একটি সিনেমার গল্প : পর্দার পেছনের গল্প
একটি সিনেমার গল্প
ধরণ : স্যাটিরিক্যাল ড্রামা
পরিচালক : আলমগীর
অভিনয় : আলমগীর (আকাশ), ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (কবিতা), আরিফিন শুভ (সজীব), চম্পা (আকাশের স্ত্রী), সাদেক বাচ্চু (কবিতার বাবা), সাবেরী আলম (কবিতার মা), হাসান ইমাম (ডাক্তার) প্রমুখ।
নামকরণ : সিনেমা পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন পরিচালক যেমন পর্দায় একটি গল্প তুলে ধরেন, ঠিক তেমনি পর্দার পেছনেও ঘটে যায় নানান রকম গল্প। এসমস্ত গল্পকেই একসাথে গাথা হয়েছে এছবিতে। তাই নামকরণ হিসেবে ‘একটি সিনেমার গল্প’ যথার্থ।
কাচিস (কাহিনী+চিত্রনাট্য +সংলাপ) : গল্পের মূল থিম আমাদের দেশে নতুন কিছু না। ত্রিভুজ প্রেমের গল্প আমাদের দেশে একটা কমন থিম। সেক্ষেত্রে যতই সিনেমার গল্প দেখানো হোক, মূল থিম বোঝাতে সেই সত্তর দশককেই ফলো করেছে।
চিত্রনাট্য সম্পর্কে আমার অভিমত দুই রকম। কিছু অংশ চলনসই, আর কিছু অংশ চরম বাজে। নির্মাতা পর্দার পেছনের গল্প দেখাতে তিনি মূলত এদেশে নির্মিত এফডিসি ভিত্তিক ছবিগুলোকে নির্মাণশৈলী দেখিয়েছেন। সেক্ষেত্রে বলা যায় তার চিত্রনাট্য যথার্থ। এতে তিনি সিনেমার কিছু খারাপ দিকও তুলে ধরার সাহস করেছে, যেমন; একই নায়িকা বার বার নিয়ে ছবি হিট করানো, যেসব প্রযোজকদের সাথে পরিচালকদের বন্ধু কিংবা গুরুজনের মতো সম্পর্ক, তাদের দাবি করা অন্যায় আবদার ইত্যাদি। এগুলো প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
কিন্তু চিত্রনাট্যের বাজে দিকটি হলো ছবি শেষ হওয়ার প্রায় ৩০/৩৫ মিনিট আগেই এর মেইন টুইস্ট রিভিল করা। আল্টিমেটলি ঐ টুইস্ট রিভিলের পর ছবির গল্পে কোনো প্রাণ ছিল না। বেহুদা লাস্ট ৩৫ মিনিটের চিত্রনাট্য দর্শকদের চরম বোরিং করেছে। তবে এ ছবির সংলাপ গুলো প্রশংসার দাবি রাখে। ‘এই দেয়াল আমার অন্তর, আর ছবিগুলো আমার অন্তরের অন্তর’, ‘এখানে লাইট আছে, ক্যামেরা আছে, অ্যাকশন আছে, শুধু সুখ নেই গো’, কিংবা ‘আমার আজ বাড়ি ফিরতে হবে, কেউ আমার অপেক্ষায় আছে’ ইত্যাদি সংলাপগুলো সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ২৫।
টিমওয়ার্ক : এ ছবির প্রাণ হলো ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের অভিনয়। এদেশে অনেক নামি-দামি শিল্পী আছেন যারা ইমোশোনাল সিনে নিজেদের ইজ্জত ডুবান। অন্তত তারা যদি ঋতুপর্ণার অভিনয় দেখেন তাহলে কিছুটা হলেও এই দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
