Select Page

ঈদুল আজহা ২০২২: শাকিববিহীন মাঠে জনপ্রিয়তা প্রমাণের লড়াই!

ঈদুল আজহা ২০২২: শাকিববিহীন মাঠে জনপ্রিয়তা প্রমাণের লড়াই!

ঈদুল আজহা ২০২২ অন্য যেকোনো ঈদের তুলনায় একটু আলাদা। হল মালিকদের জন্যে একটু মন খারাপের-ই বটে! কারণ প্রায় ১৭ বছর পর শাকিব খান অভিনীত কোনো সিনেমা ঈদে রিলিজ পাচ্ছে না।

মোটামুটি ২০১০ সাল থেকে শাকিব খান হলো সিনেমাহল মালিকদের কাছে এক অন্যরকম আস্থার নাম। সেসময়কার শাকিবের ক্রেজ ছিল গগণচুম্বী। এমন ঈদও গেছে, যেখানে শাকিব খান অভিনীত ৫টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে! শাকিব খান না থাকলে সেই সিনেমা বুকিং এজেন্টও নিতে চাইতো না। যার ফলে দেখা যেতো অনেক ভালোমানের বাণিজ্যিক সিনেমা কম হল পেতো। শাকিবকেন্দ্রিক সিন্ডিকেটের বাইরের সিনেমাগুলো দর্শকের কাছে তেমন পৌছাতে পারতো না।

তবে ২০১৬ সালের পর থেকে দৃশ্যপট কিছুটা পরিবর্তন হতে শুরু করে। শাকিব বলয়ের বাইরেও এই সময়ে ‘বাদশা দ্য ডন’, ‘বস ২’, ‘পোড়ামন ২’, ‘শান’ ইত্যাদি চলচ্চিত্রগুলো ভালো ব্যবসা করে। বিপরীতে শাকিব খানও ঈদে রিলিজ দিয়ে বেশ কয়েকটি ফ্লপের দেখা পায়। যার মধ্যে ‘রংবাজ’, ‘অহংকার’, ‘পাংকু জামাই’, ‘ মনের মতো মানুষ পাইলাম না’, ‘বিদ্রোহী’ অন্যতম।

শাকিববিহীন এই ঈদে রিলিজ পাচ্ছে তিনটি চলচ্চিত্র। শাকিব মাঠে না থাকায় চ্যালেঞ্জ এদেরও আছে। আগে এই তিন চলচ্চিত্র সম্পর্কে একটু জেনে নেই—

দিন – The Day

২০১৪ সালের রোজার ঈদে মুক্তি পেয়েছিল অনন্ত জলিল পরিচালিত, প্রযোজিত ও অভিনীত ‘মোস্ট ওয়েলকাম ২’। সেই সিনেমার পর অনন্ত জলিল সিনেমাজগতকে একপ্রকার বিদায় বলে দিয়েছিলেন। প্রায় ৮ বছর পর পুনরায় আরেকটি ঈদের সিনেমা দিয়েই তিনি বড়পর্দায় কামব্যাক করছেন। এবার প্রত্যাবর্তনটাও হচ্ছে বেশ জাঁকজমকভাবে। ইরানের সাথে প্রথমবারের মতো কোনো যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। পরিচালনায় ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম। অভিনয়ে যথারীতি ওনার বিপরীতে রয়েছেন ওনার বাস্তবজীবনের সঙ্গী বর্ষা। রয়েছে একঝাঁক অজানা-অচেনা বিদেশি অভিনয়শিল্পী।

প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই চলচ্চিত্র, এমনটাই দাবী করে আসছেন অনন্ত জলিল। চলচ্চিত্রটির শুট হয়েছে ৪টি দেশে; বাংলাদেশ, ইরান, তুরস্ক ও আফগানিস্তানে। ঈদ উপলক্ষে যত সিনেমাহল খুলছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশ সিনেমাহলই ‘দিন’ এর দখলে। সিনেপ্লেক্সগুলোতেও অন্যান্য সিনেমাগুলোর থেকে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি শো পেয়েছে ‘দিন’। এতে করে বোঝা যায়, ‘দিন’ নিয়ে হলমালিকদের প্রত্যাশা রয়েছে।

অনন্ত জলিলও বসে নেই। অনলাইন প্রমোশন করে আসছিলেন বহু আগে থেকেই। বিগত এক মাসে করেছেন মাঠ পর্যায়ের প্রমোশন। ঢাবি, জাবি সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ‘দিন’ এর ট্রেলার লঞ্চ ইভেন্ট করেছেন। স্টুডেন্টদের প্রতি বিশেষ আহবান জানিয়েছেন। এছাড়া, হল থেকে সঠিক রিপোর্ট আদায় করার জন্যে, গঠন করা হয়েছে ‘টিম অনন্ত’। এরা সিনেমাহলগুলোতে গিয়ে সঠিক হিসাব আদায় করে নিবে।

আগ্রহ আছে দর্শকদের মাঝেও। ইতোমধ্যেই ফেইসবুক ও ইউটিউব উভয় জায়গাতেই ‘দিন’ এর ফাইনাল ট্রেইলার মিলিয়ন ভিউজ অতিক্রম করেছে। স্পাই অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা হলেও ফ্যামিলি অডিয়েন্সের এই সিনেমার প্রতি আগ্রহ আছে। তাই সবমিলিয়ে এই সিনেমা নিয়ে প্রত্যাশা অনেক বেশি!

পরাণ

প্রায় ৪ বছর পর ঈদের চলচ্চিত্র নিয়ে আসছেন রায়হান রাফী। এর আগের ঈদ রিলিজ ‘পোড়ামন ২’-এর মতো এটাও একটি প্রেমের চলচ্চিত্র। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম, শরীফুল রাজ ও ইয়াশ রোহান।

ধারণা করা হচ্ছে, চলচ্চিত্রটি ২০১৯ সালের চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যা অবলম্বনে সাজানো। যদিও নির্মাতারা এই ব্যাপারে কোথাও মুখ খোলেননি। শুধুমাত্র বলা হচ্ছে, এটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। ‘পরাণ’ দিয়ে প্রায় ৭ বছর পর ঈদে সিনেমাহলে আসছেন বিদ্যা সিনহা মীম। তার সবশেষ ঈদ রিলিজ হলো ‘পদ্ম পাতার জল’। মুক্তি পেয়েছিল ২০১৫ সালে। তবে অন্য দুই নায়কের এটাই প্রথম ঈদ রিলিজ।

ইয়াশ রোহানের তুলনায় শরীফুল রাজের পারফরম্যান্স ট্রেলারে বেশি নজর কেড়েছে। এফডিসি সংশ্লিষ্ট অনেক পরিচালকই শরীফুল রাজকে আলাদা নজরে দেখা শুরু করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই সিনেমা দিয়েই রাজের ক্যারিয়ার ঘুরে যেতে পারে… মালেক আফসারী, সোহানুর রহমান সোহান সহ অনেক সিনিয়র পরিচালক ট্রেলার/সিনেমা দেখে রাজের প্রশংসা করেছেন।

চলচ্চিত্রটি করোনাভাইরাস আসার আগেই কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রিলিজ দেওয়ার মতো উপযুক্ত ডেট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এই ঈদেও আসার কথা ছিল না। নেহায়েত ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ ও ‘অপারেশন সুন্দরবন’ পিছিয়ে যাওয়াতে ‘পরাণ’ এর ঈদে অন্তর্ভুক্তি। তাই এ সিনেমা নিয়ে সেরকম প্রমোশন হয়নি। তবে গান ও ট্রেলার দর্শকদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। সবমিলিয়ে ১১টির মতো সিনেমাহলে রিলিজ পেতে যাচ্ছে এটি।

সাইকো

ঈদের তৃতীয় চলচ্চিত্র এটি। নির্মাণ করেছেন অনন্য মামুন। সবশেষ ২০১৯ সালের ঈদে রিলিজ পেয়েছিল তার পরিচালিত ‘আবার বসন্ত’। ‘সাইকো’র মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিয়াউল রোশান ও পুজা চেরি। অনন্য মামুনের মতো জিয়াউল রোশানও ঈদে আসছেন ৩ বছর পর। সবশেষ ঈদ রিলিজ ছিল ‘বেপরোয়া’। এ ছাড়া পুজা চেরী এখন ঈদের চলচ্চিত্রের নিয়মিত মুখ। গত রোজার ঈদে এসেছিলেন ‘গলুই’ ও ‘শান’ নিয়ে। এবার আসছেন ‘সাইকো’ নিয়ে।

ঈদের অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলেও, ‘সাইকো’ সে তুলনায় মিশ্র থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই বেশি পাচ্ছে। ‘পরাণ’-এর মতো এই সিনেমাটিও পূর্বে ঈদে রিলিজের পরিকল্পনা ছিল না। অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই ঈদে চলে আসা। তাই সেরকম প্রমোশন হয়নি। শেষ মুহূর্তে এসে অনন্ত-মামুনের মধ্যকার বাকবিতন্ডা কিছুটা ‘সাইকো’র নেগেটিভ প্রমোশনে সাহায্য করেছে। তবে এটা যথেষ্ট নয়। ঈদে ১৫টির মতো সিনেমাহলে ‘সাইকো’ রিলিজ পেতে যাচ্ছে।

এবার ঈদে শাকিব খান যেহেতু নেই; আরিফিন শুভ, সিয়াম, বাপ্পী, মাহি, নুসরাত ফারিয়া, পরীমণিদের মতো তারকারাও নেই… তাই যারা আছে তাদের প্রতি প্রত্যাশার চাপ অনেক বেশি। এই তিন চলচ্চিত্র ঈদের চলচ্চিত্রের মতো ব্যবসা করতে না পারলে, পরবর্তীতে অনেক সিনেমাহল বন্ধ হবে। নতুনদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ বিনষ্ট হবে। আবার যদি এই তিন সিনেমা দিয়ে হলমালিকদের মুখে হাসি ফুটে, তাহলে রায়হান রাফী, অনন্য মামুনদের ওপর হলমালিকদের আস্থা বাড়বে। রাজ-রোশানদের জনপ্রিয়তা বাড়বে। তাই শাকিব বিহীন ঈদে শাকিবের অনুপস্থিতি অনুভব না হোক, ঈদের সিনেমা ঈদের মতোই ব্যবসা করুক। সেই প্রত্যাশাই কাম্য!


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র বিষয়ক ব্লগার ও ইউটিউবার

মন্তব্য করুন