এক দশকে ‘গেরিলা’, উচ্ছ্বসিত নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও জয়া আহসান
সরকারি অনুদানে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত ‘গেরিলা’ মুক্তির এক যুগ পূর্ণ আজ ১৪ এপ্রিল। ২০১১ সালের এই দিনে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। এক যুগ পূর্তিতে উচ্ছ্বসিত এই ছবি সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে ছবির নির্মাতা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও অভিনেত্রী জয়া আহসান। ফেসবুক পাতায় তারা লিখেছেন ‘গেরিলা’ নিয়ে নানা ঘটনা ও অনুভূতি।
পরিচালক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ লেখেন, “আজ থেকে ১২ বছর পূর্বে নববর্ষের দিন ১ বৈশাখ ১৪১৮ বঙ্গাব্দ, ১৪ এপ্রিল ২০১১ মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’ মুক্তি পেয়েছিলো দেশব্যপী। আজ গেরিলা চলচ্চিত্রের যুগপূর্তি। এই একযুগে গেরিলা চলচ্চিত্র বিশেষ দিনে সারা দেশে খোলামাঠ, স্টেডিয়াম, মিলনায়তন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল টেলিভিশন ও ইউটিউবে লক্ষ লক্ষ দেশবাসী দেখে। বিশেষ দিন ছাড়াও প্রায় প্রতিদিন ‘গেরিলা’ ছবির প্রদর্শনী চলছে কোথাও না কোথাও। ছবিটির জনপ্রিয়তা সম্ভবত ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপকতার ও ভয়াবহতা, পাকিস্তানী সৈন্যদের গণহত্যা- নারী ধর্ষণ, লুণ্ঠন-অগ্নিসংযোগ, মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের বীরোচিত যুদ্ধদৃশ্যের রূপালী পর্দায় বাস্তব রূপায়নেব কারণে। বাঙালির মহাকাব্যিক যুদ্ধের একটা চিত্রভাষ্য হয়তো মানুষের মন ছুঁয়ে গেছে।
জনপ্রিয়তা নিশ্চয়ই শিল্পের মাপকাঠি নয়। কিন্তু কোটি মানুষ যখন ছবি দেখতে দেখতে জয় বাংলা ধ্বনিতে মিলনায়তন অথবা মাঠ প্রকম্পিত করে তখন মনে হয় ছবিটা জরুরি ছবি। শিল্প বিচারে নয় একটি জাতির আত্মত্যাগ ও গৌরবগাঁথা জনমানসে প্রোথিত করে জাতিসত্তা বিকাশে ভূমিকা রাখার কারণে গেরিলা জরুরি ছবি। আর তাই আমরা দেখি গেরিলা মুক্তির কিয়ৎকাল পরে নতুন প্রজন্মের যুবকরা গণজাগরণ মঞ্চে ৭১ এর গেরিলার মত সাহসী হয়ে ওঠে। ৭১’র মত জয় বাংলা ও জয়বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে সারাদেশ মেতে ওঠে। আমার অভিজ্ঞতায় এ একেবারে নতুন! যখন একযুগ পূর্বে গেরিলা মুক্তির দিন ও পরবর্তীকালে যখন শতশত দর্শক ছবি দেখা শেষে জয় বাংলা বলতে বলতে হল থেকে বেরিয়ে আসছে,অথবা মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের দৃশ্যে দর্শকের জয়্ধ্বনিতে চলচ্চিত্রের ধ্বনি চাপা পড়ে হারিয়ে যায়, এভাবে শিল্প ও দর্শকের আবেগ মিলেমিশে এক ভিন্ন রসায়ন তৈরি আমার অভিজ্ঞতায় একেবারে নতুন। এ সাফল্য আমার একার নয়। এ সাফল্য এসেছে ‘গেরিলা’র সকল কলা-কুশলীদের শ্রম ও মেধায়। তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।
দুই বছরের দিবা-রাত্রি নিদ্রাহীন, শিল্পের জটিল পথে ঘাম ঝড়িয়েছেন হাজারো শিল্পী কলা-কুশলী ও শহর ও গ্রামের সাধারণ মানুষ। রেলগাড়ির দৃশ্যের জন্য ১৯৬০ এর দশকের পরিত্যক্ত বগি ও ইন্জিন মেরামত ও সচল করে পাকিস্তানী রেলওয়ের রূপ দিতে দু’মাসেরও অধিক সময় রেল কর্মকর্তা- কর্মচারী ও আমাদের শিল্প নির্দেশনা বিভাগের প্রাণান্তকর পরিশ্রম। রেলওয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মঞ্জুর ভাইয়ের গেরিলা দৃশ্য শুটের সর্বোত্তম সহযোগিতা মনে থাকবে। শুটিংয়ের সময় একাধিক দিন সকল রেল সময়সূচি বিলম্ব করে আমাদের কাজ সম্পন্ন করার জন্য সাধারণ যাত্রীদের অবিশ্বাস্য সহযোগিতা ভোলার মত নয়। বিলম্বের জন্য বিরক্ত হওয়ার পরিবর্তে আমাদের রেলগাড়ি দেখলে সাধারণ যাত্রীরা ‘গেরিলা’ ‘গেরিলা’ বলে চিৎকার করে ও তালি দিয়ে আমাদের স্বাগত জানাতো অভিনন্দিত করতো। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মানুষের এ ভালোবাসা ও আবেগ আজ একযুগ পরেও আমাকে অশ্রুসজল করে। পার্বতীপর, দিনাজপুর, রংপুর, তিস্তা ও কাউনিয়ার রেল স্টেশনের অপূর্ব স্থাপত্য ও প্রকৃতি যেমন গেরিলার চিত্রভাষ্যে স্থান পেয়ে গেছে তেমনি অত্র এলাকার সাধারণ মানুষের নিস্বাঃর্থ ভালোবাসা আমদের মানস পটে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে।
যুদ্ধ দৃশ্য বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকষ পদাতিক বাহিনীর সদস্য, ট্যাংক বাহিনী ও আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দিনের পর দিন অমানুষিক পরিশ্রমের কথা ভুলবো কেমন করে। যুদ্ধদৃশ্যে ব্যবহৃত সকল অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী তাদের নিয়ম ও বিধি মেনে আমাদের কাজে ব্যবহারে সুযোগ দিয়েছেন। কতটুকু মুক্তিযুদ্ধ প্রেমী ও দেশপ্রেমী মানুষ হলে সে সময়ের কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়ান। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমার মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু মেজর (অব.) শামসুল আরেফীন ও কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ জহির বীর প্রতীক সামরিক বিষয়টি দেখভাল করেছেন। কর্নেল সাজ্জাদ মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রাভিনেতাদের মুক্তিবাহিনীর কৌশলসমূহ প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিনেতা তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন। তারা আমার রণাঙ্গনের সাথী তাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। পুলিশের তৎকালীন তরুণ অফিসার বর্তমানে অ্যাডিশনাল আইজি হাবীবুর রহমানের সহযোগিতার কথা কোনদিন ভুলবো না। রেলওয়ের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন অধিদপ্তর আমাদের কাজে দীর্ঘ সময় রাস্তা ব্যবহারে অনুমতি দিয়ে কাজে সহযোগিতা করেছেন। নরসিংদী, সোনারগাঁও, ধামরাই হয়ে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় চিত্রগ্রহণ বাংলাদেশের মানুষ, গ্রাম, শহর, নদী, বৃক্ষ, তৃণলতা, প্রাণীকূল ও ঐতিহ্যের এক ও অভিন্ন দৃশ্যচিত্র এখন কালের সাক্ষী। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস শর্তহীন চলচ্চিত্রায়ন করার অনুমতি দিয়ে আমাকে চিরঋণী করে গেছেন।
সমীরণ দত্তের ক্যামেরাবন্দী দৃশ্য কখনো কাব্যের সুষমা নিয়ে কখনো রক্তাক্ত প্রান্তরের ক্ষুব্ধতা নিয়ে একের পর এক ছবি এঁকেছে সেলুলয়েডে। শিমূল ইউসুফের সুর ও সংগীত ‘গেরিলা’র দৃশ্যাবলীকে বেদনা ও বিজয়ের যুগপৎ সাংগীতিক স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে বন্দিশ করে দর্শককূলকে। শিমূলকৃত পোশাক পরিচ্ছদ ৭১ এর সময়কে ধারণ করে ছবিটিকে করেছে কালনিষ্ঠ। সামির আহমেদের সম্পাদনা গতি ও বেগ দান করেছে গেরিলাকে।
অনিমেষ আইচের শিল্প নির্দেশনা যেন চিত্রকলাসম সময়ের নিখুঁত ভিজ্যুয়াল আর্ট। যা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের দৃশ্যকলা। এবাদুর রহমানের স্ক্রিপ্টে গেরিলা চলচ্চিত্রের দৃশ্যকল্প পুঁতে দেয়া ছিলো। অপেক্ষা করছিলো আলোর। আমরা সকল কলাকুশলীরা সেই আলো প্রক্ষেপণ করেছি বই আর কিছু নয়। রূপসজ্জার দায়িত্বে মো. আলী বাবুল নিষ্ঠুরতা ও মায়ার দোলাচলে হেঁটেছেন সফলতার সাথে। গেরিলা চলচ্চিত্রের যে বিষয়টি স্ববিশেষ লক্ষ্যনীয় তা হচ্ছে অভিনয়। প্রায় ১০০০ অভিনেতার নিঃশর্ত অংশ গ্রহণ গেরিলার মূল শক্তি। কায়িক ও মানসিক শ্রমের সাথে সকল অভিনেতাই ছবিটির প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন। হয়তো সবার কথা স্বল্প পরিসরে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতিনিধিত্বশীল ক’জনের সৃষ্টিশীল অভিনয়ের কথা না বললেই নয়।
তসলিম সর্দারের চরিত্রে সম্প্রতি প্রয়াত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জানের ধ্রুপদী অভিনয় কদাচিৎ আমরা সাক্ষাৎ পাই আমাদের চলচ্চিত্রে। তিনি মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, ‘আমি ৩৫০টির মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি কিন্তু গেরিলাতে অভিনয় করে যে তৃপ্তি আমি পেয়েছি তা অন্যকোন ছবিতে পাইনি।’ এ উক্তি আমার জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। জয়া আহসান তুঙ্গস্পর্শী অভিনয় করেছেন গেরিলায়। মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস, চরিত্রের প্রতি অন্বিষ্টতা, ভলোবাসা, শুটিংয়ে সীমাহীন পরিশ্রম ও মেধার ব্যবহারে জয়া হয়ে উঠেছিলো ১৯৭১ এর বিলকিস। ব্যক্তি জয়া ও অভিনেয় চরিত্র বিলকিসের অদ্বৈত হয়ে ওঠা আমাদের চলচ্চিত্রে প্রায় বিরল ঘটনা। জয়া হয়ে উঠেছিলো গেরিলা চলচ্চিত্রের প্রাণ। সাথে যে অভিনেতা সমানতালে গেরিলাকে নিয়ে গেছে ৭১ এর বাস্তবতার গভীরে সে হচ্ছে শতাব্দী ওয়াদুদ। পাকিস্তানি মেজর সরফরাজ ও ক্যাপ্টেন শামসদের চরিত্রাভিনয়ের গভীরতা ও নিষ্ঠুর আচরণ মানুষের কাছে তাকে ঘৃণিত ব্যক্তি করে তুলেছিলো। অতিথি শিল্পী হিসাবে হাসানের চরিত্রে ফেরদৌসের পরিমিত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহসীন আহমেদ (প্রয়াত), শম্পা রেজা, আহমেদ রুবেল, মাসুম আজিজ, আজাদ আবুল কালাম, অপূর্ব মজুমদার, কচি খন্দকার, জয়শ্রী বন্দোপধ্যায়, সাজ্জাদ রাজীব, ঋতু সাত্তার, কামাল বায়েজীদ, মিরানা জামান, আসাদুজ্জামান, চন্দন চৌধুরী, বাবুল বোস, মনোয়ার, শিবলু, শ্যামল, ওমর আইয়াজসহ হাজারো অভিনতার স্বল্প সময়ের পর্দা উপস্থিতি যেভাবে দৃশ্যগুলো ও চরিত্রগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছিলো তা গেরিলা চলচ্চিত্রকে দিয়েছে শক্ত কাঠামো। যার ওপর দাঁড়িয়ে, এখনো গেরিলা দর্শকের হৃদয়ে আসীন। এদের অবদান আমি সদা স্মরণ করি।
সর্বশেষে প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর ও এশা ইউসুফের কথা বলতেই হবে। এ দু’জন না হলে গেরিলার মতো বিশাল ও ব্যাপক চলচ্চিত্র আমার পক্ষে করা সম্ভব হতো না। সাগর দাঁড়িয়েছিলো সাগরের বিশালতা নিয়ে। আর এশা আমার কন্যা বটে কিন্তু গেরিলার প্রযোজক ও নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে নিদ্রাহীন দুটি বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে অমানুষিক পরিশ্রম ও ভালোবাসা দিয়ে ৩০০ চলচ্চিত্র কর্মী ও হাজারো শিল্পীকে নিয়ে যে গেরিলা অভিযাত্রা করেছে তা তুলনাহীন। ১২৩ দৃশ্য ১২১টি শুটিং স্পটে এই বিরাট লটবহর নিয়ে গমন ও প্রস্থান মাঝে রাত্রি যাপন ও খাবার ব্যবস্থা এসব একহাতে এশা ইউসুফ তার প্রযোজনা কর্মীদের নিয়ে বিশ্রামহীন বিরামহীন করেছে বলে গেরিলা চলচ্চিত্র নির্মিত হতে পেরেছে। ভালোবাসা এশা ও সাগর।
সবাইকে নিয়ে, গেরিলাকে নিয়ে, এত কথা লিখেছি এ কারণে যে, দেশকে ভালোবেসে, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস রেখে, চলচ্চিত্রের প্রেমে যে মানুষগুলো ১২ বছর আগে রাতকে দিন আর দিনকে রাত করে কাজ করেছে তাদের বলা হয়নি ধন্যবাদ। ধন্যবাদ, তোমাদের ভালোবাসি। তোমাদের জন্যই গেরিলা চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। আর দর্শক যারা সেদিন পাগলের মত হলে দিয়ে ‘গেরিলা’ দেখে উত্তেজিত চোখে মুখে শ্লোগান দিতে দিতে হল থেকে সিনেমা শেষে বের হয়েছিলেন এবং এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অথবা কোন মিলনায়তনে ‘গেরিলা’ দেখে প্রায়শ ফেসবুকে আপনাদের আবেগ প্রকাশ করেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
আমি বিশ্বাস করি চলচ্চিত্র বা যেকোনো শিল্পকর্ম বেঁচে থাকে দর্শক হৃদয়ে, স্মৃতির মণি কোঠায়। হে দর্শক আপনারা ‘গেরিলা’কে যেভাবে ধারণ করেছেন তাতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের প্রতি আপনাদের আস্থা ও বিশ্বাসের বহিপ্রকাশ দেখে আমি অভিভূত। আপনাদের অভিনন্দন।
গেরিলা নন্দনতত্বের আলোকে হয়তো শিল্পোত্তীর্ণ চলচ্চিত্র হয়ে ওঠেনি। কালোত্তীর্ণ হবে সে দূরাশাও আমার নাই এবং আমিও এ দাবী করি না। কিন্তু দর্শক হৃদয়ে যে আসন গেড়ে গেরিলা আজ এক যুগ অতিক্রম করেছে এবং এখনও বিরতিহীন প্রতিনিয়ত প্রদর্শিত হচ্ছে তা একজন মুক্তিযাদ্ধা শিল্পকর্মী হিসাবে আমি মানুষের কাছে নতজানু হই।
দর্শক প্রিয়তায় যুগোত্তীর্ণ গেরিলা পরিচালক হিসাবে সকল কলাকুশলী, শিল্পী, শুভানুধ্যায়ী, দর্শকদের জানাই অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।”
অন্যদিকে জয়া আহসান লেখেন, “কিছু ছবি থাকে, অভিনয় জীবন জুড়ে যার বিস্তর প্রভাব, যা ভালোলাগার, মাঝে মাঝেই স্মৃতিতে উজ্জ্বল। কিন্তু কিছু ছবি অচিরেই জীবন হয়ে যায়। কিছু চরিত্রের হয়ে একটা অন্য জীবন বেঁচে নেওয়া যায়। এক যুগ আগে, এই দিনে মুক্তি পাওয়া, মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত ‘গেরিলা’ ছবিটি তেমনি একটি ছবি। আর বিলকিস আমার কাছে তেমন একটি রক্ত মাংসের চরিত্র। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আজ আমার দেশে স্বাধীনতার আলো হয়ে প্রতি বাঙালীর মনে জ্বলছে। সেই মুক্তিযুদ্ধের এমন বাঙ্ময় পরিবেশনা, সত্যি আজও শিহরিত হই।
এই চলচ্চিত্রের অংশ হতে পারা আজ ১২ বছর পরেও আমার জন্য বড় আপন এক অনুভূতি। ১২ বছরে সময় অনেক বদলেছে, ১২ বছরে প্রযুক্তির ঘোড়া দৌড়ে এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ, কিন্তু অনুভূতির বিন্দু বিন্দু জুড়ে গেরিলা ছবির স্মৃতি গুলো আজও জীবন সমার্থক, এই অনুভুতির কোনো পরিবর্তন নেই।
আমার অভিনয় করা বিলকিস বানু চরিত্রে উঠে এসেছিল মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য মেয়ের সাহসী অবদানের গল্প। উপন্যাসে এ চরিত্র তৈরি করেছিলেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, আর পর্দায় -পরিচালক নাসিরউদ্দীন ইউসুফ।
‘গেরিলা’ ছিল এই দুই মানুষের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর উপলক্ষ। একই সঙ্গে ছিল আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার কাছে সামান্য ঋণ স্বীকারের সুযোগ।
কে যে আজ এই লেখা লিখছে, জয়া না বিলকিস জানি না, তবে এটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই দুই সত্ত্বার মাঝে দেশ নামক ভাবনা খানি মিলেমিশে এক মুগ্ধবোধ হয়ে আছে…
নিরন্তর ভালোবাসা নাসিরউদ্দিন ইউসুফকে, আমার অভিনয়–জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ‘গেরিলা’। টেলিভিশন ছেড়ে আমাকে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করার সাহস দেয় ‘গেরিলা’। নববর্ষ সত্যিই জীবনের এক নতুন সম্ভাবনা। সবাইকে শুভ নববর্ষ।”