Select Page

‘জলেরও জলছবি’ জলের কথা বলে

‘জলেরও জলছবি’ জলের কথা বলে

জলময় জলনয়,

জলেরও জলছবি কথা কয়।

নদী দখল, পানি শূণ্যতা, শিল্পবর্জ্য এবং আমাদের অবহেলার শিকার হয়ে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা ‘পদ্মা’ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। আমি, আপনি এবং আমাদের চোখের সামনেই ধ্বংশের মুখে থাকা পদ্মাকে নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টরি চলচ্চিত্র “জলেরও জলছবি”। নির্মাতা আহসিফ খান তার অনুভবের যায়গা থেকেই একা ছুটে গিয়েছেন চলচ্চিত্রটির নির্মাণ কাজে, দেখাতে চেয়েছেন পদ্মার হাসি, দুঃখ, কান্না….

প্রচলিত ধারণার বাহিরে গিয়ে নির্মাতা প্রথমেই দর্শকের চোখে বিস্ময় সৃষ্টি করে একটা কাগজের নৌকা দিয়ে, যেটা পদ্মার বুকে ভাসতে ভাসতে ধীরে ধীরে একটা সময় হারিয়ে যায় অতল গহ্ববরে। এটা একটা বিশেষ দৃশ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যা শেষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তোলে। এরপরেই অদৃশ্য কারো হাত থেকে ছোড়া ঢিলে তৈরী হওয়া জলতরঙ্গের যায়গা থেকেই টাইটেল “জলেরও জলছবি” এবং উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সূচনা এবং ধীরে ধীরে গল্পের এগিয়ে যাওয়া।

পদ্মার সুসময়ের স্মৃতি দিয়েই যাত্রা শুরু, পাল তোলা নৌকা,  জেলের মাছ ধরার উচ্ছাস অথবা নদীপাড়ে নৌকা তৈরীর দৃশ্যের সাথে ছেলে পুলেদের নদীতে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে গোসল করার আনন্দ দর্শককে তৃপ্তি দিতে সক্ষম হয়েছে।

সাধারণ ডকুমেন্টরি চলচ্চিত্র সাধারণ ধারা বর্ণনার মাধ্যমে দৃশ্যায়িত হলেও পরিচালক বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে দেখিয়েছেন সংবাদপত্রের ব্যবহার এবং এটা যে কতোটা জোড়ালো হতে পারে তা প্রতিটা দর্শক স্বীকার করতে বাধ্য থাকবেন। তবে কিছুটা পরেই গল্পের মোড় ঘুড়তে থাকে, ধীরে ধীরে পানিশূন্য হতে থাকে পদ্মা, শিল্পবর্জ্যে ঢাকা পড়তে লাগলো নদীর পানি, বিষাক্ত হয়ে উঠতে লাগলো পরিবেশ, মারা যেতে লাগলো গৃহপালিত প্রাণিগুলো, দখল হতে শুরু করে নদী পাড়, ধীরে ধীরে একটা বিকট অবস্থা সৃষ্টি হয়ে যায়। একটা সময় দর্শকেরা সেই প্রথম দৃশ্যের কাগজের নৌকাটাকে খুঁজে পায়….53d66dabf071d59f6c53f9d037f078ab-400x270

পরিচালনা ও সিনেমাটোগ্রাফি যেহুতু আহসিফ খান একাই করেছেন তাই তার সীমাবদ্ধতার যায়গা থেকে বেশ শক্তিশালি নির্মাণ হয়েছে, যেটা দেখাতে চেয়েছেন, দর্শকের হৃদয়ে যেটা অনুভব করাতে চেয়েছেন সেটা তিনি পেরেছেন।

পরিচালক সঙ্গীত নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড্ড মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন… একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যখন যেখানে যে ধরনের আবহ তৈরীর প্রয়োজন ছিলো সেটা তিনি দেখিয়েছেন। সম্পাদনা যথেষ্টই ভালো, ছোট খাটো কিছু বিষয় বাদ দিলে বেশ চমৎকার কাঁচি চালানো হয়েছে ফুটেজের উপর।

ব্যাক্তিগতভাবে স্কোরিং করতে গেলে,

  • গল্পঃ ৮/১০
  • চিত্রগ্রহনঃ ৭/১০
  • সম্পাদনাঃ ৬/১০
  • মিউজিকঃ ৭/১০
  • পরিচালনাঃ ৭/১০

 গড়ঃ ৭/১০

গড়ে তাকে ১০ এর মাঝে ৭ দিতে আমার আপত্তি নেই কোন।

সব কিছু মিলিয়েই বলতে হয় এধরনের একটা ডকুমেন্টরি চলচ্চিত্র আমাদের প্রয়োজন ছিলো, আমাদের মাঝে যে প্রশ্নগুলোর উদয় করেছেন নির্মাতা তার জন্য তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।


২ Comments

Leave a reply