Select Page

অসাধারণ না হলেও উপভোগ্য ‘গুণিন’

অসাধারণ না হলেও উপভোগ্য ‘গুণিন’

বেশ অনেকগুলো কারণেই গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘গুণিন’ আলোচনায় ছিল। শিল্পী তালিকা, টিজার, পোস্টার এমনকি ট্রেলারেও আগ্রহ ধরে রাখার কাজটি বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে নির্মাতা ও তার টিম। সেলিমের নামটাই হলে অনেক দর্শককে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ; বিশেষ করে যারা ‘মনপুরা’ বা ‘স্বপ্নজাল’ দেখেছেন। সেই টানেই হোক বা প্রতিভাবান নবীন ও প্রবীণের অভিনয় দেখার আগ্রহ থেকেই হোক দেখে আসলাম দুই ঘন্টা ব্যাপ্তির ‘গুণিন’।

হাসান আজিজুল হকের ‘গুণিন’ নামের ছোট গল্প অনুসারে এ সিনেমাটি নির্মিত। নির্দিষ্ট সময় বা কাল উল্লেখ না করেই গ্রামীণ যে সমাজ ব্যবস্থা, জীবন যাপন, অন্ধ বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের মেলবন্ধন সাথে নারী-পুরুষের প্রেম, সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা, ভাই-ভাইয়ের শত্রুতা সবই ছিল এই সিনেমায়।

‘গুণিন’-এর সবচেয়ে বড় সফলতা বা পজিটিভ দিক হলো প্রতিটা চরিত্রেই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নিজেদের সেরাটাই দিয়েছেন। দিলারা জামান, আজাদ আবুল কালাম, শিল্পী সরকার অপু বা ঝুনা চৌধুরীর মতো দক্ষ শিল্পীরা তাদের চরিত্রের স্পেস অনুযায়ী যতটা সময় স্ক্রিনে ছিলেন একেবারেই হতাশ করেননি। বিশেষ করে নাম ভূমিকায় আজাদ আবুল কালামের অভিনয় আরও একবার তাকে প্রমাণ করলো। আবার মুস্তফা মনোয়ার, ইরেশ যাকের, শরীফুল রাজ, পরীমনিও কম যান না। বিশেষ করে এই তিন দক্ষ অভিনেতা ‘গুণিন’ সিনেমার প্রাণ একথা বললেও ভুল না। রহম, আলী এবং রমিজ এই তিন ভাইয়ের চরিত্রে তারা তিনজন তাদের সেরাটাই দিয়েছেন।

রাবেয়া চরিত্রে পরীমনির ক্যারেক্টারের গুরুত্ব অনুযায়ী তার উপস্থিতি যতটা সময় ছিলো তিনি সুবিচার করেছেন। গ্রামের প্রভাবশালী মিয়া বাড়ির সুন্দরী কন্যা হিসেবে পরীমনির সৌন্দর্য্য পর্দা জুড়ে আলো ছড়ায়। এটাও সত্য প্রতিটা চরিত্রই যে অনেক স্পেস পেয়েছে তেমনটা নয় তবে আক্ষেপ বা খারাপ লাগার জায়গায় একটি নামই নিতে হয় সেটা হলো নায়লা আজাদ নূপুর। এই অভিনেত্রীকে অতীতেও যোগ্যতা অনুসারে কাজে লাগানো হয়নি। এত বছর পরে স্ক্রিনে তার অভিনয় ততটা পাওয়া যায়নি এটা আক্ষেপ হিসেবেই রয়ে যাবে। এছাড়া বাকি সবাই ছিলেন অসাধারণ। শুধু সাবলীল অভিনয় দক্ষতা দেখার জন্য হলেও ‘গুণিন’ দেখা যায়।

কারিগরি দিক থেকে বাংলাদেশের সিনেমা অনেকটাই যে এগিয়েছে তার প্রমাণ ‘গুণিন’। অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি, গল্প ও চিত্রনাট্য অনুযায়ী লোকেশন, সুন্দর বিজিএম, কালার গ্রেডিং সব কয়টা ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যুক্ত সবাই দারুণভাবে দায়িত্ব সামলেছেন। সংলাপ মানানসই, তবে গ্রামের গল্প হলেও নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলের ভাষার ব্যবহার হয়নি। চলিত, সাধু, আধুনিক কিছুর সংমিশ্রণে সংলাপ শুনতে মন্দ লাগেনি তবে এদিকটায় হয়তো আরও একটু মনোযোগী হলে ভালো কিছুই হতো। কস্টিউম ডিপার্টমেন্টও প্রশংসনীয়।

হাসান আজিজুল হকের মূল গল্পটা আসলে ছোট গল্প এবং নির্মাতা সেই গল্পটাই সেলুলয়েডে তুলে ধরেছেন তাই অনেকের কাছেই ‘গুণিন’ স্লো বা কাহিনি এগোচ্ছে না বলে মনে হতেই পারে। নির্মাতা বা চিত্রনাট্যকার ক্ল্যাইমেক্স তো বটেই সাথে গল্প নিয়ে আরো কিছু উপাদান যোগ করলে সেটা হয়তো সিনেমায় একটা গতি এনে দিতো যা দর্শকদের হলে দুই ঘন্টা বসে সিনেমাটি উপভোগ করতে সাহায্য করতো।

‘মনপুরা’ বা ‘স্বপ্নজাল’ যারা দেখেছেন তারা জানেন বা বোঝেন যে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সিনেমায় ‘পাপবোধ’ বা ‘আত্ম-জিজ্ঞাসা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোন অপরাধ করার পরে তা নিয়ে আত্মগ্লানিতে ডুবে থাকার ব্যাপারটা নান্দনিক পর্যায়ে নিয়ে যান সেলিম। সেই হিসেবে ‘গুণিন’-এও পাপবোধ আছে কিন্তু দর্শক সেটার সঙ্গে রিলেট করার সুযোগ পান না; তাই অতটা প্রভাব ফেলে না যতটা ফেললে সিনেমাটি মনে দাগ কেটে যেতো।

সব মিলিয়ে, ‘গুণিন’ এই অস্থির সময়ের বিচারে বাংলাদেশের সিনেমায় একটি মৌলিক গল্পের এক সুন্দর প্রচেষ্টা; তবে নান্দনিক বা অসাধারণ কিছু নয়। এ গল্পের প্রেক্ষাপটে ৫০ দশক হতে পারে আবার ৭০ দশক কিন্তু গল্পের আবেদন এবং তার যথাযথ চিত্রায়ণ একবিংশ শতাব্দীতেও মনে ভালো লাগা নিয়ে আসে। সুস্থধারার বাণিজ্যিক সিনেমা হিসেবে ‘গুণিন’ ব্যতিক্রম একটি নিদর্শন সে জন্য এর পুরো টিম সাধুবাদ পেতেই পারে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আফজালুর ফেরদৌস রুমন

শখের বশে চলচ্চিত্র ও নাটক নিয়ে লিখি

মন্তব্য করুন