Select Page

মাসুদ রানার আধুনিক উপস্থাপন ‘এমআর নাইন: ডু অর ডাই’

মাসুদ রানার আধুনিক উপস্থাপন ‘এমআর নাইন: ডু অর ডাই’

কিংবদন্তি থ্রিলার লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন রচিত ‘ধ্বংস পাহাড় ‘(১৯৬৬) উপন্যাস থেকে নির্মিত হয়েছে স্পাই থ্রিলার ছবি ‘এম আর নাইন: ডু অর ডাই ‘। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত হলিউড নির্মাতা আসিফ আকবরের নির্মিত ছবি। বাংলাদেশ-আমেরিকা যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে।

‘ধ্বংস পাহাড়’-এর গল্পে ছিল একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী কবির চৌধুরী কাপ্তাই শহরের কাছে একটা পাহাড়ের ভেতর আলট্রা সোনিকস অ্যান্টি-গ্র্যাভিটি নিয়ে গোপনে গবেষণা করে। কাপ্তাই বাঁধ তৈরির ফলে বিশাল লেকের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে পাহাড়টা। তার দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনায় একটা ম্যাসাকার করার আয়োজন হয় সেটাকে নস্যাৎ করার দায়িত্ব পড়ে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এজেন্ট মাসুদ রানার ওপর। মাসুদ রানা-র কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কোড নাম হয় ‘ এমআর নাইন’।

এ গল্পকে উপস্থাপন করা হয়েছে আধুনিক উপস্থাপনায়। দেশি-বিদেশি লোকেশনে স্পাই থ্রিলারের যথার্থ ব্যবহার করা হয়েছে। যে ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে ১৯৬৬ সালে রচিত থ্রিলারকে বর্তমান সময়ের চাহিদামতে উপস্থাপন করা যায় সেটাই করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার জন্য ইংরেজিতেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনমাফিক বাংলা ব্যবহার হয়েছে দেশীয় লোকেশনে।

প্রধান চরিত্রে এবিএম সুমন মাসুদ রানার ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী পারফেক্ট। তার বডি ফিটনেস, ইংলিশ অ্যাকসেন্ট অসাধারণ। যে ধরনের স্মার্টনেস দাবি করে চরিত্রটি সুমন সেটাই করে দেখিয়েছে। ভারতীয় স্পাইয়ের ভূমিকায় সাক্ষী প্রধানও ভালো পারফর্ম করেছে। আনিসুর রহমান মিলনের চরিত্রটি অন্যতম আকর্ষণীয় চরিত্র, মিলনের অ্যাকসেন্টও বেশ ভালো ছিল। সবচেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিদেশি অভিনয়শিল্পীদের ন্যাচারাল অভিনয়। তাদের মধ্যে প্রফেশনালিজম শতভাগ ছিল। বাংলাদেশের অন্যান্য অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে ছিল শহীদুল আলম সাচ্চু, জাহিদ হাসান শোভন, এলিনা শাম্মী এবং বিদেশিদের মধ্যে ফ্রাঙ্ক গ্রিলো, দ্য গ্রেট কালী, মাইকেল জে হোয়াইট প্রমুখ।

কমার্শিয়াল ছবিতে গান আমাদের জন্য অবধারিত থাকে কিন্তু এ ছবিতে দু’এক লাইন প্রয়োজনমাফিক ছাড়া আর গান নেই। থ্রিলারের বিষয়টাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছবিতে প্রধান ছিল। বিজিএমের ব্যবহার বর্তমান সময়ের ছবির মধ্যে সেরা বলতে হবে। দেশের বাইরের লোকেশন তো অনবদ্য এবং বিভিন্ন দেশের কালচারের বিষয়টাও অন্যভাবে উঠে এসেছে যার মধ্যে চীনা মার্শাল আর্টের অংশটুকু দারুণ ছিল।

‘এম আর নাইন: ডু অর ডাই’ সাম্প্রতিক সময়ের চলচ্চিত্রে বড় একটা জায়গা জুড়ে থাকবে। আমরা আমাদের কমার্শিয়াল ছবির যে পরিবর্তনের কথা বলছি এ ছবিটি তার অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ হয়ে থাকবে।

রেটিং – ৮/১০


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন