Select Page

চমৎকার এক নির্মাতা নূর হোসেন বলাই

চমৎকার এক নির্মাতা নূর হোসেন বলাই

অনেকে হয়তো তাঁর নামও জানে না। তিনি একজন পরিচালক। নূর হোসেন বলাই। অনেকে তাঁর নাম না জানলেও তাঁর ছবির গান ধরলে ঠিকই গাইতে পারবে সাথে সাথে।

আসেন তাঁর ছবির গান ধরি— প্রেম কখনো মধুর, কখনো সে বেদনাবিধুর, কখনো হাসায় কখনো কাঁদায়, কখনো সে দূর বহুদূর… (মহৎ)
সুন্দর সন্ধ্যায় এ গান দিলাম উপহার, এই মন এ জীবন শুধু যে ভালোবাসার… (শেষ খেলা)
যে বানাইলো তোমারে যতন করে, ধন্য ধন্য বলি তারে… (শেষ খেলা)

গানগুলো নিশ্চয়ই অনেকের সুপরিচিত। গানগুলোর নির্মাণ দেখে থাকলে অবশ্যই দর্শক এটা স্বীকার করবে যে পরিচালক নূর হোসেন বলাই একজন দক্ষ নির্মাতা ছিলেন।

তার জন্ম হয় ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২, মুন্সিগঞ্জে। মৃত্যু ১০ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে। একক পরিচালনার আগে তিনি প্রযোজক ও সহকারী পরিচালক ছিলেন।

প্রথম পরিচালিত ছবি ‘ছক্কাপাঞ্জা’। অন্যান্য ছবি: বিষকন্যার প্রেম, দাগী, সিকান্দার, ইন্সপেক্টর, জীবনসাথী, নিষ্পত্তি, দাবিদার, মহৎ, শেষ খেলা, এই নিয়ে সংসার, ওরা তিনজন, ঘায়েল, কলিজার টুকরা, শক্তের ভক্ত এবং ভয়ঙ্কর সাতদিন।

তাঁর ছবির স্টাইল অবজারভ করলে যা বোঝা যায় তিনি কমার্শিয়াল ছবির বৈশিষ্ট্য রেখে ফুল প্যাকেজ ছবি বানাতেন। যে যে গুণগুলো থাকলে একটা উপভোগ্য কমার্শিয়াল ছবি বানানো যায় তিনি তাই করতেন। ধরা যাক ‘শেষ খেলা’ ছবির কথা। এ ছবির কালজয়ী গান ‘সুন্দর সন্ধ্যায় এ গান দিলাম উপহার’-এ সেই সময়ের ক্রেজ জুটি মান্না-চম্পার সাথে লিজেন্ড রাজিবকে দিয়েও লিপ করিয়েছেন। রাজিবের জন্য গানটি বাড়তি মাত্রা পেয়েছে। ছবির গল্পে ফ্যামিলি ড্রামার সাথে রোমান্টিকও ছিল। চম্পা ছিল ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র। নব্বই দশকে নায়ককেন্দ্রিক আধিপত্য দারুণভাবে ছিল সেই সময়ে চম্পাকে দিয়ে কেন্দ্রীয় চরিত্র করানো ঝুঁকির কাজ ছিল কিন্তু তিনি সফল ছিলেন।

‘মহৎ’ ছবিতে ত্রিভুজ প্রেমের গল্পে ওমর সানী, শাহনাজ, ইলিয়াস কাঞ্চনকে দিয়েও ‘প্রেম কখনো মধুর’ নামের কালজয়ী গানটি করেছেন। এ ছবিটিও গানে, অভিনয়ে, ড্রামায় জমজমাট ছিল।

স্টুডেন্ট পলিটিক্সের গল্পে ওমর সানীর অন্যতম সেরা ছবি ‘ঘায়েল’ ছিল বলাইয়ের পরিচালনায়। অ্যাকশন ছবিতেও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ‘সিকান্দার’ নায়ক ফারুকের প্রথমদিকের উল্লেখযোগ্য অ্যাকশন ছবি। শক্তের ভক্ত, ঘায়েল, ওরা তিনজন এগুলো জমজমাট অ্যাকশন ছবি।

থ্রিলারে ‘ভয়ঙ্কর সাতদিন’ খুবই উপভোগ্য ছবি ছিল। ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতির মতো তখনকার জনপ্রিয় জুটি থাকা সত্ত্বেও এ ছবিতে সোনিয়া ও সঞ্জয় খানকে পরিচালক বলাই ছবির প্রধান আকর্ষণ বানিয়েছেন।

অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে নূর হোসেন বলাই

তাঁর সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ছবি সম্ভবত ‘নিষ্পত্তি’। আহমেদ শরীফ ও রাজিব বাবা-ছেলের ভূমিকায় ছিলেন এবং দুজনই অঞ্জু ঘোষকে পছন্দ করে, অঞ্জু ভালোবাসে ইলিয়াস কাঞ্চনকে। উপভোগ্য ছিল হচ্ছে আহমেদ শরীফ ও রাজিবের অভিনয়, তাঁদের মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার দাঁড়িয়ে যায় এবং সেটি গল্পের প্রয়োজনে।

নূর হোসেন বলাই অল্প ছবি বানিয়েছেন কিন্তু নিজের স্বকীয়তা দেখিয়েছেন দারুণভাবে। কমার্শিয়াল ছবিকে উপভোগ্য করে তুলেছিলেন। তাঁর পছন্দের দুই নায়ক ছিল ইলিয়াস কাঞ্চন ও ওমর সানী। তাদের সাথে ছবি তুলনামূলক বেশি।

নূর হোসেন বলাইকে কতজন মনে রেখেছে বা রাখবে সেটা দর্শকের উপর নির্ভর করে। কিন্তু চলচ্চিত্র বিষয়ক আলোচনায় সস্তা লাইক/কমেন্ট জাতীয় লেখার বাইরেও যে অনেককে চেনার আছে, জানার আছে বলাই তাঁদেরই একজন। তাই জানুন, দেখুন, বুঝুন কারা আমাদের চলচ্চিত্রকে দাঁড় করাতে অবদান রেখেছেন। এ প্রজন্ম বলাইকে জানুক।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।

মন্তব্য করুন