Select Page

একজন ব্ল্যাক আনোয়ার

একজন ব্ল্যাক আনোয়ার

খুবই সাধারণ কিন্তু হৃদয় ছোঁয়া অভিনয়ের ‘বাপবেটার লড়াই’ ছবির একটি সিকোয়েন্স দিয়ে শুরু করছি…

মান্না পূর্ণিমাকে ভালোবাসে। পূর্ণিমাকে ভালোবেসেই সম্পদশালী বাবা রাজ্জাকের সাথে অভিমান করে বাড়ি ছেড়েছে। পূর্ণিমার জন্য হাতের বালা গড়ে তাকে পরাতে গিয়েছিল কিন্তু পূর্ণিমা নেয়নি কিছু ভুল বোঝার কারণে। মান্না ফিরে গেলে তার মামা ব্ল্যাক আনোয়ার যায় পূর্ণিমার কাছে। পূর্ণিমাকে বুঝিয়ে দেয় মান্না কেন বাড়িছাড়া, কেন সে বাবার বিপুল সম্পদ রেখে মজুরের কাজ করে, সে যে সে-ই কারণ তা বুঝিয়ে দেয়। ব্ল্যাক আনোয়ারের অভিনয়টা তখন স্পর্শকাতর।

ব্ল্যাক আনোয়ার..

আমাদের চলচ্চিত্রের উল্লেখযোগ্য একজন অভিনেতা।

১৯৪১ সালের ১০ জুলাই জন্ম, ঢাকায়। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন তাই পেশাদার অভিনয়টা আত্মস্থ করেছিলেন।টেলিভিশন নাটকেও কাজ করেছেন। তাঁর বাবা সোনা মিয়াও অভিনেতা ছিলেন, ঢাকার প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয় করেছেন। ব্ল্যাক আনোয়ার ইত্যাদি, আনন্দমেলার কৌতুকশিল্পীও ছিলেন। কমেডি ভালো করতেন। চলচ্চিত্রে মায়ের চরিত্রের পরিচিত মুখ রেহানা জলি তাঁর ছোটবোন।

চলচ্চিত্রই ব্ল্যাক আনোয়ারকে বড় পরিচিতি দিয়েছে। অনেক ছবিতে কাজ করেছেন। তাঁর অভিনয়ের ব্যাপ্তি সেকাল-একাল গড়িয়েছিল। রাজ্জাক আমল থেকে শুরু করে সালমান শাহ পর্যন্ত বড় সময়ের স্বাক্ষী তিনি।

উল্লেখযোগ্য ছবি: অনন্ত প্রেম, জীবন থেকে নেয়া, রংবাজ, শ্লোগান, রং বদলায়, প্রতিনিধি, হারানো মানিক, সাক্ষী, সৎভাই, রজনীগন্ধা, ব্যথার দান, সুয়োরাণী দুয়োরাণী, টাকা আনা পাই, স্বাক্ষী, সৎভাই, লক্ষীর সংসার, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, লক্ষীর সংসার, তুমি সুন্দর, প্রিয়জন, খুনের বদলা, বাপবেটার লড়াই, অনেক দিনের আশা ও কাবুলিওয়ালা।

‘কাবুলিওয়ালা’ তাঁর শেষ ছবি। ১৯৮৯ সালে ‘ব্যথার দান’ ছবিতে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

ব্ল্যাক আনোয়ার কমেডি, সিরিয়াস দুই ধরনের রোলেই পারদর্শী ছিলেন। অভিনয়টা ভেতর থেকেই করতেন। স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল নিবিড়ভাবে। ‘অনন্ত প্রেম’ ছবিতে রাজ্জাককে সাহায্য করে ববিতার সাথে প্রেম করতে। দুই বন্ধু এটিএম শামসুজ্জামান ও ব্ল্যাক আনোয়ার মিলে ববিতাকে বিপদে ফেলে রাজ্জাককে হিরো হবার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু কপালটা মন্দ ছিল ব্ল্যাক আনোয়ারের গুলি খেয়ে মারা যেতে হয়।

‘সৎভাই’ ছবিতে নূতনের ভাইয়ের চরিত্রে থাকে।সংসারে অশান্তি লাগানোই ছিল কাজ। ‘লক্ষীর সংসার’ ছবিতে তাঁর চমৎকার কমেডি বেশ উপভোগ্য ছিল। রীনা খানকে শিক্ষা দেয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল করতেন। ‘তুমি সুন্দর’ ছবিতে মৌসুমী-ওমর সানীকে থাকার আশ্রয় দেন একটা রাতের জন্য। তাঁর শিকারী চরিত্রের গেটআপ বিশেষ করে মাথার টুপি আর শর্টস এ অদ্ভুত সুন্দর লেগেছিল। মৌসুমী-সানী ফিরে যাবার সময় তাঁর কান্নার সিকোয়েন্সটি টাচি ছিল।

‘প্রিয়জন’ ছবিতে শিল্পীর রমজান চাচার চরিত্রটি নিশ্চয়ই কারো ভুলে যাবার কথা নয়। এ চরিত্রটিও টাচি ছিল। শিল্পীর ফুলের দোকানটিকে সাজাতে, যত্ন করতে তাঁর জুড়ি নেই। শিল্পী যখন রিয়াজকে ভুল করে ভালোবেসে ফেলে ছোটবেলার খেলার সাথী ভেবে তখন ব্ল্যাক আনোয়ার খুশি থাকতেন খুব। আবার সালমান শাহকে যখন শিল্পী তার আসল খেলার সাথী আবিষ্কার করে তখন শিল্পীর সাথে তিনিও কাঁদেন। এভাবে ক্যারেক্টারের ডাইমেনশনে তিনি উল্লেখযোগ্য অভিনেতা হয়ে ওঠেন।

২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

এ উল্লেখযোগ্য অভিনেতা আলোচনার বাইরে থেকে যান অন্তরালে। তাঁকে স্মরণ করার লোক হাতেগোনাও মেলে না।


মন্তব্য করুন