Select Page

কাঞ্চি কথা

কাঞ্চি কথা

কাঞ্চি
প্রিয় নায়িকা।

কাঞ্চিকে নিয়ে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আগ্রহ অবাক করার মতো। অনেক প্রতিষ্ঠিত নায়িকাদের নিয়েও এত আগ্রহ দেখিনি। তার সম্পর্কে জানতে চায় অনেক দর্শক এবং এর থেকে বোঝা যায় কাঞ্চি জনপ্রিয় এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেরই প্রিয় নায়িকা।

খুলনা জেলার পাংশা থানার মেয়ে কাঞ্চি। নামটি খুব মিষ্টি। তবে এ নাম তার প্রকৃত নাকি চলচ্চিত্রে দেয়া জানা যায় না। চলচ্চিত্রে আসার ইচ্ছা থেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয় এবং যথারীতি সাফল্য।

অভিনেত্রী নাকি নায়িকা কোনটা বলা যায় কাঞ্চিকে! অভিনেত্রী বা নায়িকা কোনোটাই হওয়া সহজ কাজ নয়। নায়িকা থেকে অনেকে অভিনেত্রী হয়ে যায় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। কাঞ্চিকে নায়িকা বলাটাই ভালো আর তার সুন্দর ন্যাচারাল অভিনয়ের দক্ষতাকে স্মরণ করলে অভিনেত্রীও বলা যায়। তার অভিনয়ে একটা শিশুসুলভ সরলতা ছিল এবং সেটাই আকর্ষণ করত।

কাঞ্চির ছবির সংখ্যা বিশের কিছু বেশি। উল্লেখযোগ্য ছবি : আনন্দ অশ্রু, শেষ ঠিকানা, নয়নের কাজল, দেমাগ, অচল পয়সা, বদসুরত, পৃথিবী আমারে চায় না, অজান্তে, বিদ্রোহী আসামী, মৃত্যু কত ভয়ঙ্কর, অপরাধ জগতের রাজা, তুমি শুধু তুমি, পাগলা বাবুল, দরদী সন্তান। এর মধ্যে প্রথম ছবি ‘দেমাগ।’

‘তুমি আমার এমনই একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না এমন
এক জনমের ভালোবাসা
এক জনমের কাছে আসা
একটি চোখের পলক পড়তে লাগে যতক্ষণ’
এ গানটিই যথেষ্ট কাঞ্চিকে চেনাতে। ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবিতে অমর নায়ক সালমান শাহ-র বিপরীতে এ গানটিতে কালজয়ী হয়ে আছে দুজনই। দুজনের রসায়নও অপূর্ব। ছবির অন্য নায়িকা বড় তারকা শাবনূর থাকার পরেও কাঞ্চি নিজগুণে উজ্জ্বল। ছবির অন্য জনপ্রিয় গান ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’ যেটা সালমান-শাবনূরের সাথে আছে এ গানের দুটি ভার্সন আছে প্রথমটা ছিল কাঞ্চির সাথে। এ ছবিতে কাঞ্চির অভিনয় নায়িকা থেকে অভিনেত্রী কাঞ্চিকেই যেন চেনায়।

মিউজিক্যাল রোমান্টিক ছবি ‘শেষ ঠিকানা’তেও অমিত হাসানের বিপরীতে উল্লেখযোগ্য ছিল কাঞ্চি। এ ছবির প্রথম কাস্ট ছিল সালমান শাহ। সালমান বেঁচে থাকলে কাঞ্চি তাঁ সাথে একক নায়িকার ছবিও করত এবং পরিচালকদের তেমন ইচ্ছাও ছিল। সালমানের সাথে একক নায়িকা হতে পারলে সম্ভবত তার ক্যারিয়ার আরো সমৃদ্ধ হত কিন্তু সে সুযোগটা পায়নি সে। অমিতের সাথে ‘দরদী সন্তান’ ছবিটিও উল্লেখযোগ্য। ফেরদৌসের বিপরীতে ‘পৃথিবী আমারে চায় না’ ছবিটিও উল্লেখযোগ্য।

কাঞ্চি-র প্রথম ছবি ‘দেমাগ।’ এ ছবিতে তার নায়ক ইমরান। ছবিটি কিছুটা লেডি অ্যাকশন জাতীয়। ইমরানের সাথে জুটি ছিল ‘দেমাগ’ ছাড়াও ‘বদসুরত, অজান্তে’ ছবিতে। পরস্পরের প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছিল কিন্তু সংসার টেকেনি। নব্বই দশকেই তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়।

অনেকের ধারণা কাঞ্চি একক নায়িকা বা লিড হিরোইনের ছবি করতে পারেনি বা হতে পারেনি। এটা ভুল ধারণা। প্রথম ছবি ‘দেমাগ’-এই একক নায়িকা ছিল। এছাড়া ‘নয়নের কাজল, পৃথিবী আমারে চায় না, পাগলা বাবুল’ ছবিগুলোও ছিল। ‘নয়নের কাজল’ তার অন্যতম জনপ্রিয় ছবি।

কাঞ্চি-র ছবিতে গানের ভাগ্যও ভালো। অল্প ক্যারিয়ারেও জনপ্রিয় গান আছে। যেমন :
১. তুমি আমার এমনই একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন
– আনন্দ অশ্রু

২. তুমি মোর জীবনের ভাবনা
হৃদয়ে সুখের দোলা
– আনন্দ অশ্রু

৩. তুমি নয়নের কাজল
তিলেক দণ্ড না দেখিলে মন হয় রে পাগল
– নয়নের কাজল

৪. আশা আমার ভালোবাসা
তোমাকে নিয়ে গড়েছি বুকে
প্রেমেরই ছোট্ট বাসা
– শেষ ঠিকানা

৫. চক্ষু দুইটা বাত্তি কইরা খুঁজি আমি তোমারে
কোথায় আছো কেমন আছো আছো কোন আন্ধারে
দাও না দেখা তুমি আমারে
– শেষ ঠিকানা

৬. রঙ্গিলা রঙ্গিলা রঙ্গিলা রে
কার সাথে মনটারে বান্ধিলা রে
– শেষ ঠিকানা

৭. চোখে কালো চশমা দিয়ে
পেছন দিকে না তাকিয়ে
রাগ করে কেন যাবে
পরে তো দুঃখ পাবে
রঙিন জামা তুলে গায়ে
বুকের বোতাম খুলে দিয়ে এসেছ হিরো হতে
জানো কি কয়টা বাজে
– দরদী সন্তান

এর মধ্যে ‘শেষ ঠিকানা’ ছবির ‘রঙ্গিলা’ গানটিতে মিশা সওদাগরের সাথে স্টেজ পারফর্মার কাঞ্চি অসাধারণ ছিল এবং অমিত হাসানের সাথে স্টেজ পারফরম্যান্সে ‘চক্ষু দুইটা বাত্তি কইরা’ গানেও চমৎকার। গ্ল্যামারের সাথে দারুণ অভিনয়ও ছিল গানগুলোতে।

কাঞ্চিকে মিউজিক ভিডিও এবং নাটকেও দেখা গেছে। সাবিনা ইয়াসমিনের ‘অতিথি’ ছবির জনপ্রিয় গান ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’-র মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছিল কাঞ্চি। মাহফুজের বিপরীতে ‘স্পর্শ’ নাটকে অভিনয় করেছিল। এ নাটকের ‘নিশুতি রাতে’ নামে চমৎকার একটি গানও আছে।

কাঞ্চি বর্তমানে কোথায় থাকে এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য জানা যায় না।কাঞ্চির ক্যারিয়ার গ্রাফ খুবই ছোট কিন্তু অর্জন আজকের সময়ের যে কোনো নায়িকার থেকে বেশি। অভিনয়ের কথা বললেও আজকের অনেকের থেকে এগিয়ে থাকবে। তার ক্যারিয়ার আরো লম্বা হতে পারত এবং এজন্য চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আফসোস আছে। কাঞ্চি দর্শকের ভালোবাসাতেই বেঁচে থাকবে।

সংশোধনী/ ব্যবহৃত একটি ছবি মীর শামসুল আলম বাবুর তোলা, ৫ মে ২০২১


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন