জাগো: আর কত ঘুমাব
আপনার কি এমন কোন বন্ধু আছে যে খেলা দেখতে পছন্দ করে না কিন্তু সিনেমা দেখে… কিংবা খেলা দেখতে পছন্দ করে কিন্তু ছবি দেখতে চায় না। তাকে কি আপনি পরিবর্তন করতে চান। তাহলে আমার পক্ষ থেকে পরামর্শ বা অনুরোধ থাকবে আপনি তাকে একটি সিনেমা দেখান। না কোন বিদেশি সিনেমার নাম বলব না, বলব না কোন নিয়মিত পেশাদার নির্মাতার হাতে তৈরি সিনেমার নাম। বলব খিজির হায়াত খান পরিচালিত ’জাগো’ ছবির নাম।
কেন বলছি তা বুঝতে পারবেন যদি ‘জাগো’ নামের এই ছবিটি দেখুন। এখানেই দেখতে পারবেন খেলার সাথে দেশপ্রেম কীভাবে সরল রৈখিক গতিতে এগিয়ে চলে। দেশের সম্মান উচু রাখার জন্য কিছু তরুণ কীভাবে লড়তে পারে। কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে!
এই ছবিতে যারা কাজ করেছেন তাদের অনেকেরই জীবনের প্রথম ছবি এটি। স্বয়ং পরিচালক সহ ছবিতে দেখানো ফুটবল টিমের প্রায় সবারই জীবনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এটি। দলের ক্যাপ্টেন রওনক হাসান থেকে শুরু করে দলের অন্যান্য খেলোয়াড় যেমন এফ এস নাঈম, আরিফিন শুভ, জসীম উদ্দিন পলাশও নতুন। কিন্তু কারো অভিনয় দেখে মনে হবে না যে তারা নতুন । বিশেষ করে অচেনা মুখ জসীম উদ্দিন পলাশের অভিনয় দেখে আপনার চোখের কোনায় পানিও জমতে পারে।
মুভি রিভিউ : জাগো,(DEAR TO DREAM)
পরিচালনা : খিজির হায়াত খান
শ্রেষ্ঠাংশে : ফেরদৌস, তারিক আনাম খান, আফসান আরা বিন্দু, খিজির হায়াত খান, রওনক হাসান, আরিফিন শুভ, নাঈম, জসীম উদ্দিন পলাশ, ডিকন নুর, শারাফ আহমেদ জীবন।
⛳সিনেমার প্লট : দেশের সম্মান রক্ষার জন্য উদীয়মান একদল তরুণের ফুটবল যুদ্ধকে ঘিরেই গল্প আবর্তিত হয়েছে। ⚽⚽⚽⚽
চরিত্র বিশ্লেষণ : আগেই বলেছি এই ছবিতে যারা অভিনয় করেছেন তাদের বেশির ভাগই নতুন। তাদের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে। ফেরদৌসসহ তার পাড়ার ছোট ভাইরা সবাই ফুটবল অনুরাগী।
তারিক আনাম খানের শারিরিক ভাষা দেখলে মনে হবে তিনি সত্যিই একজন সাবেক ফুটবলার। ⚽⚽⛳
⚽ রওনক হাসান একজন গম্ভীর মনোভাবের চিন্তাশীল ছেলে। যে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করতে রাজি না।
⚽ নাঈম প্লেবয় টাইপের ছেলে। সে ফুটবলকেও ভালোবাসে।
⚽ বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভর জীবনটা সবার থেকে আলাদা। রাফি চরিত্রের চিত্রায়ন খুব সুন্দরভাবে করেছেন।
⚽ আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্র লেগেছে মেজবাহ চরিত্রটিকে। জসীম উদ্দিন পলাশ এই চরিত্রে ভালো খেল দেখিয়েছেন। যদিও তাকে অন্য কোন ছবি বা নাটকে দেখিনি। ?????
⚽ ম্যানেজার মুন্না চরিত্রে খিজির হায়াত খানও ভালো অভিনয় করেছেন।
⚽ ত্রিপুরা ক্যাপ্টেনের চিত্রায়ন দেখলে হয়ত আপনি রেগে যাবেন। হয়ত বলবেন এই শালার এত কেন ভাব?????
⚽⚽ এর বাইরে ডিকন নুর, আফসান আরা বিন্দু তাদের নিজেদের মত অভিনয় করেছেন।
⚽ ছবিটির আয়োজন ছোট হলেও ছিল চোখে পড়ার মতো। যেমন ধারাভাষ্যকার চরিত্রে ছিলেন প্রয়াত খোদা বক্স মৃধা। যারা আগে আমার মতো রেডিওতে খেলা শুনতেন তারা অনেকটা পুর্বের সেই দিন গুলোর স্মৃতিচারণ করবেন। ???
⛳⚽ জাগো ছবির চিত্রনাট্যেও দেখা গিয়েছে শৈল্পিকতার ছোঁয়া, দেখা গেছে পেশাদারীত্বের চিত্র। ফুটবল খেলার জন্য বেশ ভালো অনুশীলনই করতে হয়েছে সব অভনেতাদেরকে। কিছু সময়ের জন্য মনে হবে তারা আসলেই ফুটবলার কিংবা বাস্তব জীবনে তারা নিয়মিত ফুটবল খেলে।⚽⚽
চিত্রগ্রহণ : এই শাখার কাজ করেছেন বর্তমান ‘আয়নাবাজি’-খ্যাত রাশেদ জামান। টিভিতে যেভাবে খেলা দেখেন সেভাবেই খেলা দেখানো হয়েছে। অল্প প্রযুক্তি ব্যাবহার করেও খেলা দেখিয়েছেন টিভির মতো। আবার অন্য সময় এমনভাবে কাজ করেছেন আপনার মনে হবে আপনার চোখের সামনেই ঘটছে ঘটনাগুলো।☺☺
⚽ এই ছবির সংগীতায়োজন করেছেন সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী অর্ণব। গানগুলো বেশ তালের। থিম সংটা দারুণ একটা কাজ যা ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড হিসেবে যথার্থ ছিল। দুটি রোমান্টিক গান আছে যেগুলো আমি গত দুবছর ধরে সপ্তাহে অন্তত ১৫-২০বার শুনি। এর বাইরে ফ্রেন্ডশিপের একটা গান আছে যা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কানে আসে।
⚽ এত কিছুর মাঝে একটা বিষয় খটকা লেগেছে তা হল ভাষা। এই ছবিতে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা কুমিল্লার না। আবার সবার বাড়ি একই জায়গায় বা পাশাপাশি হলেও তাদের একেকজনের কথার সুর আলাদা। আমি ভাষার দিকটা খুব বেশি খেয়াল করি বলেই হয়ত এটি আমার কাছে ধরা পড়েছে। আপনার কাছে হয়ত ধরা নাও পড়তে পারে।? ??
- আমি মুভিটি বিশ্লেষণ করে দিলাম এরপর মুভিটি দেখার দায়িত্ব আপনার। রেটিং দিচ্ছি না আপনি নিজ দায়িত্বে দিয়ে নিয়েন। অন্তত এটুকু বলতে পারি মুভিটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।