আফজাল শরীফের কথা
আফজাল শরীফ স্ট্রাগল করে উঠে আসা একজন অভিনেতা। তার চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিতিই বেশি।
প্রফেশনাল মঞ্চ অভিনেতা ছিল আফজাল শরীফ। আরামবাগ গ্রুপ থিয়েটার থেকে নিজেকে তৈরি করার লক্ষ্যটা শুরু হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় ক্লাসিক নাটক ‘বহুব্রীহি’-তে অভিনয়ের মাধ্যমে টিভিতে কাজ শুরু হয়। নাটকটিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য বিটিভিতে তার দীর্ঘ অডিশন হয়েছিল।
চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ১৯৯৩ সালে গৌতম ঘোষের বিখ্যাত ‘পদ্মানদীর মাঝি’ ছবি দিয়ে। তার নাটক ও চলচ্চিত্র দুই প্ল্যাটফর্মেই শুরুটা হয়েছিল অসাধারণভাবে।
উল্লেখযোগ্য ছবি : পদ্মানদীর মাঝি, আমি এক অমানুষ, জীবনসঙ্গী, স্বার্থপর, মনের মিলন, প্রেম দিওয়ানা, আবদার, অগ্নিসাক্ষী, শক্তের ভক্ত, সন্তান যখন শত্রু, সত্যের সংগ্রাম, রাজধানী, তেজী, জামাই শ্বশুর, আকাশছোঁয়া ভালোবাসা, নারীর মন, স্বপ্নের পুরুষ, বধূবরণ, বিদ্রোহী সালাউদ্দিন, গুণ্ডা নাম্বার ওয়ান, ভাইয়া, অনন্ত ভালোবাসা, আমাদের সন্তান, বৃষ্টিভেজা আকাশ, দাদীমা, মা আমার স্বর্গ, বিয়ের প্রস্তাব, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না, সে আমার মন কেড়েছে, নিঃশ্বাস আমার তুমি, মুসাফির।
চলচ্চিত্রে আফজাল শরীফের ইমেজ গড়ে উঠেছে কমেডিয়ান হিসেবে। তার কমেডি অভিনয় মোটাদাগেই টাইপড, খুব একটা বৈচিত্র্য ছিল না। দিলদার যেভাবে সহজাত ভঙ্গিতে দর্শককে হাসাতে পারত আফজাল শরীফের সে গুণটা তেমন ছিল না। যতটুকু ছিল ততটুকু দিয়েই ক্যারিয়ার দাঁড় করিয়েছিল। দিলদারের সাথেও তাকে একই ছবিতে দেখা গেছে যেমন ‘তেজী’ ছবিতে তাদেরকে চার্লি চ্যাপলিন সাজতে দেখা গেছে। আফজাল শরীফ কমেডিতে একই স্টাইলে ডায়লগ ডেলিভারি দিত বেশি, চোখ বড় বড় করে সেইম স্টাইলে এক্সপ্রেশন দিত যার জন্য অভিনয়ে বৈচিত্র্য আসত না। চলচ্চিত্রে নাসরিন, মর্জিনাদের সাথে বেশি কাজ করেছে। তবে তার দীর্ঘ ক্যারিয়ার ছিল ৩৫ মিলিমিটার থেকে ডিজিটাল সময়ের ‘মুসাফির’ ছবিতেও তাকে দেখা গেছে। মান্না, রিয়াজদের ছবিতে তাকে দেখা গেলেও শাকিব খানের সাথে আফজাল শরীফের বোঝাপড়াটা বেস্ট ছিল। শাকিব খানের অনেক ছবিতে তাকে দেখা গেছে বিশেষ করে মামা-ভাগ্নের চরিত্রে।
আফজাল শরীফ নেগেটিভ রোলেও অভিনয় করেছিল কয়েকটি ছবিতে। এর মধ্যে ‘প্রেম দিওয়ানা, জীবনসঙ্গী, মনের মিলন, বস্তির মেয়ে, স্বার্থপর, সন্তান যখন শত্রু’ ছবিগুলো অন্যতম। ‘প্রেম দিওয়ানা’ ছবিতে এক কানে অদ্ভুত রকমের জিনিস পরে ক্যাডার সাজতে দেখা গেছে। চম্পাকে ডিস্টার্ব করে কলেজ ক্যাম্পাসে তখন মান্না তাকে শায়েস্তা করে। ‘বস্তির মেয়ে’ ছবিতে শাবনূরকে সহজ-সরল পেয়ে ডিস্টার্ব করতে দেখা যায় তবে ডাবল রোলের মধ্যে প্রতিবাদী শাবনূরের হাতে শায়েস্তা হতে হয় তাকে। পরেরগুলোতে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। ভিলেন আফজাল শরীফ টিপিক্যাল ছিল। অভিনয়ও প্রফেশনাল ভিলেন জাতীয় ছিল না।
অশ্লীল সময়ের ছবিতেও আফজাল শরীফকে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। যার জন্য তাকে নিয়ে এ জায়গাটিতে সমালোচনা হয়।
হানিফ সংকেতের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’-র মামা-ভাগ্নে পর্বের নিয়মিত অভিনয়শিল্পী ছিল আফজাল শরীফ। মামা আব্দুল কাদেরের ভাগ্নে থাকত। ভাগ্নের সব উদ্যোগই মামার কাছে ভুল মনে হত এবং শুধরে দিত।
আফজাল শরীফ একটা ইন্টারভিউতে দিলদারের ‘আব্দুল্লাহ’ ছবির মতো নায়কের চরিত্র করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল কিন্তু সে সুযোগ তাকে দেওয়া হয়নি বা তাকে নিয়ে কেউ তেমন করে ভাবেনি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিল। আফজাল শরীফের নামটি তারপরেও বাণিজ্যিক ছবিতে নিজের কাজ দিয়ে টিকে থাকবে।