Select Page

প্রতিযোগিতা না থাকায় স্টার সিনেপ্লেক্সের এতো প্রভাব

প্রতিযোগিতা না থাকায় স্টার সিনেপ্লেক্সের এতো প্রভাব

সত্যি কথা বলতে স্টার সিনেপ্লেক্সের মূল প্রফিট টার্গেট বাংলা চলচ্চিত্র না। যখন ২০০৪ সালে তারা বসুন্ধরা ব্রাঞ্চ প্রথম চালু করে, তখনো তাদের টার্গেট ছিল হলিউড, এখনো তাই আছে। তাদের টার্গেট অডিয়েন্স হলো উচ্চবিত্ত। তারা কখনোই মধ্যবিত্ত ফ্রেন্ডলি হওয়ার চেষ্টা করেনি। করোনার আগে মাঝেমধ্যে স্টুডেন্ট রিওয়ার্ড প্রোগ্রামে বোগো দিতো, এখন সেটাও দেয়না।

এরকম বিজনেস পলিসি কতটুকু দীর্ঘস্থায়ী, নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে সেটা নিয়ে সংশয় হতেই পারে। কারণ দক্ষিণ এশিয়াতে শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত টার্গেট করে ব্যবসা বেশিদিন করা যায় না। ব্যবসায় লাভ করতে হলে আপনার পরিধি বাড়াতেই হবে, সেজন্যে বড় জনগোষ্ঠী (মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত) ধরতেই হবে।

স্টার সিনেপ্লেক্স কিন্তু এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে। ২০ বছর হতে চললো তারা এই লাইনে টিকে আছে। শুরু করেছিল ‌‘স্পাইডারম্যান টু’ দিয়ে, বাংলা চলচ্চিত্রের ভরসায় শুরু করেনি এবং শুরু করার মতো পরিস্থিতিও ছিল না। কাটপিসের সবচেয়ে রমরমা সময় ছিল তখন। এখন তাদের ৭টি ব্রাঞ্চ, আরো ৩টি নির্মাণাধীন আছে।

আপনাদের একটু মনে করিয়ে দেই। ২০১৮ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ তাদের এই পথচলার প্রথম ১৪ বছরে, তাদের ব্রাঞ্চ ছিল কেবল একটা! মাত্র ১টা! বাকি ৬টি ব্রাঞ্চ বিগত ৬ বছরে চালু করেছে, সামনের ২ বছরের মধ্যে তাদের মোট ১০টি ব্রাঞ্চ হবে। করোনার প্রকোপে যেখানে সবাই সিনেমাহলের ব্যবসা গুটিয়েছে, সেখানে তারা আরো ব্রাঞ্চ বাড়িয়েছে। যাদের একসময় কোনো প্রযোজক গোনায় ধরতো না, এখন সেই স্টার সিনেপ্লেক্সের ৭টি ব্রাঞ্চ সিনেমা ব্যবসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থাটা এখন এমন, আপনি স্টার সিনেপ্লেক্সে শো পেলে মোটামুটি সেইফ জোনে আছেন, এখানে শো না পেলে আপনার সিনেমাহল থেকে তেমন ইনকামই হয় না।

এই যে এতো প্রভাব, এতো স্বেচ্ছাচারিতা, এর সবই সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র একটা কারণে। এই বাজারে স্টার সিনেপ্লেক্সের কোনো কম্পিটিটর নেই। পুরো ঢাকা শহরে স্টার সিনেপ্লেক্স বলতে গেলে একাই বিজনেস করে। তাদের ঢাকার বাইরের ব্রাঞ্চগুলো ওতো জনপ্রিয় না, ওগুলো বলতে গেলে লসে আছে। কিন্তু তাদের বসুন্ধরা, সীমান্ত, এসকেএস ও সনি প্রতিদিন যে পরিমাণ সেল দেয়, ঐ টাকা দিয়ে বাকি ৩ ব্রাঞ্চের লস খুব নিমিষেই কভার হয়ে যায়।

তাই এই বাজারে স্টার সিনেপ্লেক্স একা, তাই তারা উচ্চমূল্যের টিকেট বিক্রি করছে বছরের পর বছর। মনে করি, যদি ঢাকার মিরপুরে একটা যমুনা ব্লকবাস্টার থাকতো, আসাদগেটে যদি একটা লায়ন সিনেমাস থাকতো, শাহবাগে যদি একটা সিলভার স্ক্রিন থাকতো… তাহলে টিকেট প্রাইস এমনিই কমে যেতো, দর্শক বাকি হলগুলোতে ভাগ হয়ে যেতো।

আমি ঠিক এজন্যেই, হাজার খারাপ দিক থাকলেও আমি বলাকা-মধুমিতা-অভিসার-জোনাকী-রাজমনি-চিত্রামহলের মতো সিঙ্গেল স্ক্রিনে সিনেমা দেখতে চাই। নিম্নবিত্তের দর্শক ধরতে হলে আপনার অবশ্যই সিঙ্গেল স্ক্রিন লাগবে, এটা বিলুপ্ত করে সিনেমার বাজার বড় হবে না। আর সিনেমার বাজার বড় করতে হলে সপ্তাহে অন্তত দুইটা নতুন সিনেমা লাগবে, আর মাসে অন্তত একটা ভালো মেরিটের সিনেমা লাগবে।

যত দ্রুত বড় ইনভেস্টররা এই বাজারে ঢুকবে ততই মঙ্গল…


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

চলচ্চিত্র বিষয়ক ব্লগার ও ইউটিউবার

মন্তব্য করুন