Select Page

ড্যানি সিডাক: ভিন্ন তারকা

ড্যানি সিডাক: ভিন্ন তারকা

ড্যানি সিডাক বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের সুপরিচিত অভিনেতা। ভিন্ন ঘরানার ছবিতে অভিনয় করে নিজস্ব আইডেনটিটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর অভিনীত বেশকিছু ছবির মধ্যে ফ্যান্টাসি, সাহসিকতার মিশ্রণ থাকায় দর্শকনন্দিত হয়েছিল। তাকে দর্শক সেভাবেই দেখতে চাইত। ছবিগুলোতে ড্যানি খুব সহজেই মানিয়ে যেতেন।

জন্ম ২৭ জুলাই, ১৯৬৭। বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়।

ড্যানির ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৮৪ সালে।
শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘লড়াকু’ ছবিতে নায়ক রুবেলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিশাবে নায়কের মতোই মার্শাল আর্ট জানা একজন খলনায়কের প্রয়োজন হয়েছিল। তিনি তখন ড্যানি সিডাককে ছবিতে নেন। ছবিটিতে রুবেল-ড্যানি সিডাকের মার্শাল আর্ট দর্শক পছন্দ করেছিল।

ঢালিউডে ড্যানি সিডাক নায়ক ও খলনায়ক ইমেজে অভিনয় করে গেছেন। দুই ভূমিকাতেই সফল তিনি।

ড্যানি সিডাকের উল্লেখযোগ্য ছবি – লড়াকু, বীরপুরুষ, দেনমোহর, সুপারম্যান, শক্তির লড়াই, বনের রাজা টারজান, গরিবের রাজা রবিনহুড, সিংহ পুরুষ, অকর্মা, গরিবের সংসার, ক্ষতি পূরণ, রূপের রাণী গানের রাজা, বাঘা-বাঘিনী, বিজলী তুফান, ফাইভ রাইফেলস, আলিফ লায়লা, মারকশা, শেষ আঘাত, চাকরানী, রুবেল আমার নাম, বজ্রপাত, জালিমের দুশমন, বীর সন্তান, প্রেম সোহাগী, অবুঝ মনের ভালোবাসা, চার সতীনের ঘর, কে আমি, অগ্নি ইত্যাদি।

ড্যানি-র ক্যারিয়ারে পরিচালক ইফতেখার জাহান একটা বিশেষ মাত্রা যোগ করেছিলেন। তাঁর পরিচালনায় ‘সুপারম্যান, শক্তির লড়াই, বনের রাজা টারজান’ ছবিগুলোতে বিভিন্ন ফ্যান্টাসিতে ভরপুর উপাদানে ড্যানিকে দর্শক পছন্দ করেছিল। ‘সুপারম্যান’ ছবিতে সেই নব্বই দশকের সীমিত সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে পরিচালক বিনোদনধর্মী ছবিটি নির্মাণ করেন। ছবিতে ড্যানি সুপারম্যান হয়ে অসহায় মানুষের উপকার করে। ভাঙা রেললাইন থেকে ট্রেন থামিয়ে রক্ষা করে মানুষের জীবন। ‘শক্তির লড়াই’ ছবিতেও রোবোকপ হয়ে দর্শকের সামনে হাজির হন ড্যানি। সেই সময়ের একজন দর্শকের স্মৃতিচারণায় জানা যায় ছবিটি দেখার জন্য দর্শক উৎসাহী ছিল। কারণ এ ধরনের ছবি তখনকার সময়ে নতুন কিছু ছিল। এ সময়ের আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাপ্রাপ্ত দর্শকের কাছে ছবিটি সমালোচিত হতে পারে কিন্তু ঐ সময়ের দর্শকের কাছে সমাদৃত হয়েছিল। বিনোদন পেয়েছিল দর্শক। ‘বনের রাজা টারজান’ ছবিতেও ড্যানিকে জংলি পোশাকে ভিন্নভাবে দেখা যায়। আধুনিক মানুষের সাথে তার বিরোধ হয়। চিড়িয়াখানাতে তাকে নূতন বেড়াতে নিয়ে গেলে সেখানে বন্য প্রাণীদের আটকে রাখা হয় জানার পর প্রতিবাদ করে। বনের প্রাণীদের সাথে তার সখ্য হয়। তাদের সাথে ভাব বিনিময় করত, আওয়াজ করে ডাকত। খুবই বিনোদনধর্মী ছবি। একইভাবে ‘আলিফ লায়লা’ ছবিটিও ফ্যান্টাসিতে ভরপুর। জাদু বিষয়ক বিভিন্ন কারসাজি থাকে ছবিতে। যেমন – জায়নামাজে করে উড়ে যাওয়া। এ দৃশ্যগুলো আমাদের নব্বই দশকীয় শৈশব-কৈশোরের দিনগুলোকে রঙিন করেছিল সেই ফ্যান্টাসিতে। ‘গরিবের রাজা রবিনহুড’ ছবিতেও গরিলা, কুকুর, বানর এ প্রাণীগুলোর সাথে ভাব জমে ওঠে ড্যানির। তারা তার কথা শুনত।

ড্যানি সিডাক তার ভিন্ন ঘরানার ছবিগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক কাজ করেছেন। ‘বনের রাজা টারজান’ ছবিতে তাকে চিতাবাঘের সাথে লড়াই করতে হয়েছিল বাস্তবে। ‘বাঘা বাঘিনী’ ছবিতে তাকে জীবন্ত সিংহের খাঁচায় ছেড়ে দেয়া হয়। সিকোয়েন্সটি ছিল আহমেদ শরীফ ও নাসির খানের হাতে তার মৃত্যু হবে এবং সিংহটি তাদেরই পোষা। ড্যানি জানায় সিংহটি ছিল সার্কাসের। ড্যানি পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু-র কথামতো তাকে অভিনয়টা করতে হয়। এক পর্যায়ে সিংহের সাথে লড়াই করতে গিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েন ড্যানি। পরে তাকে বাঁচানো হয়।

‘অকর্মা’ ছবিতে খলনায়ক ড্যানি সিডাকের একটা অসাধারণ ক্লাইমেক্স ছিল। রুবেল আমির সিরাজীকে শায়েস্তা করার সময় তার গডফাদারের খোঁজ দিতে বলে। সিরাজী জানায়, তার উপরে হাই কমান্ড আছে যার সাথে টেলিফোনে কথা হত কিন্তু দেখেনি কখনো। তখন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে আমির সিরাজীর বাড়ির কাজের লোক থেকে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর ড্যানি সিডাক। নকল চুল, দাড়ি, গোঁফ, দাঁত সব সরিয়ে ড্যানি হাজির হয় এবং বলেন-‘ইয়েস আই অ্যাম দ্য হাই কমান্ড।’ অসাধারণ ছিল অভিনয়।

ড্যানির ছবিতে বিপরীতে প্রায় নিয়মিত ছিলেন নূতন। ‘গরিবের রাজা রবিনহুড’-এ তার নায়িকা ছিল টলিউডের শতাব্দী রায় এবং ‘সিংহ পুরুষ’ ছবিতে নায়িকা শ্রীলেখা মিত্র।

ড্যানি সিডাক ফ্যামিলি ড্রামা ঘরানার ছবিতেও কাজ করেন। এর মধ্যে ‘দেন মোহর, গরিবের সংসার’ তার উল্লেখযোগ্য ছবি। এছাড়া অ্যাকশন ছবিতে দারুণ ছিলেন। লুকের দিক থেকে তার সেরা ছবি ‘ক্ষতি পূরণ।’ এ ছবিতে ঘাতকের লুকে একটা ছোট্ট মেয়ের সামনে বারবার হাজির হয় ড্যানি। গোঁফ ও চাপ চাপ দাড়ির লুকটি ছিল ভয়ঙ্কর। অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন। ড্যানির ফিটনেস চমৎকার। জমকালো কস্টিউমে তাকে বেশি মানায়। ‘কে আমি’ ছবিটি তার অন্যতম প্রমাণ।

ড্যানি ক্যারিয়ারে নব্বই পরবর্তী সময়ে প্রযোজক হবার সময় নিজের অবস্থান হারান। অশ্লীল ছবির সাথে যুক্ত হয়ে যান যার জন্য ক্যারিয়ার আর দাঁড়ায়নি। তবে তার আগের ছবিগুলোর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ তারকা হয়ে ওঠেন।

ড্যানি সিডাক ভিন্ন তারকা তার নিজস্ব একটা স্টাইলের জন্য। যে ফ্যান্টাসি জাতীয় বিনোদনধর্মী ছবি তিনি করতেন সেগুলো আজকের প্রযুক্তিগত আধুনিকতার সাথে মিশে যাওয়া নব্য প্রজন্মের কাছে সমালোচিত হতেই পারে বা তারা নাক সিঁটকানো স্বভাব দেখাতে পারেন। কিন্তু তার সময় এবং দেশীয় চলচ্চিত্রের সেই সময়কার সীমিত সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে ছবিগুলো সমাদৃত হয়েছে দর্শকের কাছে। ড্যানি সিডাক সেজন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

 


Leave a reply