এক সিনেমার নায়িকা রোজী
ডাক্তার : মর্জিনা, এখন কেমন বোধ করছ? ভালো।
মর্জিনা : হুম
মর্জিনার ‘হুম’ শুনতে শুনতেই ডাক্তার আশীষ কুমার লোহ এতই খুশি যে প্যান্টের জিপার পর্যন্ত খোলা তার। বাড়ির কর্তা আরিফুল হক তো বলেই দিলেন-‘ডাক্তার, তুমি পাগল হয়ে গেছ তোমার প্যান্টের চেইন যে খোলা।’ দ্রুত পেছন ফিরে চেইন লাগিয়ে বলতে থাকে-‘আই অ্যাম সাকসেসফুল।’ অবুঝ, অপরিণত মর্জিনা যে এখন কাউকে ভালোবাসতে শিখেছে ডাক্তার তো এটাই চেয়েছিলেন তাই তার আনন্দ আর দেখে কে!
বলছি অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকীর কথা। তার বাণিজ্যিক ছবি কাজী হায়াত পরিচালিত ‘লাভ স্টোরী’-র কথা। ছবিটি নিখাদ পারিবারিক, সামাজিক, রোমান্টিক। সব যেন মিলেমিশে একাকার এক ছবিতেই।
অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমের স্ত্রী রোজী সিদ্দিকী ‘লাভ স্টোরী’ ছবিতে নিজের প্রতিভায় নিজের মতো করে একটা আইডেনটিটি রেখে গেছে। অনেক সচেতন দর্শকের মাঝেও এ ছবিটির জনপ্রিয়তা, ভালো লাগা লক্ষ করেছি। ছবিটির জনপ্রিয়তা আছে।
এ ছবিতেই একটা আলাদা পরিচয় যেন তৈরি করেছিল নায়িকা রোজী। গড়পরতা নায়িকা নয় একটু আলাদা ধাঁচের। অবোধ একটি মেয়ে যার বয়সটাই শুধু বেড়েছে কিন্তু মানসিক বৃদ্ধিটা হয়নি। তার কথা বলার ভঙ্গিটাও বাচ্চাদের মতো। অল্পেই কাঁদে, অল্পে খুশিও হয়। বাবা রাইসুল ইসলাম আসাদ মেয়েকে শহরে আরিফুল হক-ডলি জহুর দম্পতির বাড়িতে পাঠায় যদি মেয়েটিকে মানুষ করা যায় এ ভরসায়। তাদের ছেলে যে ছবিটির নায়ক পল্লব তার সাথে মেয়েটির সখ্য গড়ে ওঠে এবং তার চিকিৎসার জন্য নিয়োগকৃত ডাক্তার আশীষ কুমার একটা বাজিই ধরে বসে। নায়ককে দিয়ে নায়িকা রোজীর মনের মধ্যে লজ্জা, প্রেম, ভালোবাসার অনুভূতি আনতে হবে। যদি আসে তবেই বুঝতে হবে মেয়েটির পরিবর্তন এসেছে এবং ডাক্তারের কথামতো নায়ক পল্লবও রাজি হয়। রোজীর মনে প্রেম আসে, সে ভালোবাসতে শুরু করে। পল্লব অসুস্থ হলে তার সেবা করে এবং ছবির সেই সেরা গানটি তাদেরকে আবদ্ধ করে পবিত্র ভালোবাসার বন্ধনে –
‘কত মানুষ ভবের বাজারে
লক্ষ কোটি হাজার হাজারে
তুমি একটা শুধু মানুষ আমার
বুকের মাঝারে…বুকের মাঝারে’
মর্জিনা চরিত্রে রোজী সিদ্দিকী অনবদ্য অভিনয় করেছে। তার অপরিণত বয়সের অভিনয় যেমন চরিত্রের সাথে মিশে যাওয়া ছিল তেমনি প্রেমিকা হয়ে ওঠাও সমানে সমান।
কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘লাভ স্টোরী’ ছবির নায়িকা ছিল রোজী। নায়ক ছিল পল্লব নামের একজন। ছবিটি জনপ্রিয়। রোজীর অভিনয় অনবদ্য ছিল। রোজী মর্জিনা চরিত্রে নিজের অভিনয়শক্তির প্রমাণ রেখেছে। ডাক্তার আশীষ কুমার যখন পল্লবকে বলে মর্জিনাকে একটা কিস করতে হবে পল্লবের টেনশন বাঁধে। ডাক্তার জানায় এটা ট্রিটমেন্টের একটা অংশ। পল্লব তাই করে এবং রোজী সেটা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে কোনো অপ্রীতিকর অবস্থা না করে। ডাক্তারের সাথে তার কথোপকথনটি ইন্টারেস্টিং ছিল –
দুজনের কথোপকথনটা এত সুন্দর ছিল যে মর্জিনার লজ্জায় মুখ লুকানোর চেষ্টাটা ছিল ন্যাচারাল। লজ্জা পাওয়ার ন্যাচারালিটি থেকেই ডাক্তার বুঝে যায় সে সুস্থ। রোজীর পল্লবের সাথে প্রেম হবার পর সেটা মেনে না নেয়াতে বাড়ি ছেড়ে যাবার আগে ডলি জহুরের সাথে কান্নার অভিনয়টাও মাইন্ড ব্লোয়িং ছিল।
রোজী সিদ্দিকী বাণিজ্যিক ছবিতে সম্ভাবনাময়ী ছিল কিনা সেটি যুক্তিতর্কের বিষয় হতে পারে তবে গল্পনির্ভর আরো অনেক ছবির জন্য খুবই সম্ভাবনার ছিল কিন্তু চলচ্চিত্রে নিয়মিত দেখা যায়নি। আর ছবিতে কাজ না করলেও এ ছবিটি জনপ্রিয় হয়ে আছে।
চলচ্চিত্রে তাই নিয়মিত না হলেও এক ‘লাভ স্টোরী’-র নায়িকা রোজী সিদ্দিকীকে দর্শক ভুলবে না। এক ছবিই তার পরিচিতি হয়ে থেকে গেছে কিছু দর্শকের কাছে, থাকবেও।