Select Page

জীবনদর্শী হুমায়ূনাবহে ঘুরে দাঁড়াক বাংলা নাটক-চলচ্চিত্র

জীবনদর্শী হুমায়ূনাবহে ঘুরে দাঁড়াক বাংলা নাটক-চলচ্চিত্র

14291849_1619636811662762_2824004875173337068_nহঠাৎ আমার মনে হচ্ছে, কেবল হুমায়ুন আহমেদ স্যারকে আদর্শজ্ঞান করলেই কেবল বাংলা চলচ্চিত্র আর নাটক তার মুখ থুবড়ে পড়া অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে পারে। ওপার বাংলার সুনীল-সমরেশ-শীর্ষেন্দু এই ত্রিমূর্তির দাপট, দেশে ছফা হুমায়ুন আজাদ কিংবা ইমদাদুল হক মিলন দুই হাত খুলে লিখেছেন। জনপ্রিয়তা অর্জনে নিজ ব্যর্থতা আর ক্ষোভ ঝাড়তে গিয়ে বদরাগী হুমায়ুন আজাদ হুমায়ুন আহমেদ স্যারকে অপন্যাসিক পর্যন্ত বলেছেন।

কিন্তু কি লাভ হযেছে ? রাজ্জাক স্যারের বিশাল জ্ঞানের জাহাজ এখন আহমেদ ছফার যদ্যপি আমার গুরুর মলাটে বন্দী। গন্ধগোকুল হেঁটে যাওয়ার পর কোনো এলাকায় কিছুক্ষণ তার যেমন রেশ থাকে; তারপর শেষ হয়। তেমনি হুমায়ুন আজাদের রচনা-লেখালেখি সীমিত হয়ে এসেছে তার ভক্তকূলের মধ্যেই। আর সুনীল সমরেশ উনারা তো আর আমাদের দেশের কেউ নন।

হ্যাঁ হুমায়ুন আহমেদ পেরেছিলেন। তিনি পড়তে পেরেছিলেন মধ্যবিত্তের মন কি চায়। নিম্নবিত্ত কি চিন্তা করে, তার স্বপ্নের জগৎ টা কেমন হবে। তিনি এদের স্বপ্নের জগৎটাকে আরো প্রসারিত করতে পেরেছিলেন বলেই হয়ত বইমেলায় লাইন পড়ে যেত শুধু তাঁর বই কিনতে। ঐ হলুদ পাঞ্জাবী, বলদা হিমু, বুদ্ধিমান মিসির আলি, ঘাড়ত্যাড়া শুভ্র, প্রেমপিয়াসী রূপার খোলা জানালা কিংবা গাতক মতি মিয়ার একতারা দোতারার সুর মিলে মিশে একাকার ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গমাইল।

হুমায়ুন আহমেদ পারলেও বাকিরা পারেন নাই। তারা পারেন নাই কারণ মানুষ কি চায় সেটা তারা ধরতে পারেন নাই। বাংলাদেশের এতো সমস্যা ধরেন যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা, মুল্যস্ফৃতি, ব্যাংক জালিয়াতি, বন্যা, খরা, পানিদূষণ, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট, প্রাথমিকে শিক্ষার বেহাল দশা। এগুলোকে কোনো চলচ্চিত্র কিংবা নাটকে প্রতিফলিত করার চেষ্টা কেউ নেয়নি।

Oggatonama-the-unnamed-film-by-toukir-ahmed-with-mosharraf-karim-impress-telefilm posterমানুষ দিন শেষে চিন্তা করে এগুলোই চিন্তা করে ঘুমাতে যায়। আর ঘুমানোর আগে টিভি রিমোর্ট নিয়ে চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে যখন এগুলো দেখতে পাবে তার চোখ সেখানে আটকে যেতে বাধ্য। কিন্তু বস্তাপচা প্রেমের গল্প আর ভিনদেশীদের নকল ডুবিয়েছে সব। বাংলাদেশের মেয়েরা যে পোশাক পরে, এখানকার ছেলেমেয়ে যারা প্রেম করে তাদের জীবন কেমন, যারা সাধারণ ছেলেমেয়ে তাদের জীবনযাত্রা কেমন, এখানকার দাম্পত্যে কি ঘটে, পাশের বাড়ির মহিলার সঙ্গে অন্য মহিলার সম্পর্ক কেমন, কিছু বুড়ো ভাম কিভাবে মেয়ের বয়সী আরেকটা মেয়ের সঙ্গে পরকীয়া করে, ক্লাস ফাইভ সিক্সের বাচ্চা কিভাবে তার চেয়ে বয়সে বড় মেয়েদের ডিস্টার্ব করে এগুলোর প্রতিফলনের পাশাপাশি মৃদ্যু কিংবা পুরো রোমান্টিক গল্প হলে দর্শক দেখতে বাধ্য।

