অপারেশন সুন্দরবন: বড়লোকী ব্যাপার-স্যাপার
বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অপ্রচলিত স্থানে শুটিং করা। এখানে পুরোপুরি উৎরে গেছে টিম ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ….
সিনেমার গরীব বাজেটের দেশে বড় বাজেটের সিনেমা দেখলে সাহস জাগে। তার উপর যৌথ প্রযোজনা না হয়ে সেটা যদি হয় নিজস্ব অর্থায়নে, তাহলে তো কথাই নাই। র্যাব প্রযোজিত ‘অপারেশন সুন্দরবন’ তেমনই এক বড়লোকী সিনেমা। হেলিকপ্টার, জাহাজ থেকে গ্যাটিশ চরিত্রেও কম-বেশি চেনাজানা মুখ। ফলে সম্ভাবনার দ্যুতি দেখানোর সুযোগ থাকার কথা থাকলেও, আসলে কতটা জ্বলে উঠতে পারলো!
সিনেমাটার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল স্বাভাবিক সুযোগ-সুবিধার বাইরে গিয়ে অপ্রচলিত স্থানে শুটিং করা। এখানে পুরোপুরি উৎরে গেছে টিম ‘অপারেশন সুন্দরবন’। অবশ্য র্যাবের মতো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকাতেই এটা সম্ভব হয়েছে। নতুবা শুটিং শেষ করার আগেই হয়ত সিনেমাটা মারা যেতো।
সিনেমাটার সৌন্দর্য কিংবা পর্দায় মুগ্ধতা ছড়িয়েছে মূলত প্রাকৃতিক দূর্যোগ শুরুর পর থেকে। বৃষ্টি-ঝড়, প্রকৃতি সব মিলিয়ে বিমোহিত করেছে। পুরোটা সময়ের দৃশ্যায়ন সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
এই যে এত বড় কাস্টিং লিস্ট এটার ফলাফল কী! ফলাফল হচ্ছে, বড় বাজেট আর পর্দায় চেনা মুখের ঘাটতি না থাকা। তবে এক্ষেত্রে মেকআপ সুন্দরীর বিরক্তিকর উপস্থিতি ব্যতিক্রম। এসব ‘খুশিকরণ প্রকল্প’ কাজের সৌন্দর্য নষ্ট করে। অন্যদিকে আফসোস লেগেছে রওনক হাসানের ব্যাপ্তি কম থাকায়। আঞ্চলিক ভাষায় অতি ক্ষুদ্র সময়ের উপস্থিতিতে কী অসাধারণ যাদু দেখিয়েছেন। শতাব্দী ওয়াদুদ বা মনির খান শিমুলের মতো শক্তিশালী অভিনেতারা শোপিস হিসেবে মন্তব্যের বাইরেই থাকলো। তিনটি নারী চরিত্রই ভালো ছিল। তবে দর্শনা বণিক আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। আর হ্যাঁ, ছোট সময়ে ভালো করেছে মনোজ প্রামাণিক। রিয়াজকে হয়ত বেনজির মহোদয়কে ফলো করতে বলা হয়েছিল। সিয়াম ঠিকঠাক। রোশান গল্পের জোরে নিজেকে অন্যদের চেয়ে বেশি তুলে ধরতে পেরেছে। যে সুযোগটা অন্যরা পায়নি।
সিনেমার গানের কথা বলতে গেলে বলতে হবে আবারো সেই বৃষ্টির কথা। বাপ্পা মজুমদারের গানটি যেমন যাদুমাখা, সাথে মায়াবী দৃশ্যায়ন যেন ব্ল্যাক ম্যাজিকের মতো স্তব্ধ করে আটকে রাখলো কিছুক্ষণ। এর বাইরের গানগুলো অসংখ্য সিনেমার কোটা বরাদ্দের মতো ইমরান-কনার অসংখ্য বস্তাপচা গানের বস্তাপচা দৃশ্যায়নের হাজিরা। ইমরান নিজেই কিছুদিন পরপর এ জাতীয় সস্তা গানের মিউজিক ভিডিও হাজির করে।
সাউন্ড ডিজাইন অতি উত্তম। ক্যামেরার কাজ ও সম্পাদনা খুবই ভালো। কালারের কথা বলতে পারবো না, যেহেতু ‘আনন্দ’ হলে দেখেছি। সিনেমার গল্পে অপারেশনের পাশাপাশি শুধুমাত্র রোশানের সম্পর্কের অংশটুকু রাখলেই হতো। তিনজনের প্রেম থাকতেই পারে। তবে সেটা অতি টানাটানিতে গল্পকে হালকা করেছে। মনোজের প্রেমের পর পাগলা দৌড়টা ভালো ছিল। এই সিনেমার আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সিনেমাতে লিড হিরো বলে কিছু নাই। পজিটিভ চরিত্রের সবাই হিরো এখানে।
রোশানের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়াটা ছিল হাস্যকর। জঙ্গী আক্রমণ এবং নেটওয়ার্ক জ্যামের ফলে তাৎক্ষণিক হয়ত খবর পৌঁছানো যায়নি। কিন্তু দিন শেষে তো জানানো যেতই। অন্যদিকে যার বিয়ে/এঙ্গেজমেন্ট, সে তো সেদিন বহুদূরে ডিউটিতে থাকার কথা না। অবশ্য এখন অনেকে হেলিকপ্টারে শ্বশুরবাড়ি যায়। তেমন কোন পরিকল্পনা থাকলে তা সংলাপে আসতে পারতো।
আমরা দূর থেকে র্যাবকে দেখি ভাল-মন্দ উভয় ভাবনায়। কিন্তু তাদের যে কখনো কখনো ভয়াবহ সংকটের ভেতর দিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর সাথে লড়তে হয়, তারই প্রামাণ্য যেন ‘অপারেশন সুন্দরবন’। সিনেমাটা দেখে ভালো লেগেছে। ক্যানভাস বড় ছিল। তবে দীর্ঘদিন মনে রাখার বা টিকে থাকার কারণ নাই।
টাকা এবং ক্ষমতাওলা প্রযোজকের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, নির্মাতা সিনেমা নিয়ে ইচ্ছেমতো খেলতে পারে। যা একজন নির্মাতার জন্য সবচেয়ে বড় আর্শিবাদ। আর্মি, র্যাব, পুলিশ থেকে শুরু করে কর্পোরেট হ্যাডমওলাদের সিনেমা প্রযোজনা এবং আমজনতার জন্য কম খরচের সিঙ্গেল স্ক্রীন নিয়ে ব্যবসায় আসা এই সময়ের জন্য খুব জরুরি। তাদের অংশগ্রহণ ঢাকাই সিনেমাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে বড় ভুমিকা রাখবে।
টিকিট কেটে হলে বসে সিনেমা দেখুন। অধিকার নিয়ে তালি কিংবা গালি দিন হল থেকে বেরিয়ে। জয় হোক বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের।
আনুমানিক ১০ মিনিট পর থেকে সিনেমাটি দেখেছি। ফলে শুরুর এনিমেশন এবং বলা গল্পটি দেখা হয়নি।