Select Page

প্রিয় জুটি সালমান শাহ-শাবনূর

প্রিয় জুটি সালমান শাহ-শাবনূর

সালমান শাহশাবনূর ঢালিউডে নব্বই দশকের সেরা জুটিগুলোর একটি। এ জুটির বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল। তাদের অভিনীত ছবির সংখ্যা ১৪। ছবিগুলোর মধ্যে ভেরিয়েশন আছে।

রোমান্টিক ড্রামা – তোমাকে চাই, স্বপ্নের ঠিকানা, তুমি আমার, মহামিলন, জীবন সংসার, চাওয়া থেকে পাওয়া, বুকের ভিতর আগুন।

রোমান্টিক ট্র্যাজেডি – আনন্দ অশ্রু, প্রেম পিয়াসী, স্বপ্নের নায়ক।

রোমান্টিক ফোক – রঙিন সুজন সখি।

সোশ্যাল ড্রামা – বিচার হবে, স্বপ্নের পৃথিবী।

পলেটিক্যাল ড্রামা – বিক্ষোভ।

রোমান্টিক ড্রামাতে মিউজিক্যাল গুণ প্রচণ্ড। এ জুটির রসায়ন অপূর্ব। তারা দুজন দুজনের চোখের ভাষা বুঝতে পারত। ‘তুমি আমার’ এ জুটির প্রথম ছবি। প্রথম ছবিতেই তাদের রসায়ন জমে উঠেছিল। ‘তোমাকে চাই’ ছবিতে প্রেমিকার জন্য এক প্রেমিকের ত্যাগ দেখানো হয়েছে। বেকার সালমান যখন কাজ পেয়ে শাবনূরের কাছে যায় মিষ্টি ও মালা নিয়ে দুজনের রসায়ন সে সময় অসাধারণ টাচি হয়ে ওঠে। রোমান্টিকের ড্রামার জন্য সাধারণ ঘটনাও তাদের অভিনয়ের গুণে অসাধারণ হয়ে উঠত। ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ ছবিতে দুজনকেই স্টাইলিশ লুকে দেখা গেছে।

‘আনন্দ অশ্রু’ ছবিটি তাদের মুগ্ধ করা অভিনয়ের কারণে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে চিরদিনের জন্য। ট্র্যাজেডি গল্পে ভালোবাসার করুণ পরিণতিতে ছবিটিতে সালমান শাহ-র পাগলের অভিনয় যেমন অসামান্য তেমনি শাবনূর সেবিকার ভূমিকায় নিজের সেরাটা দিয়েছে। ‘প্রেম পিয়াসী’ ছবিও ট্র্যাজেডির গল্প। তাদের দুজনের করুণ পরিণতি ঘটে এবং ‘আনন্দ অশ্রু’-র সাথে একটা সম্পর্ক রাখে কিন্তু নিজস্বতা রেখে। ‘স্বপ্নের নায়ক’-ও নায়কের ট্র্যাজেডি। সালমানের সাথে শাবনূরের যতটুকু অভিনয় আছে দুজন দর্শককের হৃদয় স্পর্শ করে।

রোমান্টিক ফোকে ‘রঙিন সুজন সখি’ অসাধারণ ছবি এ জুটির। আগের ‘সুজন সখি’-র সাথে এ ছবি সমানভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম। গ্রাম্য ছেলের চরিত্রে সালমান যেমন নিখুঁত শাবনূরও ছিল তার যোগ্য কো-আর্টিস্ট।

সোশ্যাল ড্রামায় ‘বিচার হবে’ ও ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ দুটি ছবিই অনবদ্য। ‘বিচার হবে’-তে গ্রাম ও শহরের সমান বাস্তবতার গল্পে সালমান-শাবনূরের গল্প উঠে এসেছে। সালমান গ্রামের সাধারণ ছেলে থেকে শহুরে উঠতি মাস্তানের চরিত্রে একদম আলাদা। শাবনূরও শহরে এসে পরিবর্তন করে নিজেকে। ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ রাষ্ট্রচিন্তার ছবি। ছবির শেষের দিকে সালমানের অত্যাচারী শাসক বাবা রাজিব শাবনূরকে তার প্রেমের পরীক্ষা দিতে বললে আগুনে হেঁটে সে পরীক্ষা দেয়। অসাধারণ দৃশ্য ছিল। কমান্ডো স্টাইলে রাজিবের সাম্রাজ্য ধ্বংসের মিশনে সালমান ছিল অসাধারণ।

‘বিক্ষোভ’ ছবির পলেটিক্যাল আবহে সালমান-শাবনূর বিপ্লবী ভূমিকায় নিজেদের অন্যতম সেরা অভিনয় করেছে। তাদের ‘একাত্তরের মা জননী’ গানটি বাণিজ্যিক ছবির শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী গান।

‘বিচার হবে’ ছবিটি গ্রাম ও শহর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সালমান-শাবনূরের জুটিকে ডাইমেনশন দিয়েছে। ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরা ছবি। সালমান-শাবনূর তাদের ভূমিকায় বাস্তবসম্মত চরিত্র করেছে।

এ জুটির প্রতিটি ছবিতেই জনপ্রিয় গান আছে। তাদের পর্দা রসায়ন অতুলনীয়। তার মধ্যে কিছু গান না বললেই নয়-

* তুমি মোর জীবনের ভাবনা – আনন্দ অশ্রু

* তুমি আমার এমনই একজন – আনন্দ অশ্রু

* এই দিন সেই দিন কোনোদিন – স্বপ্নের ঠিকানা

* ভালো আছি ভালো থেকো – তোমাকে চাই

* তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই – তোমাকে চাই

* আমার নাকেরই ফুল বলে রে – তোমাকে চাই

* তুমি আমায় করতে সুখী জীবনে – তোমাকে চাই

* বাজারে যাচাই করে – তোমাকে চাই

* তুমি আমার মনের মানুষ – স্বপ্নের পৃথিবী

* বৃষ্টি রে বৃষ্টি – স্বপ্নের পৃথিবী

* পৃথিবীতে সুখ বলে – জীবন সংসার

* একদিন দুইদিন তিনদিন পর – মহামিলন

* আমি যে তোমার প্রেমে পড়েছি – মহামিলন

* আমার জন্ম তোমার জন্য – তুমি আমার

* জ্বালাইয়া প্রেমের বাতি – তুমি আমার

* তুমি আমার ভালোবাসার গান – তুমি আমার

* নিশিদিন প্রতিদিন – স্বপ্নের নায়ক

* আমি যে তোমার কে – বিচার হবে

* একাত্তরের মা জননী – বিক্ষোভ

* ও আমার জীবন সাথী – বিক্ষোভ

* পাথরে লিখি নি ক্ষয়ে যাবে – বুকের ভিতর আগুন

* ওগো আমার সুন্দর মানুষ – চাওয়া থেকে পাওয়া

* সাথী তুমি আমার জীবনে – চাওয়া থেকে পাওয়া

* শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে – চাওয়া থেকে পাওয়া

* সব সখিরে পার করিতে – রঙিন সুজন সখি

* কথায় বলে গাছের ব্যাল পাকিলে – রঙিন সুজন সখি

সালমান শাহ-শাবনূর জুটি ঢালিউডের অবধারিত সেরা জুটি। পরিপূরক জুটি। এ জুটি দীর্ঘস্থায়ী হলে আরো বড় ইতিহাস হতে পারত দেশীয় চলচ্চিত্রে।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন