Select Page

হরর রিয়েলিটির ‘জ্বীন’

হরর রিয়েলিটির ‘জ্বীন’

বাংলাদেশে যে জনরার ছবি সবচেয়ে কম হয়েছে সেটা হচ্ছে হরর জনরার ছবি। এ ধরনের ছবি বানানোর মতো লজিস্টিক সাপোর্ট বা মেধা আমাদের এখানে সেভাবে গড়ে ওঠেনি। সেদিক থেকে ঢালিউডে যতটুকুই হরর ছবি হয়েছে তার মধ্যে ‘জ্বিন’ সর্বশেষ সংযোজন।

আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে হরর ছবির মধ্যে বেস্ট ছিল কাজী হায়াতের ‘রাজবাড়ি’। এ ছবিটি সাদাকালো হলেও ক্লাসিক একটা হরর ছবি, নির্মাণ খুবই ভালো ছিল। এর বাইরে ‘দেবী’ ও ‘স্বপ্নের ঘর’ ব্যতীত যেগুলো হয়েছে সেগুলোকে জোর করে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করানো হয়েছে। ‘ডাইনি বুড়ি’ নামের একটি ছবি হয়েছিল যেটি অনেকেই দেখেছি কিন্তু বিরক্তির উদ্রেক করেছে। ‘স্টোরি অফ সামারা, সেদিন বৃষ্টি ছিল’-র মতো ব্যর্থ প্রচেষ্টার হরর ছবিও হয়েছে। এখন ‘জ্বীন’ যুক্ত হয়েছে সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে। নাদের চৌধুরী সিনিয়র একজন অভিনেতা ও নির্মাতা, তাঁর প্রচেষ্টায় ‘জ্বীন’ মোটামুটি মানের হরর ছবি হয়েছে। হরর ছবির রিয়েলিটিতে যে ধরনের সীমাবদ্ধতা এদেশে আছে তার মধ্যেই এ ছবি মোটামুটি মানের হয়েছে।

বলিউডে রাম গোপাল বার্মা-র ‘রাত্রি’ নামে একটি হরর মুভি আছে। ছবির সেট দেখলে বাজেট খুব বেশি মনে হবে না কিন্তু ভয় পাবার মতো উপকরণ ছিল একশোতে একশো। সেই ধরনের মেধা আমাদের এখানে হরর ছবিতে আসেনি কিংবা এ জনরাটি অবহেলিত থেকেছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। ‘জ্বীন’ এ রিয়েলিটিতেই নির্মিত হয়েছে।

হরর ছবির প্রধান শর্ত হলো ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা এবং অভিনয়ে সেটা বুঝিয়ে দেওয়া। ভয়ের পরিবেশ তৈরির জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হরর ছবিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এ ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যথেষ্ট ভালো ছিল শুধু ভয়ের পরিবেশ তৈরিতে যে ধরনের দৃশ্যায়ন দরকার পূজাকে দিয়ে সেগুলো ততটা ফুটিয়ে তোলা যায়নি। চোখের ব্যবহার, রেলিংয়ে হাঁটাহাটি, আয়নার সামনে অদ্ভুতভাবে কথা বলা এগুলো ওভারঅল পারফেক্ট ছিল না।
তবে পূজার অভিনয় নিয়ে কোনো কমতি নেই, তার জায়গায় সে পারফেক্ট ছিল। দিন বা রাত বিষয় না ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা যায় যে কোনো সময় যদি সেই লজিস্টিক সাপোর্ট থাকে।

ছবির প্রধান চরিত্রে পূজা চেরী। পূজা বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে ন্যাচারাল অভিনয় করা নায়িকা। তার মতো এত কম বয়সে এত ন্যাচারাল অভিনয় করা নায়িকা ডিজিটাল সময়ের ছবিতে আর আসেনি। পূজা ‘জ্বিন’ সত্তাকে ধারণ করে পুরো ছবিতে অভিনয় করেছে। সজল ও পূজা ভালোবেসে বিয়ে করে। তাদের দাম্পত্য জীবনে হঠাৎ জ্বীনের আবির্ভাব ঘটে এবং তাদেরকে নতুন একটা সমস্যার সম্মুখীন করে। রোশানের চরিত্রটি তার জন্য সম্পূর্ণ নতুন ছিল এখন পর্যন্ত সে যত ছবি করেছে। সজলের বন্ধুর চরিত্রে জ্বীনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয় সে। রোশানের ভয়েস তাকে বর্তমানের অন্যান্য নায়কের থেকে আলাদা করেছে। সজলও ভালো অভিনয় করেছে। জান্নাতুন নূর মুনের ন্যাচারাল ছিল।

ছবিতে হাফেজের চরিত্রটি বিশেষ একটি চরিত্র ছিল। তার ধর্মীয় ব্যাখ্যাটি ছবির ওভারঅল ব্যাখ্যার মধ্যে সেরা। তার বলা সংলাপ-‘সায়েন্সের ব্যাখ্যা যেখানে শেষ ধর্মের ব্যাখ্যা সেখানেই শুরু’ বেস্ট সংলাপ ছবির।

কমার্শিয়াল ছবির বৈশিষ্ট্যে এ ছবি পারফেক্ট। হরর বৈশিষ্ট্যের বাইরেও রোমান্টিক গান ‘ঢঙ্গী ছেলে’ গানটি ভালো ছিল। টাইটেল ট্র্যাকটি রক ধাঁচের করা হয়েছে।

‘জ্বীন’ ছবির দর্শক রেসপন্স ভালো যাচ্ছে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত মহিলা দর্শক এ ধরনের ছবি বেশি পছন্দ করবে এবং তারা একা কখনো ছবি দেখতে আসে না আসলে অনেকজনকে সাথে করে আনে। সেদিক থেকে এ ছবি দর্শক ভালো পাবে। এভাবে ‘জ্বীন’ ছবি হিট হয়েও যেতে পারে।

রেটিং – ৬.৫/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন