নজরুল ইসলাম: যে বাঙালি পরিচালকের কাছে পাকিস্তানি সিনেমার অনেক ঋণ
বাংলাদেশ স্বাধীনতার হওয়ার পর অনেক বাঙালি কলাকুশলী পাকিস্তানে স্থায়ী হয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে অনেকে ঢাকায় ফিরেও আসে। ফিরে না আসার তালিকায় আছেন নজরুল ইসলাম বা নজর-উল-ইসলাম। ঢাকার বাংলা সিনেমায় তার ক্যারিয়ার শুরু হলেও স্বাধীনতার পরে প্রায় আড়াব দশক তিনি ললিউডের শীর্ষ নির্মাতা হিসেবে কাজ করেছিলেন।
বলা হয়ে থাকে, শবনম চলে যাওয়ার পর ললিউডে ধস নামে। এখনো ওই ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে হিট সিনেমা ‘আয়না’। শবনম-নাদিমের অতিচর্চিত সিনেমাটির পরিচালক নজরুল ইসলাম।
১৯৩৯ সালে ব্রিটিশ ইনডিয়ার কলকাতায় জন্ম নজরুল ইসলামের। পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে চলে আসেন। আর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থিতু হন লহোরে। সেখানেই ১৯৯৪ সালের ১১ জানুয়ারি মারা যান।
১৯৬০ এর দশকে চিত্রসম্পাদক হিসেবে ঢাকায় ক্যারিয়ার শুরু করেন নজরুল ইসলাম। পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয় ১৯৬৬ সালে। ওই বছর মুক্তি পায় বাংলা ‘কার বউ’ ও উর্দু ‘কাজল’।
তার বাংলা সিনেমার ট্র্যাক দেখে বোঝা যায়, নানান ঘরানার সিনেমায় হাত রপ্ত করেছিলেন। যেমন- আপন দুলাল (১৯৬৬), আলিবাবা (১৯৬৭), স্বর্ণ কমল (১৯৬৯), স্বরলিপি (১৯৭০) ও দর্পচূর্ণ (১৯৭০)। স্বাধীনতার আগে নির্মিত তার আরেকটি উর্দু সিনেমা হলো পিয়াসা (১৯৬৯)। এছাড়া স্বাধীনতাত্তোর রহমান পরিচালিত ‘জাহা বাজে সেহনাই’ সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন। সুচন্দার সঙ্গে তার একটি গানও ছিল ওই সিনেমায়।
লম্বা ক্যারিয়ারে গোটা চল্লিশেক সিনেমা পরিচালনা করেন নজরুল ইসলাম। বাংলা-উর্দু ছাড়াও তার ঝুলিতে রয়েছে পাঞ্জাবি সিনেমা। ললিউডে ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে ছিল তার রাজত্ব। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো এহসাস, শারাফাত, আম্বার, বান্দিশ, নাহি আভি নাহি, দো দিওয়ানে ও কালে চোর। বলা হয়ে থাকে, উর্দু সিনেমায় কাহিনীর বাস্তবসম্মত পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন তিনি। গল্প ও গানে সহজাত কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করেন তিনি। পেয়েছিলেন ৫টি নিগার পুরস্কার। বাংলায় নির্মিত তার ‘স্বরলিপি’ ও ‘দর্পচূর্ণ’ সিনেমার গানগুলো আজো জনপ্রিয়।
তার সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি ‘আয়না’ পাকিস্তানি সিনেমার ইতিহাসে রেকর্ড তৈরি করা মেগাহিট সিনেমা। এটি ১৯৭৭ সালের ১৮ মার্চ মুক্তি পায়। এরপর টানা ৪০১ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়। ‘আয়না’ ভারতীয় সিনেমার রিমেক হলেও ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের জরিপে ২০২২ সালে সর্বকালের শীর্ষ ১০ পাকিস্তানি সিনেমার তালিকায় স্থান পায়। একই গল্পের বাংলাদেশে নির্মিত হয়েছে জনপ্রিয় সিনেমা ‘দোলনা’। পাকিস্তানে থিতু হলেও সিনেমা সূত্রে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নজরুল ইসলামের। ১৯৯১ সালে মুক্তি পায় শাবানা-নাদিম-ফরসাল অভিনীত যৌথ প্রযোজনার ছবি। যার উর্দু নাম ছিল ‘আন্ধি’, আর বাংলায় ‘ঝড় তুফান’।