Select Page

পরিচিত গল্পে অপরিচিত চরিত্র

পরিচিত গল্পে অপরিচিত চরিত্র

সিনেমাহল বন্ধ। কিন্তু নির্মাতা রায়হান রাফী গত বছরের মতো এ বছরও নির্মাণে ওয়েবের সিনেমা হলকে মাঠ বানিয়ে খেলা শুরু করে দিয়েছেন। চরকির ‘টান’ অবশ্যই হলের সিনেমার মতোই অনুভূতি দিয়েছে। শুধু চারটি গান বা দেশনন্দিত সিনেমাটোগ্রাফার শেখ রাজিবুল ইসলামের ক্যামেরাই না, ‘টান’ ভালো লাগবে শিল্পীদের অভিনয় আর রাফীর গল্পের কারণেও। তবে থেকে গেছে কিছু অতৃপ্তিও।

রাশেদ (সিয়াম) আর অবনী (বুবলি) দুজন দুজনকে ভিন্নভাবে ভালোবাসে। অবনী নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের স্কার্ফ মাথায় দিয়ে গলি দিয়ে হেঁটে চলা আর দশটা স্বাবলম্বী মেয়েদের একজন। আর রাশেদ বিপরীত মেরুর বখাটে, নেশাগ্রস্ত আর বিশৃঙ্খল এক যুবক যার জীবনের কোন দিশা নেই, দিনের কোন নিয়ম নেই।

প্রেম তাদের এক করেছে ঠিকই কিন্তু নেশা বারবার তাদের মাঝে দাঁড়ায় দেয়াল হয়ে। বোনের বাড়িতে থেকে একের পর এক বঞ্চনার শিকার হয় অবনী। আজকাল এই শহুরে টানাপোড়েনে কে আর কাকে বাড়তি খরচ হিসাবে সংসারে রাখে! অবনী বাধ্য হয় রাশেদের কাছে গিয়ে ওঠতে আর রাশেদ তাকে বিয়ে করে সহাবস্থানকে করে সমাজের চোখে সিদ্ধ।

আপাতদৃষ্টিতে মিলনের এই সম্পর্কের সামনে চলে আসে বাস্তবতা আর অচেনা এক পুরুষ! এমনই গল্পে ‘টান’ এগিয়েছে একটু একটু করে প্রায় দেড়শো মিনিট।

কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, বুবলি এই সময়ের অন্যতম সুদর্শনা, স্মার্ট ও পরিপাটি এক নায়িকা। তবে প্রশ্ন আছে বুবলির অভিনয় দক্ষতা আর বাণিজ্যিক সিনেমার বাইরে কাজের পারদর্শিতার ওপর। ‘টান’ দেখলে আমার মতো আপনিও মানতে বাধ্য হবেন, বুবলি অভিনয়টাও জানে। একেবারে সহজাত ঢাকার মেয়ে, পর্দানশীন এক স্বাবলম্বী নারী আর ছাড় না দেয়া এক প্রেমিকার চরিত্রে কী দারুণ অভিনয় করেছে সে। কৃতিত্ব দিতে হয় নির্মাতা রাফীকেও।

সিয়ামের সাথে রাফির এটি তৃতীয় কাজ। সিয়াম রাফির চোখের ভাষাও বোঝে। সেটি আরেকবার প্রমাণিত হলো। তবে ‘দহন’-এ প্রায় কাছাকাছি এমন একটি ক্যারেক্টার করায় দর্শকমনে ছাপ লেগে আছে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় অন্য কেউ অপশন হতে পারতো। তবে রাফী সাপোর্টিং রোলে সোহেল মন্ডল বা ফারজানা ছবির মত অভিনেতা অভিনেত্রীদের এনে যথেষ্ট পরিমার্জিত করেছেন। ভালো করেছে অল্প সময়ে নীলাঞ্জনা নীলাও।

গল্পে খুব একটা নাম্বার দিতে পারছি না। তবে সিদ্দিক আহমেদের সাথে যৌথভাবে লেখা স্ক্রিপ্টটা ভালোই ছিল। মাঝে একটু স্লো আর রিয়েল টাইম – ফ্ল্যাশব্যাক গল্পের স্টাইলটা সবসময় জমেনি। আবার ক্লাইম্যাক্স গল্পটাকে ঠিকঠাক জায়গায় এনে শেষ করেছে।

রাফী বরাবরই এই সম্পর্ক, রোমান্সের খুটিনাটি বিষয় আর ঘৃণাকে ভালোভাবে পর্দায় আনতে পারেন। সেই দৃষ্টিতে ‘টান’ ভালো ছিল। কাজে কিছুটা তাড়াহুড়ার ছাপ স্পষ্ট। ডাবিংটাও আলগা লেগেছে হাসপাতালের সিনগুলোতে।

জাহিদ নীরবের মিউজিক খুব যুতসই। সে র‌্যাপ, ক্লাসিক ও রাগের একটা বেশ ভালো মিক্স আপ করেছে স্ক্রিনের সাথে। আর রাজিবুলের ক্যামেরা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। অল্প জোনে ক্যামেরায় দারুণ কিছু ফ্রেম ছিল।

খুব চমক দেয়া গল্প না হলেও একেকজনের পারফরমেন্স আর গল্প বলার ধরনে সত্যিই ‘টান’ প্রশংসা করার মতো।


Leave a reply