বাংলাদেশি নায়িকাদের আন্তর্জাতিক দূত ববিতা
বাংলা চলচ্চিত্রে ষাটের দশকের শেষ দিকে আগমন ঘটে ফরিদা আক্তার পপি নামের এক রূপসী তরুণীর, যিনি পরবর্তীতে ‘ববিতা’ নামে বিশ্ব পরিচিতি পান।
তার মোহনীয় রূপ ও অভিনয় দক্ষতায় মুখরিত থাকত দেশের প্রতিটি সিনেমা হল, যা দেখে মনের তৃপ্তি ও ভালো লাগার এক আবেশ নিয়ে দর্শকেরা বাড়ি ফিরতেন, মনের মধ্যে লালন করতেন ভালোবাসার এক নাম। দর্শকদের ভালোবাসা আর নিজ প্রতিভার গুনে নিজের নামের পাশে পেয়েছিলেন ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্যালেন্ট ববিতা’র মতো খেতাব, যার স্নিগ্ধ হাসি সঙ্গে অপার সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছড়িয়ে ছিল দেশ ছেড়ে বিদেশেও, তিনি আমাদের চলচ্চিত্রের গর্ব ও সবার প্রিয় ববিতা ম্যাডাম!
১৯৫৫ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন এই প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী। পৈতৃক বাড়ি যশোরে হলেও বেড়ে ওঠা ঢাকার গেন্ডারিয়াতে। চলচ্চিত্রে আগমন মরহুম জহির রায়হান প্রযোজিত ও সিনে ওয়ার্কশপের ব্যানারে নির্মিত ‘সংসার’ (০৮/০৩/১৯৬৮) ছবির একটি কিশোরী চরিত্রের মধ্য দিয়ে, তার বয়স তখন ১৩ বছর। ছবিটির পরিচালক ছিলেন সিনে ওয়ার্কশপ গ্রুপের তিন সদস্য আমজাদ হোসেন, রহিম নেওয়াজ ও নূরুল হক বাচ্চু সাহেব। ববিতা এ ছবিতে রাজ্জাক ও বড় বোন সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে নুরুল হক বাচ্চুর ‘শেষ পর্যন্ত’ (০৮/০৮/১৯৬৯) ছবিতে প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন, এবং সে ছবিটি থেকেই তিনি ববিতা নামে রূপালি পর্দায় নাম লেখান। শুরু হয় ঢাকাই চলচ্চিত্রে এক নক্ষত্রের উত্থান।
ছবিটিতে ববিতার নায়ক চরিত্রে ছিলেন রাজ্জাক সাহেব। মজার ব্যাপার হলো প্রথম ছবিতে বাবার চরিত্রে অভিনয় করা রাজ্জাক এই ছবিতে তার নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরের বছর করেন এহতেশামের ‘পীচ ঢালা পথ’ (২৪/০৪/১৯৭০) ও বাবুল চৌধুরীর ‘টাকা আনা পাই’ (১৬/১০/১৯৭০), দুটি ছবিতেই তার নায়ক ছিলেন রাজ্জাক, পরের বছর করেন নজরুল ইসলামের ‘স্বরলিপি’ (০১/০১/১৯৭১), ছবিটিতেও নায়ক ছিলেন রাজ্জাক।
আকর্ষণীয় রূপ ও বৈচিত্র্যময় অভিনয়ের গুনে ববিতা ৭০ ও ৮০ দশকের নিজেকে অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। ৭০ দশকে মোট ৭৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, উল্লেখ্যযোগ্য হলো—এহতেশামের ‘পীচ ঢালা পথ’, নজরুল ইসলামের ‘স্বরলিপি’, সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ (আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত), আলমগীর কবিরের ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ইউসুফ জহিরের ‘ইয়ে করে বিয়ে’, মোহসিনের ‘রাতের পর দিন’ (ওয়াসিমের অভিষেক ছবি), বাদী থেকে বেগম’, কবীর আনোয়ারের ‘স্লোগান’, খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’, ‘লাঠিয়াল’, দিলীপ সোমের ‘আলো তুমি আলেয়া’, ইবনে মিজানের ‘এক মুঠো ভাত’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘নিশান’, মুশতাকের ‘বন্দিনী’, আমজাদ হোসেনের ‘নয়ন মনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, রাজ্জাকের ‘অনন্ত প্রেম’, জহিরুল হকের ‘দম মারো দম’, ‘ঘর জামাই’, সুভাষ দত্তের ‘বসুন্ধরা’, ‘ডুমুরের ফুল’, মাসুদ পারভেজের ‘গুনাহগার’, সাইফুল আজম কাশেমের ‘সোহাগ’, দিলীপ বিশ্বাসের ‘বন্ধু’, এ জে মিন্টুর ‘মিন্টু আমার নাম’, দেওয়ান নজরুলের ‘আসামী হাজির’, ‘বারুদ’, দারাশিকোর ‘ফকির মজনু শাহ’, আব্দুল লতিফ বাচ্চুর ‘সঙ্গিনী’, হাফিজ উদ্দিনের ‘ওয়াদা’, অশোক ঘোষের ‘নওজোয়ান’ ও আলমগীর কুমকুমের ‘রাজবন্দী’। ছবিগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়— ববিতা বৈচিত্র্যময় চরিত্রে পর্দায় হাজির হয়েছেন, কখনো গ্রামের একেবারে সাদামাটা চরিত্রে তো কখনো শহরের আধুনিকা মেয়ে, কখনো উচ্ছল প্রেমিকা, কখনো নাগিন বেশে আবার কখনো ফ্যাশন কন্যা রূপে, সব ধরনের চরিত্রেই নিজেকে উতরে নিয়েছেন তার অনবদ্য অভিনয়ের গুনে!
পরের দশকেও ববিতা ছিলেন উজ্জ্বল, নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়, করেছেন চমৎকার চমৎকার সব চলচ্চিত্রে অভিনয়। এ সময় ৮৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। আশির দশকের শুরুতেই আকবর কবির পিন্টুর পরিচালনায় উপহার দেন সুপারহিট ছবি ‘কথা দিলাম’, নায়ক ছিলেন ফারুক। পরবর্তীতে করেন ইবনে মিজানের ‘তাজ ও তলোয়ার’, ‘বাগদারের চোর’, মতিউর রহমানের ‘আপন ভাই’, শেখ নজরুল ইসলামের ‘এতিম’, আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘এখনই সময়’, আজমল হুদা মিঠুর ‘দোস্তী’, এ জে মিন্টুর ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘প্রতিহিংসা’, ‘চ্যালেঞ্জ’, দিলীপ বিশ্বাসের ‘আনার কলি’, আমজাদ হোসেনের ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘ভালো মানুষ’, ‘বেহুলা লখিন্দর’, ‘বিরহ ব্যথা’, ‘লেডি স্মাগলার’, ‘মিয়াভাই’, আলমগীর কুমকুমের ‘ঝুমকা’, অশোক ঘোষের ‘নবাবজাদী’, আজহারুল ইসলাম খানের ‘সুখে থাকো’, আওকাত হোসেনের ‘সাক্ষী’, আজিজুর রহমানের ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’, আবদুস সামাদ খোকনের ‘বড় বাড়ির মেয়ে’, বাবুলের ‘চাঁদ সুরুজ’, ছটকু আহমেদের ‘নাতবৌ’, রাজ্জাকের ‘বদনাম’, আবদুল লতিফ বাচ্চুর ‘নতুন বউ’, আকবর কবির পিন্টুর ‘কালো গোলাপ’, ইবনে মিজানের ‘লাইলী মজনু’, এহতেশামের ‘দূরদেশ’ (আন্তর্জাতিক), মাসুদ পারভেজের ‘শরীফ বদমাশ’, ‘হাইজ্যাক’, এস এম শফির ‘লাল মেম সাহেব’, রফিকুল বারী চৌধুরীর ‘পেনশন’, দিলীপ সোমের ‘সোনা বৌ’, মতিউর রহমান পানুর ‘সাথী’, মইনুল হোসেনের ‘প্রেমিক’, আজিজুর রহমান বুলির ‘নেপালী মেয়ে’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘চোর’, তমিজ উদ্দিন রিজভীর ‘জিদ্দি’, শিবলি সাদিকের ‘তিন কন্যা’, শহীদুল আমিনের ‘রামের সুমতি’, এম এ কাশেমের ‘সাধনা’, সুভাষ দত্তের ‘ফুলশয্যা’, ‘আগমন’, নূরুল হক পরিচালিত ‘আপোষ’, মহিউদ্দিন ফারুকের ‘বিরাজ বৌ’, মতিন রহমানের ‘বীরাঙ্গনা সখিনা’, এম এ মালেকের ‘লায়লা আমার লায়লা’, মোস্তফা আনোয়ারের ‘অবুঝ হৃদয়’, আজিমের ‘দেবর ভাবী’, মোহাম্মদ হান্নানের ‘মাইয়ার নাম ময়না’ ও মমতাজ আলীর ‘কারণ’!
নব্বই পরবর্তী এসে ববিতা নিজেকে আর নায়িকা রূপে আবদ্ধ রাখেননি, বরং বয়স অনুযায়ী চরিত্র অভিনয়কেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। শেষের দিকে করেছেন মা-ভাবির চরিত্রও, যদিও ৯০এর প্রথমদিকে কিছু ছবিতে নায়িকা রূপেই হাজির হয়েছিলেন। যেমন; নূর উদ্দিন জাহাঙ্গীরের ‘জীবন পরীক্ষা’, মুজিবর রহমানের ‘জবাব চাই’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘লেডি স্মাগলার’, ‘মিয়াভাই’ ও আজিজুর রহমানের ‘শ্বশুর বাড়ি’। ০২/০৮/১৯৯১-তে মুক্তি পাওয়া মাসুদ পারভেজের পরিচালনায় ‘ঘেরাও’ ছিল একক নায়িকা হিসেবে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র। তবে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০০০ সালের শেষ দিকে ‘আসিরন কেন ঢাকায়’ (২৯/০৯/২০০০) নামের একটি ছবি দিয়ে আবার একক নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছিলেন ববিতা, পরিচালক ছিলেন মোহাম্মদ আলী। এরপর আর তাকে একক নায়িকা রূপে কোন ছবিতে দেখা যায়নি। মাঝে নিজের প্রযোজিত ‘পোকা মাকড়ের ঘর বসতি’ (০১/১১/১৯৯৬)-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তবে ছবিটি ছিল বাণিজ্যিক ধারার বাইরে। মূলত ববিতা এই সময়টাতে মা-ভাবি বা স্বামীর আর্দশ স্ত্রীর চরিত্রেই বেশি অভিনয় করেছেন, যার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শাবানার মতো তারকা অভিনেত্রী। এ ধরনের চরিত্রে শাবানা যতটা সফল ছিলেন ববিতা তেমনটা ছিলেন না।
তবে নায়িকা হয়ে ববিতা ছিলেন সত্তর আশির দশকের এক সফল অভিনেত্রী। চরিত্র অভিনেত্রী হয়ে নব্বই দশক হতে পরবর্তী সময়ে উল্লেখযোগ্য হলো আব্দুল লতিফ বাচ্চুর ‘লটারী’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘বাসনা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘হাসন রাজা’, রাজ্জাকের ‘প্রফেসর’, শিবলী সাদিকের ‘দংশন’, ‘মায়ের অধিকার’, আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘বুকের ধন’, বাদল খন্দকারের ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, জাকির হোসেন রাজুর ‘জীবন সংসার’, আখতারুজ্জামানের ‘পোকা মাকড়ের ঘর বসতি’, মোরশেদুল ইসলামের ‘দীপু নাম্বার টু’, জিল্লুর রহমানের ‘টাইগার’, বুলবুল আহমেদের ‘কত যে আপন’, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর ‘জীবন মানেই যুদ্ধ’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, মোহাম্মদ হান্নানের ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, খান আতাউর রহমানের ‘এখনো অনেক রাত’, কাজী হায়াতের ‘ধর’, আরিফ মাহমুদের ‘খেয়া ঘাটের মাঝি’, শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘ম্যাডাম ফুলি’, নারগিস আক্তারের ‘চার সতীনের ঘর’ ও ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’!
ববিতা সেই ভাগ্যবান অভিনেত্রী যিনি বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হওয়ার সম্মান অর্জন করেছিলেন, এবং পরপর তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন— ‘বাদী থেকে বেগম’ (১৯৭৫), ‘নয়ন মনি’ (১৯৭৬) ও ‘বসুন্ধরা’ (১৯৭৭) যা একটি রেকর্ড হয়ে আছে। এ ছাড়া ‘রামের সুমতি’ (১৯৮৫) শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, ‘পোকা মাকড়ের ঘর বসতি’ (১৯৯৭) শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, ‘হাছন রাজা’ (২০০২) শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী ও ‘কে আপন কে পর’ (২০১১) শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী হয়ে মোট সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। ববিতা অভিনয়ের অবদান স্বরূপ ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পান আজীবন সম্মাননা, বেসরকারিভাবেও তিনি এই সম্মান লাভ করেছিলেন। এ ছাড়া বাচসাস, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে সম্মানিত হন।
তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি অভিনেত্রী যিনি অস্কার প্রাপ্ত বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ‘অশনি সংকেত’ দিয়ে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে বাংলাদেশি অভিনেত্রী হিসেবে অত্যন্ত প্রশংসিত হন এবং আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কারও অর্জন করেন। ছবিটির অনঙ্গ বউ চরিত্রে অভিনয়ের গুনে ববিতা বেঙ্গল ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান। ছবিটি ১৯৭৩ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বেয়ার পুরস্কার পেলে আন্তর্জাতিকভাবে ববিতাও খ্যাতিলাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই সঙ্গে অর্জন করেছেন নিজ নামের আগে ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্যালেন্ট’ এর মতো খেতাব।
ববিতা অভিনীত আন্তর্জাতিক উৎসবে স্থান পাওয়া চলচ্চিত্র হলো— ‘অরুণোদয় অগ্নিসাক্ষী’ (মস্কো ১৯৭৪), ‘আবার তোরা মানুষ হ’ (তাসখন্দ ১৯৭৪), ‘লাঠিয়াল’ (তাসখন্দ ১৯৭৬), ‘বসুন্ধরা’ (তাসখন্দ ১৯৭৮), ‘ডুমুরের ফুল’ (মস্কো ১৯৭৯), ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (মস্কো ১৯৭৯, পশ্চিম জার্মানী ১৯৮১, দিল্লি ১৯৯২), ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ (দিল্লি ১৯৮১), ‘কসাই’ (মস্কো ১৯৮১, পশ্চিম জার্মানি ১৯৮১), ‘পেনশন’(দিল্লি ১৯৮৫, কায়রো ১৯৮৫), ‘দহন’ (কার্লোভেরী ১৯৮৬) ও ‘বিরহ ব্যথা’ (পিংয়ং ইয়ং ও তেহরান ১৯৯০, মাদ্রাজ ১৯৯১)।
ববিতা অভিনয়ের পাশাপাশি করেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজনাও, যার মধ্যে ‘আগমন’, ‘চন্ডিদাস রজকিনী’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘পোকা মাকড়ের ঘর বসতি’, ‘লেডি স্মাগলার’ অন্যতম। ব্যক্তি জীবনে তিনি এক পুত্র সন্তানের জননী, এ ছাড়া গুনী অভিনেত্রী সুচন্দা তার বড় বোন ও চম্পা ছোট বোন।
ববিতা যেমন চলচ্চিত্রের রুপালী পর্দায় অভিনয়ের আলো ছড়িয়েছেন তেমনি তার অভিনীত বহু চলচ্চিত্রের গান দিয়েও দর্শকমহলে দোলা দিয়েছেন। যা এখনো মানুষের মনে গেঁথে আছে ভালো লাগা আর ভালোবাসার পরশ নিয়ে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই সুবল দাসের সুরে ‘স্বরলিপি’ ছবির সেই বিখ্যাত গান ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ দিয়ে সর্ব মহলে ভালোবাসার জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। তখনকার সময়ে হাতা কাটা ব্লাউজের সঙ্গে স্নিগ্ধ শান্ত মোহনীয় রূপে তরুণ মনে ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন ববিতা, হয়েছিলেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় তরুণীদের ফ্যাশন আইকনও।
ববিতা অভিনীত জনপ্রিয় কিছু গান: গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে (স্বরলিপি), এই পৃথিবীর পরে (আলোর মিছিল), গান নয় জীবন কাহিনি (বন্দিনী), আমি কোথায় থাকিরে (নয়ন মনি), ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই (অনন্ত প্রেম), চুপিচুপি বলো কেউ জেনে যাবে (নিশান), রংধনু ছড়িয়ে চেতনার আকাশে (বসুন্ধরা), এ আকাশকে সাক্ষী রেখে (সোহাগ), আজকে না হয় ভালোবাসো আর কোনদিন নয় (মিন্টু আমার নাম), হায়রে কপাল মন্দ (গোলাপী এখন ট্রেনে), প্রেমের আগুনে জ্বলে গেলাম সজনী গো (ফকির মজনু শাহ), যদি বউ সাজোগো আরও সুন্দর লাগবে গো (ওয়াদা), আমি আছি থাকবো (সুন্দরী), কেউ কোনদিন আমারে তো কথা দিলো না (সুন্দরী)।
গাঁয়ে এসে এক গাঁয়ের ছেলে প্রেমে পড়েছি (কথা দিলাম), একটা দোলনা যদি কাছে পেতাম (এখনই সময়), পারি না ভুলে যেতে (সাক্ষী), ভালোবাসা চাই আমার কাছে তাই (বড় বাড়ির মেয়ে), আমার সকল চাওয়া (বিরাজ বৌ), দুটি মন যখন কাছে এলো (সঙ্গিনী), আমার টাকা আছেরে ভাই পাবলিকের পকেটে (চোর), চিরদিন সাথী তোমাকেই চাই (কালো গোলাপ), আজ থেকে সারা জীবন তুমি যে আমার (প্রতিহিংসা), দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয় (জন্ম থেকে জ্বলছি), জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো (জন্ম থেকে জ্বলছি), জীবনটা জীবনে কখনো মিশে গেলে (শরীফ বদমাশ), চুরি করেছো আমার মনটা (মিস লংকা), আমাকে ডেকোনা এত ভালোবেসে (আপোষ), তুমি কী কহিলা গানে (প্রেমিক), দুশমনি করো না প্রিয়তম (দূরদেশ), আমি নেপালী মেয়ে ও বাবুজী (নেপালী মেয়ে), রূপ দেখিয়া পাগল হইলাম (লায়লা আমার লায়লা), দুশমন দুশমন মনটা আমার (কারণ), তুমি আমার জীবন (অবুঝ হৃদয়) ও আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য (সোনা বৌ)।