Select Page

ওটিটির জন্য ভালো নির্মাণ ‘গুণিন’

ওটিটির জন্য ভালো নির্মাণ ‘গুণিন’

গুণিন; পরিচালনা : গিয়াস উদ্দিন সেলিম; গল্প : হাসান আজিজুল হক; অভিনয় : আজাদ আবুল কালাম, শরীফুল রাজ, ইরেশ যাকের, মোস্তফা মনওয়ার, পরীমনি, দিলারা জামান, শিল্পী সরকার অপু, নায়লা আজাদ, ঝুনা চৌধুরী, নাসিরুদ্দিন খান প্রমুখ

সিনেমার গিয়াসউদ্দিন সেলিম আবহমান বাংলার কথা বলেন, লোকজ ও পার্থিব হাসি কান্নার গল্প বলেন, কৃষ্টি আর সাংস্কৃতিক ধারার প্রকাশ ঘটান আমাদের চেনা দর্শনে। ‘মনপুরা’র সোনাই বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপে এক যুবকের প্রেমের চেনা আকুতির কথা বলেছিল। ‘স্বপ্নজাল’-এ সাম্প্রদায়িক দেয়াল টপকাতে ব্যর্থ তেমনই আরেক যুবকের হাহাকারের গল্প দেখেছিলাম আমরা। ‘গুণিন’-এ লেখক সময়কালটা আরও পিছিয়ে একটা আদিম সমাজে নিজে গেছেন যেখানে কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস আর সামাজিক মর্যাদার এক শক্ত দেয়াল রয়ে গেছে। সেলিম এই সময়ে এসে সেই সমাজের রূপ দেখিয়েছেন।

‘গুণিন’-এ সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন ততটা চোখে না পড়লেও রমিজ আর রাবেয়া দুই ক্যারেক্টারের সামাজিক অবস্থান বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, বলা হয়েছে, ‘মিয়ার ব্যাটারা গুণিন বাড়িতে মেয়ে দেবে না।’

‘গুণিন’-এর নাম ভূমিকায় আছেন শক্তিমান অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম। জায়গা আর স্ক্রিন প্রেজেন্স ঠিকঠাক পেলে কয়েকজন অভিনেতা চাইলে অভিনয় দিয়ে দর্শককে সিটে বসে থাকতে বাধ্য করেন, আজাদ আবুল কালাম তাদের একজন। গুণিনের বয়স গল্পে বলা আছে খুবই বৃদ্ধ যার ছেলের মৃত্যুই অনেকে ভুলে যেতে বসেছে। তাই প্রস্থেটিক মেকআপ, সাজসজ্জা আর ভরাট গলার অভিনয়ের সম্মিলনে আজাদ একেবারে দশে দশ পারফরমেন্স করেছেন।

তবে আমাকে চমকে দিয়েছে শরীফুল রাজ আর মোস্তফা মনওয়ারের ভাই ভাই খুনসুটি, বিবাদ আর কলহের কেমিস্ট্রি। গুণিনের তিন নাতির ভূমিকায় থাকা ইরেশ যাকের, রাজ আর মোস্তফা সবাই দারুণ করেছেন। ইরেশ ‘স্বপ্নজাল’-এ অবাক করেছিলেন লুকে আর এখানে তার কণ্ঠস্বরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাতে। যারা পরীমনির ভক্ত তারা কিছুটা হতাশ হওয়ার কথা। কেননা গল্পের প্রয়োজনেই পরির পারফরমেন্স টাইম আর এক্সিকিউশন তুলনামূলক কম। তবে তার অভিনয়ে খামতি চোখে পড়েনি। ভালো করেছেন নায়লা আজাদ, শিল্পী সরকার অপু, দিলারা জামানসহ সবাই। অনেক দিন পর একটা সিনেমায় দেখলাম প্রতিটি চরিত্রকে ভালো পারফর্ম করতে।

তবে আমার আফসোসের জায়গা স্ক্রিনপ্লে আর গল্পের গভীরতা। গল্পে গুণিনের মৃত্যুর পর তার তিন নাতির কলহ আর প্রেম নিয়ে বিবাদকে উপজীব্য করা হয়েছে। সিনেমার প্রয়োজনেই ছোটগল্পের অনেক জায়গাটা নির্মাতা নিজের মতো ভেঙে দুই ঘণ্টার প্লট করেছেন, যে জায়গাগুলো খুব একটা মনমত হয়নি বা অনেক ক্ষেত্রে ব্যাকড্রপ আর চরিত্রের গভীরতা কম ছিল। সিনেমার শেষটাও কিছু যুক্তি অপূর্ণ রেখে শেষ করা।

সিনেমাটোগ্রাফি, সেট ডিজাইন খুব ভালো। আর সেলিমের সিনেমায় সংলাপ সব সময় আমাদের আনন্দ দেয়, এখানেও তাই করেছে। যৌনতা আর রেষ বারবার সংলাপে হাস্যরস দিয়েছে, সচরাচর বলা গালি এখানে চোখের নিমেষে মিশে গেছে পারফরমেন্স এর জন্য। সব মিলিয়ে গুণিন অসাধারণ কোন সিনেমা না বা গিয়াসউদ্দিন সেলিমের কালজয়ী নির্মাণ না তবে হলে দেখার জন্য জুতসই আর ওটিটির জন্য তো অবশ্যই ভালো নির্মাণ।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

Graduated from Mawlana Bhashani Science & Technology University. Film maker and writer.

মন্তব্য করুন