Select Page

সামাজিক সচেতনতাময় ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’

সামাজিক সচেতনতাময় ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’

‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’ সামাজিক সচেতনতার ছবি। শাকিব খানের ক্যারিয়ারে পলেটিক্যাল ছবি অতীতে ছিল যেগুলোতে ‘সাহসী মানুষ চাই, আজকের সমাজ, আজকের ক্যাডার’ এর মতো ছবিগুলো তার অতীতের ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য পলেটিক্যাল ছবি।

আগে অনেক ছবিতেই ট্যাগলাইন ব্যবহৃত হত, এখন কম হয়। এ ছবির নাম বলা হয়েছে ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’। ‘আমিই বাংলাদেশ’ যদি ট্যাগলাইন হয়ে থাকে তাহলে গ্রামাটিক্যালি এমন হবার কথা ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’।

কমার্শিয়াল ছবিতে নায়কের এন্ট্রি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ছবিতে শাকিব খানের এন্ট্রি দারুণ ছিল। ছবিতে শাকিব খানই প্রধান চরিত্রে। তার চরিত্রে ছোট ছোট মেসেজ আছে। মহল্লার রাস্তা সংস্কারের গুরুত্ব উপলব্ধি করা, দুর্নীতিবাজের খোলস উন্মোচন, রাস্তায় কলার খসা ফেললে কি বিপদ হতে পারে, নেতার জন্য ট্রাফিক জ্যাম আটকে রাখা এবং রোগীর মৃত্যুর মতো বাস্তবতা, ফেসবুক লাইভে ব্যস্ত থেকে মানুষের বিপদকে খেয়াল না করা, ছিনতাইকারীকে শায়েস্তা করা এসব ছোট ছোট ঘটনা থেকে সামাজিক সচেতনতা তৈরির চেষ্টা ছিল তার চরিত্রে। ছোট ছোট মেসেজ থেকেই তার ইমেজ নেতার দিকে মোড় নেয়। তার হাত ধরেই একটা মহল্লার পরিবর্তন আসে। বুবলীর চরিত্রটি নেত্রী হবার স্বপ্ন দিয়ে তৈরি। তার রাফ ক্যারেক্টারটি এনজয় করার মতো ছিল। ঈদে দুই ছবিতে তার দুই ধরনের ইমেজ। দেখার বিষয় ভিলেন মিশা সওদাগর তুলনামূলক কম স্পেস পেয়েছে কারণ এ ছবিতে নায়ক-নায়িকার স্পেসই বেশি ছিল। বাশার দম্পতি, সুব্রতর চরিত্রগুলো প্রয়োজনমাফিক। বন্ধুদের চরিত্রগুলো অনেকটাই বিরক্তির। তবে সিয়াম নাসিরের মতো নাটকের ভিলেন চরিত্র চলচ্চিত্রে আসাটা ভালো ছিল, তার নেগেটিভ চরিত্রের অভিনয় ভালো, সম্ভাবনা আছে চলচ্চিত্রে। শহীদুজ্জামান সেলিমের চরিত্রটি অন্যান্য চরিত্রের থেকে বেটার।

ছবির একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের তফাত। ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজেদের সমস্যা সমাধান করা যায়, সরকারের নির্দিষ্ট কাজ আছে সবকিছুতে চোখ রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। সরকারি ও বিরোধী দলের প্রটোকলজনিত সিস্টেম সমস্যার সীমাবদ্ধতা ছবিতে দেখানো হয়েছে। ভিআইপি লেন ও পাবলিক লেন রাস্তায় ভিন্নভাবে রাখার প্রস্তাব করা হয় এবং এটিও সামাজিক সচেতনতামূলক মেসেজ ছিল। মিডিয়া পলিটিক্সও এ ছবির একটি দিক।

ছবিতে কমেডির চেষ্টা ছিল।

এফডিসিকেন্দ্রিক ক্লিশে সেট এ ছবির দুর্বল দিক। এফডিসির বাইরে চিন্তা করাটা সময়োপযোগী এবং সেটাই হওয়া উচিত। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও হতাশাজনক। সেইম প্যাটার্নের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দীর্ঘসময় ধরে বিভিন্ন সিকোয়েন্সে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে ফাইটিং সিকোয়েন্সের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ভালো ছিল। ফার্স্টহাফের থেকে সেকেন্ডহাফের গতি ভালো ছিল। তপু খানের প্রথম ছবি হিসেবেও তার জন্য সচেতন হবার ব্যাপার আছে পরের ছবিগুলো তাকে আরো বেটার করতে হবে।

ছবির গানের মধ্যে তাবিব মাহমুদের ‘কথা আছে’ ভাইরাল হলেও বাপ্পা মজুমদারের টাইটেল ট্র্যাকটা বেশি ভালো ছিল। বাপ্পা মজুমদারের কণ্ঠ একটা ফ্যাক্ট। ‘সুরমা সুরমা’ রোমান্টিক গান হিসেবে ভালো মানের। শেষের ‘বারুদ’ গানটি লিরিকের জন্য শুনতে ভালো লেগেছে।

গতানুগতিক হলেও ছবির গল্পে পজেটিভিটি অনেক শুধু এক্সিকিউশনে আরো সচেতনতা অবলম্বন করলে ছবিটি সুনির্মিত হত। তবে শাকিব খানের এত বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে অর্জিত স্টারডমে তার ছবি অন্যদের চেয়ে ভালো চলবে এটা জানা কথা। ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’ এ ফ্যাক্টেই সুপারহিট হয়ে যাবে এটা বলাই যায়।

রেটিং – ৬/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন