Select Page

আনন্দ দিয়েছে ‘কাইজার’

আনন্দ দিয়েছে ‘কাইজার’

কাইজার ভালো না মন্দ, দেখব কী দেখব না, নিশোর কাজ আর কত দেখবো! – এসব ভাবার আগে কয়েকটা প্রশ্ন নিজেকে কয়েকটা প্রশ্ন করলাম। আমরা আর কতকাল ব্যোমকেশ, ফেলুদা, কিরীটি, কাকাবাবুর অবলম্বনে তৈরি কাজগুলো দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবো। ‘মুন্সিগিরি’ দেখার সময়েও যেমন এর উদ্যোগটাকে ‘স্বাস্থ্যকর’ বলেছিলাম, ঠিক তেমনি অন্তত এইটুকু আনন্দ অবশ্যই পেয়েছি আরেকজন ডিমপির এডিসি কাইজারকে দেখে।

কাইজার এর প্রথম সিজনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল কয়েকটি কারণে। আমাদের দেশে হইচইয়ের যে কাজগুলো এখন অব্দি হয়েছে তার কোনটার দ্বিতীয় সিজন আসেনি। কখনো নির্মাতা নিজেই দ্বিতীয় সিজন নিয়ে ভেবে প্রথমটা বানান নি আর কখনো হইচই চায়নি সিরিজটা আর বাড়াতে। সাম্প্রতিককালে ‘মহানগর’, ‘তাকদীর’, ‘সাবরিনা’ কিংবা ‘রিফিউজি’ দেখেও সেগুলোর দ্বিতীয় সিজন নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে, অনেকে অনেক তত্ত্বও দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু হইচই অফিসিয়ালি কোনটারই পরের সিজন এনাউন্স করেনি। আমি খুব ভাল সম্ভাবনা দেখছি একেবারে কয়েক সিজনে খুব ভালভাবে টানার মত এই সিরিজ ‘কাইজার’কে।

ট্রেলার দেখে বেশিরভাগ বুঝে গেছেন কাইজার একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা যার আবার গেম এর প্রতি আসক্তি আছে আর ব্যক্তিগত জীবনে আছে একটা বিচ্ছেদের গল্প। ঢাকার গুলশানে একই ফ্ল্যাটে মরে পড়ে থাকা দুই তরুণীর মৃত্যু রহস্য উন্মোচন আর এই মার্ডার ঘিরে একটা থার্ড পার্টির স্বার্থের ব্যাপার নিয়ে সিরিজের গল্প – তাও আন্দাজ করেছিলাম। সিরিজেও তাই দেখেছি আরো কিছু লেয়ার নিয়ে। কাইজারের পেশাগত আর ব্যক্তিগত জীবনকে এখানে আলাদাভাবে একটা স্ক্রিন প্রেজেন্স দেয়া হয়েছে ভাল লেখায় চরিত্রগুলোকে সাজিয়ে। ছোটবেলা থেকে তিন গোয়েন্দার মত কাইজাররা তিন বন্ধু বড় হয়েও গোয়েন্দা, ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট আর আইটির মানুষ হয়ে কেসে কিভাবে জড়িয়ে গেছে সেটা বেশ ভালো ছিল। মার্ডার হওয়া জয়া আর সারার ব্যক্তিজীবনকেও দেখানো হয়েছে সমান্তরালে।

মোটা দাগে ‘কে মার্ডার করেছে’ এটা বের করাই গোয়েন্দা থ্রিলারের প্রধান আকর্ষণ হলেও ‘কাইজার’ তার ব্যক্তি হিসাবে টানাপোড়েন আর তার সেন্স অফ হিউমারের ভাল খেলা দেখিয়েছে সিরিজে। মাঝের পর্বগুলো আরো জমাট হতে পারতো, ডায়লগ খুব বেশি জটিল বাক্যে না হলেও পারতো, মার্ডার মিস্ট্রিতে সাসপেন্সনের জায়গাটা জমিয়ে রেখে শেষে হুট করে না বের করলেও পারতো। তবে কাইজার পেরেছে সিরিজটিকে অর্থবহ করতে, আরো নতুন রহস্যে তার উলট পালট লাইফকে আনার সম্ভাবনা জাগাতে।

আফরান নিশো যে আর দশটা টিভি নাটকের মত ‘কাইজার’ হতে চাননি তা বোঝা গেছে। অনেক ডায়লগে পুনর্জন্ম ফিরে এসেছে, কিছু ক্ষেত্রে নিশো মুখস্থ এক্সপ্রেশনও দিয়েছেন। তবে এই কাইজার অবশ্যই ‘রেডরাম’ গোয়েন্দা আর ‘পুনর্জন্ম’র রহস্যমানব থেকে আলাদা। সত্যি ভাল অভিনয় করেছেন তিনি। এরপর ইমতিয়াজ বর্ষণ ‘ব্যারিস্টার’, দীপান্বিতা মার্টিন, শতাব্দী ওয়াদুদ দারুণভাবে চরিত্রে মিশে যেতে পেরেছেন। সৌম্য কাইজারের গেম পার্টনার, নাজিবা বাশার তার বোন হিসাবে খুব ভাইটাল কোন প্লেস পান নি, শিমুকেও কাইজারের স্ত্রী হিসাবে খুব ভাল মানিয়েছে বলা যায় না। বাকিরা যার যার জায়গায় খারাপ করেননি।

সিরিজের টাইটেল ক্রেডিট হওয়া গান ও এর চিত্রায়ণ আমার পছন্দের একটা দিক। লেখার প্রশংসা করতেই হয় স্বাধীন আহমেদের। টার্মস ও বিভিন্ন ক্লুওয়ের ব্যবহার করেছেন ভালোভাবে। তবে ডায়লগ এত জটিলভাবে না বলিয়ে বা অনেক ডায়লগ ছেটেও লিখতে পারতেন। শেষকথা, তানিম নুর ‘কাইজার’ দিয়ে আবারও লম্বা পথ হাঁটতে পারেনই, নির্মাণ ভালো হয়েছে।


About The Author

Graduated from Mawlana Bhashani Science & Technology University. Film maker and writer.

Leave a reply