Select Page

বাংলা সিনেমার ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ সিনড্রোম

বাংলা সিনেমার ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ সিনড্রোম

বাংলা সিনেমার দুর্দশার কারণ উদঘাটনমূলক একটা আর্টিকেল লেখব বইলা ভাবতেছিলাম। বিস্তার ভাবনার পর মনে হইলো, একটা লেখায় পুরো বিষয়টা আনা যাইব না। সিরিজ আকারে লিখতে হইবো।

সত্যি বলতে বাংলা সিনেমার দুর্দশার জন্য যেমন একক কোনো ব্যক্তি দায়ী না, আবার অনেক সময়ে বেশ কিছু মানুষকে এককভাবে দায়ী মনে করা যায়, বা প্রমাণও করা যায়। সেসব নিয়া লিখলে ওইসব একক ব্যক্তির আশেকানদের প্রতিহিংসার শিকার হওয়া লাগতে পারে। ব্যক্তিজীবন ও প্রফেশনে ঝামেলায় পড়তে পারি। আবার লিখতে গেলে অনেকের নাম আসবে। তারাও ঝামেলা পাকাইতে পারে। আমি ঝামেলা এড়ায়া চলা মানুষ। ঝামেলা বাঁধার ভয়ে কত লেখাই যে ব্যাকস্পেসের মুখে ছুইড়া মারি, ইয়াত্তা নাই।

আজ বাংলা সিনেমার দুর্দশার কারণ নিয়া নতুন একটা ভাবনা মাথায় আইলো। তারপর মনে হইলো নতুনডা দিয়াই শুরু করি। তালি পাইলে আগামু। গালি পাইলে ডিলেট। সুতরাং আপনেরা আপনার স্বাধীন মতামত জানাইবেন। আমি নানা কারণে কমেন্টের রিপ্লাই দিতে না পারলেও সবার কমেন্ট আগ্রহ নিয়া পড়ি।

যা কইতেছিলাম- আজ হঠাৎ কইরা মনে হইলো বাংলা সিনেমার দুর্দশার পেছনে অন্যতম বড় কারণ অল্প কয়েকজন শিল্পী। যারা নতুন সিনেমা আইলেই সেইটারে সিনেমার কাণ্ডারি বইলা প্রচার শুরু করে। একটা বিষয় খেয়াল করবেন, বর্তমানে আমাদের শিল্পীরা ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ সিনড্রোমে ভুগতেছে। তারা একটা সিনেমা করলেই গলা বড় কইরা বলতে শুরু করে, এই সিনেমার হাত ধইরা বাংলা সিনেমা ‘ঘুরে দাঁড়াবে’। সিনেমা মুক্তি পায়। এসব বড় বড় কথা শুনে দুই চারজন হলে যায়। যায়া কী হয়? পুরাই হতাশ।

বাংলা সিনেমায় এখন দুইটা ধারায় আটকে গেছে। বাণিজ্য ধারা হলে সেটায় শিল্প থাকা যাইব না। স্বাধীন ধারা হইলে সেইটায় বাণিজ্য থাকা যাইব না। যেহেতু বাণিজ্য নাই সেহেতু সিনেমা প্রচারের জন্য বাজেটও নাই। ‘আয়নাবাজি’র মান ছিল, প্রচারের বাজেট ছিল। হিট করছে। ‘অজ্ঞাতনামা’র মান ছিল, প্রচারের বাজেট ছিল না। তিনদিন পর সিনেমা নামায়া ফেলতে হইছে।

তো যা বলতেছিলাম, প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী ও পরিচালকদের ‘নিজের সন্তান সবসময় সেরা’ এই নীতি থেইকা বাইর হয়া আসতে হইবো। না হলে একবার দর্শক হলে যায়া হতাশ হইলে সেই দর্শককে আপনে আরেকবার হলে ফেরাইতে পারবেন না। জানেন তো, এখন মানুষের ঘরে সিনেমা। আপনার সিনেমা দেখতে ঘর থেইকা বাইর হয়া যে হল পর্যন্ত যায়- নিতান্তই আপনারে, বাংলা সিনেমারে ভালোবাসে বইলাই যায়। একবার দুইবার ধোঁকা খাইলে সেই দর্শকরে সিজার কইরাও ঘর থেইকা বাইর করতে পারবেন না।

আপনে শিল্পী, আপনার মন বড় হইতে হইবো। শিল্পিত মনন থাকতে হইবো। সত্য কথা কওয়ার ক্ষমতা থাকতে হইবো। আপনি একটা সিনেমা শেষ কইরা কইতে পারেন না, ‘হাতে কাজ ছিল না বইলা এই সিনেমাটা করছি। গল্প, মেকিং আমার পছন্দ হয় নাই। দর্শক আপনার যদি ইচ্ছা হয় সিনেমা দেইখেন। জানেন তো, বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনেরা সিনেমা না দেখলে ভালো সিনেমা বানানো সম্ভব হইতেছে না।’

আপনেরে কেন কইতে হইবো, ‘আমি জীবনে খারাপ সিনেমায় কাজ করি নাই। আমার সিনেমা দেখলে জীবনে অখুশি হন নাই। এইবারও হইবেন না।’ আপনি কেমনে জানেন দর্শক কোন সিনেমায় খুশি হইবো আর কোন সিনেমায় অখুশি হইবো? এই কথা তো প্রভাষও বলতে পারে না। শাহরুখ খান যদি বলতে পারতো টানা ফ্লপ উপহার দিয়া খিঁচ খায়া থাকত না। আমির পারলে একের পর এক ডেট পিছায়া দিত না।

শিল্পী ও নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হইতে হইবো। আপনে একটা সিনেমা বানানির পরেই জানায়া দিবেন এক কোন শ্রেণির দর্শকের জন্য। তারপর তাগো কইবেন হলে আসেন। এইটা আপনাগো সিনেমা। সকল শ্রেণির দর্শকের জন্য সিনেমা বইলা কোনো শব্দ নাই। আপনে সকল শ্রেণির দর্শকের গার্লফ্রেন্ড না যে সবার টেস্ট জাইনা বইসা আছেন। চাপাবাজি থামান। দর্শকরে হতাশ কইরেন না। দর্শকরে একবার হতাশ করবেন, দর্শক আপনারে আজীবন হতাশ কইরা যাইবো। এর এই প্রতিশোধের ফল ভয়াবহ। বুজতেছেন, দর্শকের প্রতিশোধে ১৫০০ হয়া যায় ৬০।


লেখক সম্পর্কে বিস্তারিত

লেখক ও সাংবাদিক

মন্তব্য করুন