এরপর যার অভিনয়ের প্রশংসা করতে হয়, তিনি হলেন আলমগীর। পরিচালক আলমগীর যেমনই হোক না কেন, অভিনেতা আলমগীর একদম ১০০ তে ১০০! কোনোভাবেই তার বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে মনে হবে না তার বয়স ৬৮ পেরিয়েছে। পর্দায় তাকে ৪৮ বছরের একজন প্রাপ্তবয়স্কই মনে হয়েছে।
আরিফিন শুভ’র ক্যারেক্টারটায় কিছুটা হতাশ হয়েছি, আলমগীর-ঋতুপর্ণার অভিনয়ের কাছে তার চরিত্রটি সাইড হিরোই হয়ে রইলো। এই ছবিতে অভিনয় করাটা যে একরকম অনুরোধে ঢেকি গেলা’র মতো ছিল, তা খালি চোখেই পরিষ্কার। তার সেই সমালোচিত সংলাপটি (ঐ আকাশ টা দেখেছো?) বাদ দিলে পুরো ছবিতে তার অভিনয় ঠিকঠাক। তবে চম্পা আরিফিন শুভ’র চেয়ে তুলনামূলক স্বাভাবিক পারফর্মেন্স দিয়েছেন। একজন সুপারস্টার পরিচালকের স্ত্রীর ঠিক যেমন স্বভাব থাকা প্রয়োজন, তেমন অভিনয়টাই তিনি দিয়েছেন। বাকি যারা ছিলেন এরা সবাই তাদের স্বাভাবিক অ্যাকটিং দিয়েছেন।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৬০।
কারিগরি : সিনেমাটোগ্রাফি তেমন আহামরি কিছু হয়নি। লাইটিং হয়েছে চরম বাজে, ঘরের ভিতরের সিনগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই এখন দিন না রাত। এডিটিং মোটামুটি হয়েছে। কালার গ্রেডিংও বাজে হয়েছে। গানগুলোর কোরিওগ্রাফি করা হয়েছে এফডিসির সিনেমার আদলে। তাই এটা ঠিক-ঠাক ছিল; আরেকটু ভালো হতে পারতো।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৩০।
বিনোদন : ছবিতে মোট গান রয়েছে ৫ টি। গানগুলো শ্রুতিমধুর, তারমধ্যে ‘তুমি আছো তাই’ অনেক বেশি ভালো লেগেছে। গানগুলো সঙ্গীতায়োজন চমৎকার হয়েছে, প্রতিটি গানেই একটি ক্লাসিক ভাব বজায় রাখা হয়েছে। এছাড়া এ ছবিতে বিনোদন পাওয়ার মতো তেমন কিছু নেই, মেলোড্রামা একদম জমেনি। আর ছবির দ্বিতীয়াংশ যতই এগিয়েছে ততই দর্শকদের ধৈর্য্যশক্তির চরম পরীক্ষা দিতে হয়েছে। টুইস্ট আগেই রিভিল করে দেওয়ায় লাস্ট সিন কী হবে তা অনেকটাই অনুমেয় ছিল, তাই শেষ ৩০ মিনিট শুধুই ইমোশনের খেলা হয়েছে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ২০।
ব্যক্তিগত : এ ছবি নিয়ে আমার কোনো ল্রত্যাশা ছিল না। আর যা অনুমান করেছি ঠিক সেটাই হয়েছে। তাই পরিচালক এবং প্রযোজকের ওপর আমি অনেক হতাশ।
রেটিং : ১/৫
ছবিটি কেন দেখবেন : অনেকেই ঋতুপর্ণাকে আরিফিন শুভ’র বিপরীতে কাস্ট করা নিয়ে বেশ সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ আলমগীরকে ধুয়ে দিয়েছেন। তাদের বলছি, ছবিটি একবার দেখুন। এছবির গল্প ঋতুপর্ণাকে ডিমান্ড করে। আর যদি আপনি মেলোড্রামা পছন্দ করে থাকেন, কিংবা স্যাটিরিক্যাল (ব্যঙ্গার্থক)-ড্রামা পছন্দ করেন, কিংবা চান পরিবারের সবাই মিলে একটি ছবি উপভোগ করতে; তাহলে এ ছবি আপনার জন্য।
উপভোগ করুন ‘একটি সিনেমার গল্প’।