
জাহিদ হাসান নামটাই যেন ‘উৎসব’
আমরা যারা নব্বই দশকের প্রজন্ম জাহিদ হাসান তাদের কাছে একটা ইমোশনের নাম। বিটিভির নাটকের দিনগুলোতে জাহিদ হাসান ছিল পরিপূর্ণ এক ইমোশন।

হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় টিভি নাটকগুলোর জাহিদ হাসান কি ছিল সেটা কি নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে! ‘আজ রবিবার, নক্ষত্রের রাত, সবুজ সাথী, সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড’ এক একটা কাজ পরিপূর্ণ বিনোদনে ভরা ছিল। ‘সবুজ ছায়া’ নাটকের সেই সংলাপ কে ভুলতে পারে-‘আগে মানুষ অনেক ভালো কাজ করত রে ক্যাকো ক্যাকো, এখন আর মানুষ ভালো কাজ করে না রে ক্যাকো ক্যাকো।’ এছাড়া ‘বন্ধন’ নাটকের জাহিদ হাসান বা নিজের পরিচালনায় ‘লাল নীল বেগুনী’ কিংবা ‘ছায়াবৃক্ষ’ নাটকে ভুলবশত বন্দুকের গুলিতে মারা যাওয়া সেই মর্মান্তিক চরিত্রের জাহিদ হাসানকে কে ভুলতে পারে!
মনে পড়ে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ যেদিন বিটিভিতে দেখিয়েছিল আমাদের গ্রামের ক্লাবঘরেও লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিল শুধু জাহিদ হাসানকে দেখার জন্য। এতটা জনপ্রিয়তা ছিল তার। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বলাকা সিনেমাহলে দেখতে গিয়েও দেখেছি দেশের গুণগত পরিবর্তন আনতে চাওয়া এক তরুণ যে দেশের হর্তাকর্তাদের জিম্মি করে রেখেছে সেই প্রধান চরিত্রে জাহিদ হাসানের এক একটা সংলাপে করতালিতে ফেটে পড়েছিল দর্শক। ‘প্রজাপতি’ ছবি বলাকায় দেখতে গিয়ে একইভাবে খেয়াল করেছি তখনকার ক্রেজ মোশাররফ করিম থাকার পরেও জাহিদ হাসানকে নিয়ে ছিল বাড়তি আগ্রহ। ‘হালদা’ ছবিতেও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় জাহিদ হাসানকে অন্যরকম লেগেছিল।
সেই জাহিদ হাসানও মানহীন নাটকে যখন ব্যস্ত ছিল আমাদের আফসোসের সীমা ছিল না। মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরীদের পারফরম্যান্সে দর্শক যখন মুগ্ধ তখন আমাদের আফসোস কাজ করত জাহিদ হাসান কবে আবার পুরনো ইমেজে নতুন করে ফিরবে। শেষমেশ তানিম নূরের ‘উৎসব’ ছবিতে জাহিদ হাসানের কামব্যাক এত আলোচিত হয়ে উঠেছে যে এর চেয়ে দুর্দান্ত ফেরা আর হতেই পারে না। সিনেপ্লেক্সে জাহিদ হাসানকে নিয়েই দর্শকের প্রধান আগ্রহ যেন, অন্তত প্রতিক্রিয়া সেটাই বলে।
‘উৎসব’ ছবিতে জাহিদ হাসানের চরিত্রটি এমন যে ন্যাচারালি শুধু অভিনয়টা করে যাচ্ছে কিন্তু দর্শক নির্মল বিনোদন পাচ্ছে। তার সংলাপ বলার ধরন, বডি ল্যাংগুয়েজের মধ্যেই একটা মজাদার ব্যাপার ছিল যেটাতে দর্শক মিশে যেতে পেরেছে। সেই ‘আজ রবিবার’-এর মজার চরিত্রের মতোই যেন পুরনো জাহিদ হাসানকে নতুন করে দর্শক খুঁজে পেয়েছে তাই লুফে নিয়েছে। জাহিদ হাসানের জাহাঙ্গীর চরিত্র যেমন মজার আবার মন খারাপ করে দেয়ার মতো চরিত্রও কেননা আমরা প্রত্যেকে কখনো না কখনো একা বোধ করি, জীবনের হিসাবনিকাশে নিজেরা নিজেদের দাঁড় করাই কল্পনায় বা বাস্তবে। জাহিদ হাসানের অভিনয় আমাদেরকেই তুলে ধরে ‘উৎসব’ ছবিতে।

আজ ‘উৎসব’ ছবিতে এত অভিনয়শিল্পী থাকার পরেও দর্শকের আলোচনার কেন্দ্রে যখন নতুন করে জাহিদ হাসান নামটি বারবার আসে তখন বুঝতে বাকি থাকে না যে জাহিদ হাসান নামটি এখনো দর্শকের কাছে কতটা ইমোশনের! এ নামটি দর্শক এখনো ফিল করে, আরো মুগ্ধ হতে চায় তার অভিনয়ে নতুন করে। ‘উৎসব’ ছবি জাহিদ হাসানকে নিয়ে আবার কথা বলার সুযোগ দিয়েছে।
যেতে যেতে এ কথাই বলতে চাই এই জাহিদ হাসান যেন আর হারিয়ে না যায়! এই জাহিদ হাসানকে আমরা আবার নিয়মিত সিনেমার পর্দায় দেখতে চাই। আমাদের ছোটবেলার সুখস্মৃতির অংশে জাহিদ হাসান নামটি যেভাবে রয়েছে বর্তমান প্রজন্ম যেন নতুন করে আরেক জাহিদ হাসানকে দেখতে পায় তাহলে তাদেরও স্মৃতিতে নতুন করে একজন জাহিদ হাসান থেকে যাবে।
আমরাও অদূর ভবিষ্যতে নতুন জাহিদ হাসানের কাজ দেখে নতুন করে ইমোশনে ডুবব, তার অভিনয়ে মুগ্ধ হবো, তার নতুন চরিত্রগুলোকে ভালোবাসব এবং এভাবে আবার পুরনো দিনের মতো নস্টালজিক হবো একটা বয়সে গিয়ে। জাহিদ হাসানের ভাষাতেই আমরা তখন বলব-‘কেউ আমাকে ভালোবাসলে আমার কান্না পায়।’