Select Page

ইলিয়াস কাঞ্চন কি পরীমনির সদস্য পদ স্থগিতের পক্ষে?

ইলিয়াস কাঞ্চন কি পরীমনির সদস্য পদ স্থগিতের পক্ষে?

পরীমনির বিরুদ্ধে র‌্যাবের মামলার প্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি করে নায়িকার সদস্যপদ স্থগিত করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। এ নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। কেউ কেউ প্রশ্ন রেখেছেন, মামলায় অভিযুক্ত এই সমিতির অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা পরীমনির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

পরীমনির সদস্যপদ স্থগিতের বিষয়টি নিয়ে বলতে গিয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান গণমাধ্যমকে দেওয়া বিবৃতিতে বলেন, ‘শিল্পী সমিতির সিদ্ধান্ত জায়েদ খান একা নেন না। মিশা সওদাগরও না। পরীমনির বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা কমিটির ২১ জন সদস্যের। এমনকি আমরা আমাদের সিনিয়র শিল্পী আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল রানাসহ সবার সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি।’

পরীমনির সদস্যপদ স্থগিতের বিষয়ে কী বলেছিলেন? আদৌ বলেছিলেন কি না, জানতে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রথম আলো

‘ভেজা চোখ’ অভিনেতা বলেন, ‘ওদের জিজ্ঞেস করেন, ইলিয়াস কাঞ্চন সাহেব কী বলেছিল? আমি কিন্তু সদস্যপদ স্থগিতের ব্যাপারটি নিষেধ করছি। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তখন আমি বলেছি, একজন শিল্পীর নামে মাত্র অভিযোগ এসেছে। কোনো কিছুই প্রমাণিত হয়নি। অভিযোগ যখন প্রমাণিত হয়নি, কী কারণে তোমরা সদস্যপদ স্থগিত করবা? তারা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, আমরা তো স্থায়ীভাবে করছি না। সাময়িকভাবে করছি। তখন আমি বলেছি, এই স্থগিতই–বা কেন করবা। স্থগিত করাটা ঠিক হবে না। স্থগিতের বিষয়ে আমার মত নেওয়া হয়নি। আমাকে বলেছে, অন্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করবে। অন্যরা কী বলছে, তা তো আমি বলতে পারব না।’

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি বলেছি, সংবিধান অনুযায়ী এটা করাটা ঠিক হবে না। নিয়মানুযায়ী একজন শিল্পীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে তাকে নোটিশ করা যেতে পারে। সতর্ক করা যেতে পারে। কিন্তু সদস্যপদ স্থগিত করা, অমুক করা—এসব তো মোটেও ঠিক হবে না। কিন্তু কখনো যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তখন নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আমি আমার জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে যা কিছু বলার, বলেছি।’

‘সংবাদ সম্মেলনের আগে মিশা সওদাগর আমার সঙ্গে কথা বলেছে। আমি এ–ও বলেছি, সদস্যপদ স্থগিতের ব্যাপারটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। এখন আমার নাম বলে থাকলে, সেটা মিথ্যাচার। তবে এটা ঠিক যে আমার সঙ্গে কথা বলেছে।’

তবে এ মন্তব্যের জবাবে শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, এটা বলা কি ঠিক হবে আমার? কাঞ্চন ভাই বলেছে, শিল্পী সমিতির নেতারা যে সিদ্ধান্ত নেবে নিক।’

কিন্তু ইলিয়াস কাঞ্চন কি সদস্য পদ স্থগিতের কথা বলেছিলে? প্রথম আলো প্রশ্নের জবাবে ‘গোপনীয়তা’র দোহাই দিয়ে মুখে বন্ধ করেন আলোচিত ভিলেন, ‘এটা তো আমি তোমাকে বলতে পারব না। এটা সিক্রেসি। আমি বলছি যে আমি সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি, কিন্তু আমি কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, তা বলতে চাইছি না।’

উল্লেখ্য যে, টিভি সিরিয়াল ‘সেকেন্ড ইনিংস’-এ ইলিয়াস কাঞ্চন ও চম্পার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন পরীমনি।

এ দিকে এক প্রতিবেদনে বাংলা ট্রিবিউন জানায়, মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় পরীর বিরুদ্ধে করা এ সংবাদ সম্মেলনের মধ্যমণিদের অন্যতম রুবেল ও ডিপজলের বিরুদ্ধেই হয়েছে একাধিক মামলা।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেফতার হন ডিপজল। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র। দুর্নীতি দমন কমিশন ডিপজল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও মামলা করেছিল। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে সিগনাল ভঙ্গ করে পুলিশকে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক দল বিএনপির হরতালে গাড়ি পোড়ানোর মামলায়ও তাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে এসব মামলা বানোয়াট ভিত্তিহীন ও শেষ হয়েছে বলে দাবি তার।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, এক জমি একাধিকবার বিক্রির অভিযোগে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রুবেলসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের হয়। জামিনে থাকা চিত্রনায়ক রুবেলের দাবি, পরিস্থিতির শিকার তিনি।

বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘ডিপজল ভাই তো একসময়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি তো নিয়ম জানেনই। আর রুবেল ভাইয়ের বিরুদ্ধে যে মামলা চলমান, তা আমি জানি না। বা আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। যদি কেউ দিতেন, আমরা আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতাম।’

‘শুধু মামলা নয়, শিল্পীকে গ্রেফতার হতে হবে। পাশাপাশি সেটা যদি সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে তবেই আমরা সাময়িকভাবে তার সদস্যপদ স্থগিত করবো। যেটা পরীমণির ক্ষেত্রে হয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, মামলা শুধু রুবেল বা ডিপজল নয়, হয়েছিল সমিতির সাতবারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শরীফের বিরুদ্ধেও। চেক জালিয়াতির মামলায় ২০১৮ সালের এপ্রিলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

তাকে তিন মাসের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। সেসময়েও চেয়ারে ছিলেন সমিতির বর্তমান সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানই। তবে আহমেদ শরীফের বিরুদ্ধে তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি তাদের।


মন্তব্য করুন