Select Page

‘কারাগার’ নিয়ে আমাদের একটু রাগ হওয়াই স্বাভাবিক

‘কারাগার’ নিয়ে আমাদের একটু রাগ হওয়াই স্বাভাবিক

‘কারাগার’-এর প্রথম সিজন এমনভাবে এমন জায়গায় শেষ করলেন নির্মাতা শাওকী যে, আমাদের একটু রাগ হওয়াই স্বাভাবিক …

২০২০ সালে রিলিজ পাওয়া ‘তাকদীর’ ওয়েব সিরিজকে অনেকে ক্ল্যাসিক হিসেবে মানে। সেই সিরিজের অসামান্য জনপ্রিয়তার দুই বছর পর সৈকত আহমেদ শাওকী ও তার টিম নতুন সিরিজ ‘কারাগার’ নিয়ে হাজির হলেন ভারতীয় প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে।

দুই সিজনের এই সিরিজের প্রথম সিজনে আছে সাত এপিসোড। সেখানে মিস্ট্রি জনরার সঙ্গে হিস্ট্রির উপর ভিত্তি করে শাওকী হাঁটলেন এক নতুন পথে। আমরা সাধারণত এই ঘরানার কাজে যেমন গতি বা প্লট লক্ষ্য করি শাওকী সেই পথে হাটেন তো নাই; সাথে আমাদের পুরো সাত এপিসোডে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন গল্পের গতি না ঝুলিয়ে।

একেবারেই নতুন রকমের গল্প এবং তার সাথে খাপে খাপ চিত্রনাট্য, সংলাপ, অসাধারণ বিজিএম ও ক্যামেরার কাজ মিলিয়ে যে প্রবল আগ্রহ নিয়ে আমরা শাওকির এই নব্য নির্মাণ দেখতে বসেছিলাম সেটা খেই হারায়নি একদমই। টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের কোনো কিছুতেই ছাড় না দেয়া এই সিরিজকে নিঃসন্দেহে সময়ের অন্যতম সেরা নির্মাণ হিসেবে জায়গা করে করে দেবে।

২৫০ ধরে বন্দি এক কয়েদির হঠাৎ করে এক বন্ধ থাকা সেলে হাজির হওয়ার রহস্য, সাসপেন্স ও মিস্ট্রি ঘরানার গল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিরিজের তুরুপের তাস নিঃসন্দেহে প্রতিটা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মন ভালো করে দেয়া পারফরম্যান্স। এমনিতেই এই সিরিজের মাল্টিকাস্টিং তো আমাদের আগেই চমকে দিয়েছিলো। তবে সেই চমক বা প্রত্যাশার জায়গা যেনো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিটা শিল্পীর নিজ নিজ জায়গা থেকে সেরাটা দেবার প্রত্যয় থেকে।

এই সময়ে দাঁড়িয়ে দেশের শক্তিশালী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী একটা শব্দ উচ্চারণ না করেও শো রানার হিসেবে পুরাই মাতিয়েছেন… এমন চরিত্রে তাকে ভাবা অবশ্যই প্রশংসনীয়। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আফজাল হোসেনের সাম্প্রতিক সময়ের মানে ওটিটির সেরা কাজ ‘কারগার’। পুরাই আগুন ছড়িয়েছেন তিনি যতোটা সময় স্ক্রিনে ছিলেন।

তবে যে দুজন অভিনেতা এই রেসে একটু এগিয়ে থাকবেন তারা হলেন ইন্তেখাব দিনার এবং এফএস নাঈম। ওটিটির কল্যাণে এর আগে প্রতিটা ফিকশনে বাউন্ডারি হাকানো দিনার এবার হাত খুলে ছক্কা মেরেছেন। তাকে জেলার মোস্তাক ছাড়া অন্যকিছু ভাবার কোনো অপশন ছিলো না। অন্যদিকে টেলিভিশনে এসএস নাঈম অভিনেতা হিসেবে নিজের যতোখানি মেধার জানান দিয়েছিলেন এই ‘কারাগার’ যেন তার সেই মেধার খতিয়ান পুরাই নতুন করে লিখতে বাধ্য করবে। মাঝের সাময়িক বিরতির পর এমন চমকপ্রদভাবে ফিরবেন নাঈম তা কে ভেবেছিলেন। হোয়াট অ্যা কামব্যাক!

মূল নারী চরিত্রে তাসনিয়া ফারিণ নিঃসন্দেহে ভালো করেছেন তবে তার থেকে আমাদের প্রত্যাশা অনেক থাকার কারণেই হয়তো একটু হোচট খেয়েছি আমরা হঠাৎ হঠাৎ। আবদুল্লাহ আল সেন্টু রহস্যময় চরিত্রগুলো কি নিজের নামেই লিখে নিচ্ছেন কিনা সাম্প্রতিককালে এই প্রশ্নটা করে রাখলাম। এ কে আজাদ সেতু তার চরিত্রের ভারসাম্য বজায় রেখেই প্রথম সিজনে লেটার নাম্বার পেয়ে উতরে গেলেন।

বিজরী বরকতউল্লাহকে অনেকদিন পরে স্ক্রিনে দেখে ভালো লাগলো। রিয়েল লাইফের জীবন সাথীর সাথে রিল লাইফেও জেলারের স্ত্রী পান্না চরিত্রে তিনি জমিয়েই রেখেছিলেন। তবে আর একজনের কথা না বললেই নয় তিনি তরুণ অভিনেতা পার্থ শেখ। পরিমিত কিন্তু জাত চেনানো পার্থ অল্প কয়টা সিনেই জানান দিলেন তিনি আগামীর সম্ভাবনা। পাশপাশি জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ এবং তানভীন সুইটির অল্প সময়ের উপস্থিতি জানান দিয়েছে যে, দ্বিতীয় সিজনে হয়তো তারা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় হাজির হবেন।

প্রথম সিজন এমনভাবে এমন জায়গায় শেষ করলেন নির্মাতা শাওকী যে, আমাদের একটু রাগ হওয়াই স্বাভাবিক। এমনভাবে এই জায়গায় কেউ শেষ করে! মানি হেইস্ট বা ব্রেকিং ব্যাডের একেকটা সিজন শেষ হলে যেমন একরাশ প্রশ্ন নিয়ে আমাদের কয়েকদিন হা-হুতাশ করে কাটাতে হতো আজ নিজেদের দেশের একটি সিরিজ নিয়ে সেই একই রকম হা-হুতাশ অনুভূত হচ্ছে।

উপরে উল্লেখিত দুই জনপ্রিয় সিরিজের সাথে কোনো রকম তুলনা করছি না ‘কারগার’-এর। তবে সাধারণ একজন দর্শক হিসেবে অনুভূতিটা একই রকম থাকায় নিজের লেখায় সেটা উল্লেখ না করেও পারলাম না। এই অনুভূতি বা হা-হুতাশটাই নির্মাতা হিসেবে শাওকী এবং তার পুরো ‘কারগার’ টিমের সফলতা। সামনের সিজনে সকল প্রশ্নের উত্তর তো মিলবেই সাথে গল্পের গতি ও ক্ষুরধার অভিনয় দুটোই সমানতালে আমাদের বসিয়ে রাখবে স্ক্রিনের সামনে সেটাই কামনা।

পরিশেষে লিখতেই হচ্ছে ‘কারগার’ অসাধারণ গাঁথুনি দিয়ে আমাদের এক অদ্ভুত ভালোলাগায় বন্দী করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

আফজালুর ফেরদৌস রুমন

শখের বশে চলচ্চিত্র ও নাটক নিয়ে লিখি

মন্তব্য করুন