Select Page

কবির বকুল: সিনেমার গানে উজ্জ্বল নক্ষত্র

কবির বকুল: সিনেমার গানে উজ্জ্বল নক্ষত্র

গত দুই দশকে চলচ্চিত্রের অন্যতম গীতিকার কবির বকুল

আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে, আমি ছুঁয়েছি তোমায়,সাগরিকা বেঁচে আছি তোমার ই ভালোবাসায়। ১৯৯৮ সাল, আইয়ুব বাচ্চু ও কনকচাঁপার গাওয়া ‘সাগরিকা’ সিনেমার এই গান তখন শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরেছিল। আলাউদ্দিন আলীর সুরে এই সিনেমায় গান লিখেছিলেন দুই বাংলার বিখ্যাত গীতিকাররা, এদের মাঝে  চলচ্চিত্রে একেবারেই  এক নবীন গীতিকারের লেখা এই গানটিই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠলো।

এই গানের বিশাল সাফল্যে গীতিকার হিসেবে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। একের পর এক গান লিখেছেন, গীতিকার হিসেবে তিনি গানের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র,বিশেষ করে গত দুই দশক ধরে তিনিই সবচেয়ে জনপ্রিয়, তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় গীতিকার কবির বকুল।

একটা গানের সৃষ্টির পেছনে আজকাল বেশিরভাগই একজনের ভূমিকাই বেশি থাকে, তিনিই গীতিকার, সুরকার থেকে গায়ক। এর মধ্যে গ্ল্যামারের আভিজাত্যে শুধুমাত্র গীতিকাররা একটু কম আলোই পেয়ে থাকেন এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবুও গান লিখে বিখ্যাত হয়ে আছেন অনেক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব। বাংলা চলচ্চিত্রে গীতিকার হিসেবে সর্বাগ্রে আছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সঙ্গে খান আতাউর রহমান, আমজাদ হোসেন, মাসুদ করিম, মনিরুজ্জামান মনির, নজরুল ইসলাম বাবু, মোহাম্মদ রফিকুজ্জামানরা নিজেদের আসনে সুপ্রতিষ্টিত। সুরকারের পাশাপাশি গীতিকার হিসেবেও বলতে গেলে সমান রাজত্ব করেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে সর্বশেষ সর্বস্তরে গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছেন কবির বকুল।

বাংলা চলচ্চিত্রে এখন জনপ্রিয় গানের খরা, তবুও গত দুই দশকের বেশিরভাগ জনপ্রিয় গানের গীতিকার তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের পড়াশুনার পাঠ চুকানোর মাঝেই গায়ক তপন চৌধুরীকে নিজের লেখা ১৩টি গান দিয়েছিলেন, সেইখান থেকেই আইয়ুব বাচ্চু বেছে নিয়েছিলেন ‘কাল সারা রাত তোমারই কাঁকন যেন মনে মনে রিনিঝিনি বেজেছে’। সোলসের নাসিম আলী খান নিয়েছিলেন ‘পথে যেতে যেতে’ গানটি, পরবর্তীতে সোলস ব্যান্ডের গাওয়া বিখ্যাত গান ‘কেনো এই নিঃসঙ্গতা’, ‘ব্যস্ততা আমাকে দেয় না অবসর’ উনারই সৃষ্টি। চলচ্চিত্রের জন্য প্রথম গান লিখেন ‘অগ্নিসন্তান’ সিনেমায়।

‘কেউ প্রেম করে, কেউ প্রেমে পড়ে’, দারুণ মুগ্ধ করা এই গান এস আই টুটুলের ক্যারিয়ারে মোড় ঘুরিয়ে দেয়, গানটি কবির বকুলেরই লেখা। দুইজনের রসায়ন খুব জমে ভালো, সেটা কণ্ঠের মাধুর্যতা থেকে সুরের মাদকতা পর্যন্ত। টুটুলের জন্য যেমন ‘যায় দিন যায় একাকী’ লিখেছেন, তেমন ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ও লিখেছেন। টুটুল নিজের গানের বাইরে যেই গানগুলোতে সুর করে নিজেকে আরো অনন্য করেছে যেমন প্রেমে পড়েছে মন, আমার মাঝে নেই এখন আমি, দুঃখটাকে দিলাম ছুটি, স্বপ্ন তুমি সত্যি তুমি এবং হও যদি ঐ নীল আকাশ। সবগুলা গানের গীতিকার কবির বকুল।

চলচ্চিত্রে জেমসের প্রথম মৌলিক প্লেব্যাক ‘আসবার কালে আসলাম একা’ থেকে হাবিব ওয়াহিদের গাওয়া ‘তোমারে দেখিলো পরান ভরিয়া’ গান লিখেছেন, আরো আছে বধূ বেশে কন্যা যখন এলো রে, এই হৃদয়ের সাদা কাগজে, এতো ভালোবাসা বেসো না আমায়, এক বিন্দু ভালোবাসা দাও থেকে ইদানীং কালের হিট গান ‘দিল দিল’ ও ‘তুই কি আমার হবি রে’ উনার ই লেখা।

প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন ‘বলো না কেন আকাশ’ গানের জন্য, এরপর ‘একটা চাঁদ ছাড়া রাত আঁধার কালো ও ‘রুপালি চাঁদ নেমেছে’ গানের জন্য। পরপর তিনবার পেয়ে হ্যাটট্টিক করেছিলেন, দুই বছর বিরতি দিয়ে আবার পান ‘আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো’ গানে, সর্বশেষ ‘রাতের সব তারা আছে’ দিয়ে ষষ্ঠবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তুলেছেন। যদিও নিজের সেরা গানগুলোর জন্য জাতীয় পুরস্কার না পাওয়াটা হয়তো অপ্রাপ্তি থেকে যাবে, তিনি আরো আগেই জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্য ছিলেন।

গীতিকার হিসেবে চলচ্চিত্রে যখন যাত্রা শুরু করেছিলেন, তখন চলছিল ঘোর অমানিশা। জীবিকার তাগিদেই হোক কিংবা মোহে বেশকিছু অশ্লীল গান লিখেছিলেন, যেগুলো ক্যারিয়ারে কাঁটা হয়ে আছে। অন্যদিকে পরিচালকের অশ্লীল দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তার সুন্দরতম গান ‘দুজন দুজনার’-এর দৃষ্টিকটু উপস্থাপন অবশ্যই পীড়া দেয়।

কবির বকুলের জন্ম ১৯৬৬ সালের ২১ নভেম্বর। পেশায় সাংবাদিক, নব্বই দশকের ভোরের কাগজ পেরিয়ে এখন আছেন প্রথম আলোতে। স্ত্রী দিনাত জাহান মুন্নী গায়িকা ও উপস্থাপিকা। তাদের রয়েছে তিনটি সন্তান।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন