Select Page

সালমান শাহ’র সিনেমায় সালমান ছাড়া কিছু নাই

সালমান শাহ’র সিনেমায় সালমান ছাড়া কিছু নাই

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার প্রথমে খুব সম্ভবত নাম ছিলো ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত তক’। এই নাম দিয়ে ইত্তেফাক পত্রিকায় এক পাতা জুড়ে পোস্টার হয়েছিলো মনে হচ্ছে। আমাদের পত্রিকা রাখা হতো না। পত্রিকা রাখতো টিএন্ডটি অফিস আর শামীম ভাইরা। পত্রিকা দিয়ে যেতেন বলাই কাকা। আমি টিএন্ডটি অফিসের গিয়াসুদ্দি কাকার কাছ থেকে পত্রিকা চেয়ে আনতাম। তখন হয়তো তিন ক্লাসে পড়ি, পত্রিকায় সিনেমার এই রকম নাম দেখে ভাবছিলাম এইটা কেমন নাম হলো! পরের সপ্তাহে সিনেমার নাম দেখি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। আমি পত্রিকায় ছাপা পোস্টারটা চেয়ে এনে ঘরে টানিয়ে রেখেছিলাম।


আমার দেখা সালমান শাহ’র প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নয়। ‘মহামিলন’। সোনালি টকিজের রুপালি পর্দায় এই সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। হাউসফুল ছিলো। আমি আর ছোট মামা বোধ হয়। নাকি সাথে রানা ভাই ছিলেন! মনে করতে পারছি না। এতো ভিড়! এক রকম দাঁড়িয়ে সিনেমা দেখতে হয়েছিলো। এরপর দেখেছি অন্তরে অন্তরে। অন্তরে অন্তরে দেখেছি ভিসিপিতে। কোন এক হালকাতায় ভিসিপি এনেছিলো বাজারে, সেখানে দেখেছি। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দেখে এসে লিটা বললো, সিনেমাটা নাকি দেখা উচিত। লিটা ছিলেন পাশের বাসার মেয়ে। সহপাঠী। আমার হাতে তখন টাকা নাই। আত্মীয় স্বজনও কেউ আসছিলো না তখন। লিটা বললো যে, সে আমাকে দশটি টাকা দেবে। বিনিময়ে আমি তাকে আমার ঘুড়ি উড়ানোর নাটাইটা দিয়ে দিলাম। যদিও সে নাটাইটা নেয়নি শেষ অবধি। আমি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দেখে আসলাম। আর প্রেমে পড়ে গেলাম আর জনের। সে দেখতে মৌসুমীর মতো। পাঁচ ক্লাস কোন মতেই প্রেমে পড়ার বয়স নয়, কিন্তু পড়ে গেলে আমি কী করবো!


সালমান শাহ ছিলো শম্পার প্রিয় নায়ক। আমি বলতাম, এটা কোন কথা! মুখ লম্বা নায়ক! নায়ক হলো রুবেল, গোল মুখ। কুংফু ক্যারাতি জানে। ইত্যাদি। কিন্তু শম্পা বলেছিলো, নায়ক হইতে হলে অভিনয় জানতে হয়। সালমান শাহ অভিনয় জানে। আমি পাত্তা দেই নাই। কিন্তু সালমান শাহ যেদিন মারা গেলেন, সেইদিন মন খারাপ হলো খুব। সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর দেখলাম ‘স্বপ্নের পৃথিবী’। অসাধারণ! ‘তুমি আমার মনে মানুষ মনেরই ভেতর!’ আর সালমানের প্রেমে পড়লাম। এরপর সালমান শাহ্’র সব সিনেমায় দেখেছি। বহুবার। এখনও দেখি। সালমান শাহ’র সিনেমাগুলোতে সালমান শাহ ছাড়া কিছু নেই। শুধু সালমান শাহকেই দেখি।


আমি রাশিতে বিশ্বাস করি না। তারপরও বছরের বিস্তর পার্থক্য থাকলেও সালমান শাহ আর আমার জন্মতারিখ খুব কাছাকাছি বলে আমার মনে হয়, সালমান শাহ’র মানসিক সংকটগুলো বোধ হয় আমি কিছুটা অনুভব করতে পারি। আদতে হয়তো পারি না। এইসব মনের কল্পনা। ভক্তরা হয়তো এইরূপ সাযুজ্য খোঁজে। যাইহোক, আজ সালমান শাহ’র আরটা জন্মদিন চলে গেলো। এই নায়ক আমাদের শৈশবের কৈশোরের তারুণ্যের। আমরা তাঁকে বুকে লালন করেই বড় হয়েছি। প্রেম শিখেছি, জীবনে হেঁটেছি। তাঁর জন্য ভালোবাসা।


মন্তব্য করুন