সবকিছু বাদ দেয়া যাক ভারতে বড় সসস্যা তাদের ওয়াশ রুম নেই। অনেকগুলো সিনেমা এমনকি থ্রি ইডিয়টস, পিকে, জাঞ্জির, ইদ্রাম্মাইয়ালাথো, ভিক্রামারাকুড়ু, গাভিন্দেরু আরাদেভেলে, সুকুমাড়ু, বৃন্দাবনম, ভেদালাম এর মত চলচ্চিত্রে বেশ বিশ্রিভাবে দেখানো হয়েছে তাদের দেশে বাথরুম নেই। এমনকটি গারাম মুভিতে স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে প্রস্রাব চাপলে একটা মেয়ে কতটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।

pori-moniআর আমরা সেই এফডিসির কাগজের ফুল, পুরাতন সেট আর চৌধুরী সাহেবের গল্প থেকে বের হয়ে ঢুকে পড়লাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের সব স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বাদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোও এখানে ব্রাত্য নাট্যকারের পছন্দ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

তাদের হিসেবে সেখানে কিউত-ইনোসেট ছেলেমেয়েরা পড়ে। এরা থ্রি-কোয়ার্টার, বস্তা প্যালাজ্জও, স্কিনি পাজামা, হাতা কাটা গেঞ্জি, ট্যাংটপ, এগুলা পরে। আর তাদের উন্মুক্ত রান কিংবা হাতের উপরের অংশে ক্যামেরার ফ্লাশবাল্ব ভালো জ্বলে। আর এভাবে তারা জ্বালিয়ে দিয়েছেন বাংলা নাটকের সবকিছু। দীর্ঘদিনের ব্যর্থতার পরও টনক নড়েনি তাদের। এখনও সতর্ক না হলে শেষ পর্যন্ত এমন এক অবস্থার সম্মুখীন হয়েছি আমরা যেখানে ভালো একটা বাংলা নাটক খুঁজতে আমাদের জাদুঘরে চোখ রাখতে হতে পারে। সবার সুবুদ্ধির উদয় হোক।

পরিচালকরা অন্তত চেষ্টা করুন এমন ধরণের নাটক সিনেমা বানাতে যেগুলোতে মানুষের চাওয়া পাওয়ার প্রতিফলন থাকে। আর এটা সম্ভব না হলে Sarah Bolger এর এমিলি মুভির মত বিশ্রিভাবে প্রশ্ন করতে হবে পর পর—-
বাংলাদেশের মানুষের কি প্রেম আর পরকীয়া বাদে অন্য কোনো কাজ নাই?
এদেশে কি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাই?
বাংলাদেশের মেয়েরা কি শীত গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ শুধু হাতাকাটা জামা পরে
এদেশের কোনো ছেলে কি লুঙ্গি পরে না?
দেশে উচ্চশিক্ষারত প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েই কি ফার্স্টফুডে গিয়ে বার্গার চিবোয়? কোন শিক্ষার্থী কি হলের পাতলা ডাল আর এক টুকরো মাংস দিয়ে গাদাখানেক ভাত গিলে মানববেতর জীবন যাপন করে না ?

হ্যাঁ এমন হাজারখানেক প্রশ্ন রয়েছে সবার মনে। আর এই প্রশ্নের উত্তর যখন মানুষ খুঁজে পাবে সেলুলয়েডে। তখনি দলে দলে আবার মানুষ ঢুকতে শুরু করবে হলগুলোতো। প্রাণ ফিরে পাবে বাংলা চলচ্চিত্র। নতুন করে বাঁচার আশা খুঁজে পাবেন পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, অভিনেত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীরাও।


মন্তব্য করুন