃতদের কাছে চিঠি পাঠাতে পাঠাতে এক সময় রিজওয়ান আবিষ্কার করে এ মৃত্যু উপত্যকায় চিঠি পাঠানোর মত আর কেউ নেই। দিস ইজ এ কান্ট্রি উইদাউট পোস্ট অফিস। আগা শাহিদ আলির গল্প অবলম্বনে এ কোন নাটক দেখালেন সৈয়দ জামিল আহমেদ? আমাদের ঈদ উৎসবে আগে কখনো নাটক যুক্ত হয় নাই। তিনি করে দেখালেন। আর ফলাফল? হলভর্তি উপচে পড়া মানুষ। বসার জায়গা পাওয়া কঠিন।
কে বলে এসবের দর্শক নাই?
সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৭