Select Page

নিভে নিভে ফের জ্বলে ওঠা শুভ

নিভে নিভে ফের জ্বলে ওঠা শুভ

আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো জানো না, যখন তোমাকে পাবো না…

অর্ধযুগ আগে সুপারহিট সিনেমা ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’তে চন্দন সিনহার এই গানটি শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরেছিল, বলা যায় গত দশকের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় গান। পরে তো তিনটি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পেয়ে গেল। বাংলা চলচ্চিত্রে তখন নায়ক পরিচয়ে অনেকেই ছিলেন কিন্তু কেউই দর্শকদের কাছে আকাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠেনি, ঠিক তখনই হৃদয়ে বসন্তের হাওয়া নিয়ে এসেছিলেন জয়া আহসানের এই নায়ক।

একেতে সিনেমার মূল নায়ক শাকিব খান, চরিত্রটিও সঠিকভাবে বিকশিত হয়নি। তবুও অপূর্বের ছেড়ে দেয়া চরিত্রে অভিনয় করে এই এক গান আর নায়কোচিত লুকের জন্য বেশ আলোচনায় চলে আসলেন আজকের সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভ

অবশ্য নামটি তখন দর্শকদের কাছে নতুন ছিল না। র‌্যাম্প মডেল থেকে আসা ছয় ফুটের ও বেশি লম্বা এই সুদর্শন নায়ক টেলিভিশনের পরিচিত মুখ ছিলেন। শুরুর দিকে নিজের জায়গা অর্জন করতে অনেক পরিশ্রম করেছেন। বিজ্ঞাপন থেকে নাটক করেছেন, জনপ্রিয় হয়েছে, টিভি পর্দায় ব্যস্ততা বেড়েছে। এত তারকার ভিড়ে ‘ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই’ তাঁর চরিত্রটিই বেশি আলোচিত হয়েছিল,’ইজ ইক্যুয়াল টু’ নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন,ক্লোজআপ থেকে বাংলালিংকের বিজ্ঞাপন করেছেন। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল সিনেমার নায়ক হবার, সেই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন।

প্রথম সিনেমা ‘নমুনা’ আজো মুক্তি পায়নি,আদৌ কখনো মুক্তি পাবে কিনা সন্দেহ। বন্ধুত্বের ছবি ‘জাগো’তে অভিনয়ের পর বেশ বিরতি দিয়ে একেবারে সিনেমায় নেমে পড়েন ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’ সিনেমা দিয়ে। এর মাঝে ‘ছায়া-ছবি’ আগ্রহ জাগিয়েও আর মুক্তি পায়নি। এই সিনেমা যখনই তাকে আলোচনার শীর্ষে নিয়ে আসলেন ঠিক তখনই ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’ এর মত অতিদূর্বল সিনেমায় অতিঅভিনয়ে তিনি শুধু হতাশই করেননি, যে আশার সঞ্চার করেছিলেন তা ভেস্তে দিয়েছিলেন।

তবুও এই দেশের দর্শকরা আশায় বুক বাঁধেন। নারীকেন্দ্রিক সুপারহিট ছবি ‘অগ্নি’র পর ‘তারকাঁটা’র প্রচারণার সুবাদে ঠিক যতটা আশা নিয়ে দর্শকরা সিনেমা হলে গিয়েছিলেন, ঠিক ততটা হতাশা নিয়ে ফিরেছিলেন। তবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছিল আরিফিন শুভর একাগ্রতা অভিনয়। কোরবানির ঈদে ‘কিস্তিমাত’ তো বলতে গেলে মুক্তির আগেই সুপারহিট হয়ে যায়, তবে এইবারেও আশায় গুড়েবালি!

‘ছুঁয়ে দিলে মন’, জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা শিহাব শাহীনের প্রথম সিনেমা। আরিফিন শুভর ক্যারিয়ারে সিনেমাটি নিয়ে এসেছিল স্বস্তির সুবাতাস। বছরের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা হয়েও সুপারহিট হয়নি। তবু্ও শিহাব শাহীনের সুন্দর নির্মাণে দর্শকরা এই সিনেমায় আরেফিন শুভকে অনেক পছন্দ করেছেন, গানগুলোও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল৷ একই বছরের ‘ওয়ার্নিং’ও নাম লিখিয়েছিল হতাশার খাতায়। মুসাফির, অস্তিত্ব, নিয়তি, প্রেমী ও প্রেমী, ধ্যততেরেকি সব সিনেমাগুলোই নিয়ে দর্শকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। কেউ পছন্দ করেছেন, কেউ বা অপছন্দ। তবে নির্মাতা আরেকটু সচেতন হলে ‘মুসাফির’ ছবিটি সমসাময়িক অনেক ছবি থেকেই বিশেষ হয়ে উঠতো।  তুমুল সাড়া জাগানো ‘আয়নাবাজি’তে স্বল্প সময়ে নির্ভরতার প্রতীক হয়েছেন।

পুলিশ থ্রিলার ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর বিশাল সাফল্য,ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। পুলিশের চরিত্রে নিজেকে ভাঙ্গলেন। যখন আবার তাকে নিয়ে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রদীপ উদিত হচ্ছিল ঠিক তখনই ‘একটি সিনেমার গল্প’ ও ‘ভালো থেকো’র মতো দূর্বল সিনেমা যেন সেটা প্রায় নিভিয়েই দিচ্ছিল। এক সিনেমায় জ্বলে উঠেন তো আরেক সিনেমায় নিভে যান। দর্শকরা তাকে পছন্দ করেন, দুই-দুইবার জনপ্রিয় শাখায় মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছিলেন, সমালোচক শাখাতেও পুরস্কার পেয়েছিলেন। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ শুধু ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হিট ছবিই নয়, এই সিনেমা তাকে এনে দিয়েছে জাতীয় পুরস্কারের মতো সম্মান।

‘আহারে’,নিজের দেশের সীমানা পেরিয়ে কলকাতায় ঋতুপর্ণার সঙ্গে করলেন এই সিনেমাটি৷ পুরো সিনেমায় এ যেন অন্য আরিফিন শুভ,যে দেখবে সেই প্রশংসা করবেই। এর মাঝে অপু হয়ে আসার কথা ‘অভিযাত্রিক’ সিনেমায়, কিন্তু দুঃখজনকভাবে করা হয়নি। ‘বালিঘর’ সিনেমাটিও আর হতে হতেও হলো না। ভাগ্য যেন সহায় হচ্ছে না, এই দুটি সিনেমা হলে নিজেকে আরো অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারতো। প্রচলিত আছে, আরিফিন শুভর সিনেমা ভাগ্যের চেয়ে গান ভাগ্য খুবই ভালো। সেটার প্রমাণ মিলে নিঃস্ব হয়ে যাবো, ছুঁয়ে দিলে মন, ভালোবাসা দাও ভালোবাসা নাও থেকে ঢাকাই শাড়ি পর্যন্ত।

দেশীয় সিনেমায় প্রায় দেড় বছরের বির‍তি কাটিয়ে ফিরেছেন ‘সাপলুডু’ সিনেমায়। গোলাম সোহরাব দোদুলের এই সিনেমায় তিনি ছিলেন প্রধান চরিত্রে। আলোচনায় এসেও ছবিটি আশানুরূপ ব্যবসাসফল হয়নি। মাঝে করলেন ওয়েব সিরিজ ‘কন্ট্রাক্ট’, করোনার প্রকোপ কাটিয়ে অনেকটা দুঃসাহস করেই মুক্তি দেয়া হয়েছিল আকাঙ্ক্ষিত সিনেমা ‘মিশন এক্সট্রিম’, দেশ-বিদেশে মোটামুটি সন্তোষজনকভাবে চলেছে, তবে অভিনয় ও ব্যক্তিত্বে দর্শকরা মুগ্ধ হয়েছেন শুভতে।

এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছেন জীবনের সেরা সময়ে, বলা যায় প্রত্যেক বাংলাদেশি অভিনেতাই এই স্বপ্ন একদিন দেখেছেন,তবে সেই স্বপ্ন সত্যি হয়ে এসেছে তার জন্য। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ‘বঙ্গবন্ধু’র চরিত্রে অভিনয় করছেন, ভারতের শ্যাম বেনেগালের নির্দেশনায় তিনি হয়ে উঠবেন রূপালি পর্দার বঙ্গবন্ধু। আশা করি প্রত্যাশার পারদ থাকবে প্রশংসাসূচক। অভিনয়ে তিনি দুর্দান্ত নয়, তবে চেষ্টা করলে যে ‘শুভ’ হয়ে উঠেন সেটাই চলচ্চিত্রের এই ক্রান্তিলগ্নে খুব প্রয়োজন। এছাড়া নিজের অভিনয়ের পাশাপাশি নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে করছেন রাফহান রাফীর ‘নূর’, আরো আছে ‘মিশন এক্সট্রিম ২’।

১৯৮২ সালের আজকের এইদিনে জন্মগ্রহণ করা এই জনপ্রিয় নায়ক আজ পেরোচ্ছেন জীবনের ৪০টি বছর, শুভকামনা রইলো।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র ও নাটক বিষয়ক লেখক

মন্তব্য করুন