Select Page

জাঁদরেল খলনায়িকা সুষমা আলম

জাঁদরেল খলনায়িকা সুষমা আলম

১.

নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রতি তার অনেক রাগ, ক্ষোভ। তিনি ঘসেটি বেগম। নবাব আলীবর্দী খানের বড় মেয়ে। সিরাজউদ্দৌলাকে বাংলার নবাব পদে ঘসেটি বেগম মানতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা শুরু করে এবং ইংরেজদের পক্ষ নেয়। নবাবকে দেখলেই ‘শয়তান’ নামে সম্বোধন করত ঘসেটি বেগম। এই ঘসেটি বেগমের চরিত্রে ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন খলনায়িকা সুষমা আলম

১.

পুরো বাড়ির কর্তৃত্ব তার হাতে। তার ভয়ে সবাই তটস্থ। বাড়ির বউগুলোকে নিজের শাসনের জালে আটকে রেখেছে কারো কিছু বলার যেন উপায় নেই। একচ্ছত্র আধিপত্য চলে তার। এরপর আসে ছোটবউ। ছোটবউ অন্যায় মানে না সে প্রতিবাদী, শুরু হয় ছোটবউয়ের সাথে তার সাপে-নেউলে যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল বুঝতে পারে। ছবির নাম ‘ছোটবউ’।

২.

শাবানা-জসিমের সংসারে আগুন লাগানোর জন্য হাজির শাবানার শ্বাশুড়ি। শাবানার দেবর জাফর ইকবাল ভাবীর অসুস্থতায় সেবা করলে তাদের নামে কুৎসা রটিয়ে দেয় শ্বাশুড়ি সুষমা। জসিম রাগের বশে জাফর ইকবালকে চড় মেরে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। ছবির নাম ‘লক্ষীর সংসার’।

৩.

আলমগীর বিয়ে করে শাবানাকে ঘরে এনেছে। শ্বাশুড়ি সুষমার কপালে চিন্তার ভাজ। সংসারে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী এলো বলে। শাবানার শ্বশুর আরিফুল হক সুষমাকে বোঝায়, ‘আরে এ হলো গরিব ঘরের মেয়ে, দেখো তোমার কথায় উঠবে আর বসবে।’ সুষমা যেন স্বস্তি পায়। শাবানার পরনে সোনার গহনা দেখে শ্বাশুড়ির চক্ষুচড়ক গাছ। বলে, ‘তোমার বাবা তো খেতেও পায় না ঠিকমতো, সোনার গহনা কেন? ওগুলো খুলে দাও।’ শাবানা বলে, ‘আজ রাতটা থাক, মা। কাল খুলে দেবো।’ কিন্তু শ্বাশুড়ি নাছোড়বান্দা বলে-’কেন, থাকবে কেন? এখনই খুলে দাও।’ শাবানা প্রথমদিনই বুঝে যায় শ্বাশুড়ি কেমন হবে। ছবির নাম ‘বাংলার মা’।

৪.

শাবনাজকে শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার করে সুষমা ও তার মেয়ে রীনা খান। নিজেরা পায়ে পা তুলে বসে খায় আর শাবনাজকে কাজ করায়। বাপ্পারাজ একটা ভুল বোঝার কারণে বুদ্ধি খাটিয়ে শাবনাজকে বিয়ে করে এবং অবহেলা করতে শুরু করে। এ সুযোগটা কাজে লাগায় সুষমা। কিন্তু একটা সময় বাপ্পা নিজের ভুল বুঝতে পারলে শাবনাজের হাতে সংসারের কর্তৃত্ব চলে আসে এবং সুষমা ও রীনা তার কথায় চলে।

সুষমা আলম

আমাদের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে খলনায়িকাদের মধ্যে অন্যতম সেরা একজন অভিনেত্রী। বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়াতে তিনি রীনা খানের মতো জাঁদরেল খলনায়িকার মায়ের ভূমিকাতেও অভিনয় করেছেন এবং তারা দুজন একসাথে যেসব ছবি করেছেন সেগুলোতে সাংসারিক অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল তাদের অভিনয়ের গুণে। সুষমা আলমের নেতিবাচক অভিনয় ছিল দুর্দান্ত। চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরত এমন বাস্তব অভিনয় করতেন। অনেক ছবিতে খলনায়িকার অভিনয় করেছেন। পজেটিভ চরিত্রে হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতে ছিলেন যার মধ্যে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ অন্যতম। এ ছবিতে রাজকুমার ইলিয়াস কাঞ্চনের মা ছিলেন। ব্যতিক্রমী ছিলেন ‘এই ঘর এই সংসার’ ছবির জলহস্তিনী চরিত্রে। খলিলের পার্সোনাল সেক্রেটারি থাকে, তাঁর হুকুমমতো কাজ করে। কমেডি চরিত্র ছিল এবং এ ধরনের চরিত্রেও তাঁর ন্যাচারাল অভিনয় প্রমাণ করে তিনি বড় মাপের অভিনেত্রী ছিলেন।

ঘসেটি বেগম চরিত্রে সুষমা

মূলনাম শামসুন্নাহার; উল্লেখযোগ্য ছবি— রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা, রাজমুকুট, বিন্দু থেকে বৃত্ত, অচেনা অতিথি, ফকির মজনু শাহ, ঘরের বৌ, পুনর্মিলন, মেঘমালা, অনুরাগ, নাগিনী কন্যা, সুন্দরী, হারানো সুর, লাল কাজল, লক্ষীর সংসার, বেদের মেয়ে জোসনা, বাংলার মা, ঘর দুয়ার, বিদ্রোহী বধূ, নির্মম প্রভৃতি।

চলচ্চিত্রের পাশাপাশি কিছু নাটকেও কাজ করেছেন।

২০১১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন