Select Page

‘আনন্দ অশ্রু’তে রয়ে গেলেন শিবলি-সালমান

‘আনন্দ অশ্রু’তে রয়ে গেলেন শিবলি-সালমান

৯০ দশকের অকাল প্রয়াত সুপারস্টার সালমান শাহ যতগুলো সিনেমায় নিজের অভিনয়ের জাত চিনিয়েছিলেন তার অন্যতম শিবলি সাদিকেরআনন্দ অশ্রু’।

শাবনূর, সালমান ও কাঞ্চি

গুণী পরিচালক শিবলি সাদিকের সঙ্গে সালমানের তিনটি সিনেমা অন্তরে অন্তরে, আনন্দ অশ্রু ও মায়ের অধিকার; সবকটিই ব্যবসা সফল। দুর্ভাগ্য যে ‘অন্তরে অন্তরে’ ছাড়া বাকি দুটোই মুক্তি পায় সালমানের মৃত্যুর পর।

সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলে এক বিকেলে এক বন্ধুর সঙ্গে সিনেমাটা দেখতে যাই। রোমান্টিক গল্পের কিন্তু পরিণতিটা বেদনাদায়ক বা বিয়োগাত্মক। ধনী বাবার সন্তান সালমান যে কিছুটা ভাবুক প্রকৃতির। গান, কবিতা লেখা যার নেশা। একদিন ছুটিতে গ্রামে যায় কিছুদিন কাটানোর জন্য। গ্রামের বাড়িতে চাচা হুমায়ূন ফরীদি বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনা করেন। গ্রামের মেয়ে শাবনুরের সঙ্গে পথে পরিচয়, যে খুব চঞ্চলা ও শিশুসুলভ আচরণে অভ্যস্ত। 

সালমান-শাবনূরের প্রেম হয় কিন্তু তা ফরীদি মেনে নিতে পারেন না। চিন্তা করে ভাতিজা সালমানকে পাগল সাজিয়ে সম্পত্তি গ্রাস করতে। পরিকল্পনা মতোই ইনজেকশন দিয়ে পাগল বানিয়ে শহরে পাঠিয়ে দেয় তার বাবার কাছে। সালমানকে সুস্থ করতে এগিয়ে আসে বান্ধবী কাঞ্চি, যে কিনা তাকে ভালোবাসে। 

সালমান যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় সেখানে ঘটনাক্রমে কাঞ্চির সহায়তায় নার্স হিসেবে যোগ দেয় শাবনুর। শাবনূর যে সালমানকে চিনে তা কাউকে বুঝতে দেয় না। সবশেষে সালমান-শাবনূরের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সিনেমার সমাপ্তি। সালমানের মৃত্যুর পর পর্দায় আবারও মৃত্যু দেখাটা দর্শকদের মনে দাগ কাটে।

‘আনন্দ অশ্রু’ দেখার সঙ্গে একটা মজার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। হল থেকে বের হওয়ার পর দেখি আমাদের কারো পকেটেই রিকশায় ঘরে ফেরার মতো টাকা অবশিষ্ট নেই। কোন উপায় না দেখে সিনেমাটি নিয়ে গল্প করতে করতে ৩ কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে ঘরে ফিরি।

শিবলি সাদিক

শিবলি সাদিকের সহজ-সরল গল্পের এই সিনেমায় মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল গানগুলো।  অর্থাৎ নব্বই দশকের একটা সার্থক মিউজিক্যাল রোমান্টিক গল্পের উদাহরণ ‘আনন্দ অশ্রু’।  আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ও মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা এবং আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুর করা প্রতিটি গানই ছিল শ্রুতিমধুর, যা সিনেমাটি মুক্তির আগেই ভক্ত শ্রোতারা লুফে নেয়। তুমি আমার এমনই একজন, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, উত্তরে ভয়ংকর জঙ্গল, থাকতো যদি প্রেমের আদালত গানগুলো রেডিও-টেলিভিশনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। 

এখনো সালমানের সিনেমার গান নিয়ে অনুষ্ঠানে হলে ‘আনন্দ অশ্রু’র ২-৩টি গান আজকের শিল্পীদের কণ্ঠে থাকে। ‘তুমি আমার এমনই একজন, যারে এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না এই মন’ গানটি পর্দায় দেখার সময় দর্শকের চোখ টলমল করেছিল, অনেকে কেঁদেও ফেলেছিলেন। হারানো তারকাকে পর্দায় এমনভাবে উপস্থাপন করাটাই একজন পরিচালকের অনেক বড় সার্থকতা যা সবাই পারে না। শিবলী সাদিক পেরেছিলেন। আজ শিবলি সাদিক ও সালমান শাহ দুজনেই আমাদের মাঝে নেই কিন্তু দর্শকদের মাঝে দুজনেই রয়ে গেছেন রয়ে গেছেন ‘আনন্দ অশ্রু’তে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

কবি ও কাব্য

আমি ফজলে এলাহী পাপ্পু, কবি ও কাব্য নামে লিখি। স্বর্ণযুগের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র এবং বাংলা গানকে এ যুগের সকলের কাছে পৌছে দেয়ার আগ্রহে লিখি।

মন্তব্য করুন